❖ ৫ রাজ্যই খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে : জরিপে ইঙ্গিত
❖ অরুণাচলে বিজেপি, সিকিমে এসকেএম
❖ পশ্চিমবঙ্গে জরিপে এগিয়ে বিজেপি; মমতা বললেন ভুয়া
❖ তিহাড়ে জেলে ফিরলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সর্বশেষ সপ্তম দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এই ভোটগ্রহণ শেষ হয়। আগামীকাল ফলাফল ঘোষণা করবে ভারতের নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদির গেরুয়া শিবির কি তৃতীয় মেয়াদে দিল্লির মসনদে বসবে নাকি কংগ্রেসের শুকনো ঘাটে জলের দেখা মিলবে- তা নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে। এবারের নির্বাচন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির শীর্ষ নেতা নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, যা স্বাধীন ভারতের গত ৭৭ বছরের ইতিহাসে বিরল। মোদি নিজেও এ ব্যাপারে বেশ ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল। গত প্রায় দেড় মাসে ভারতজুড়ে যত প্রচার-প্রচারণা করেছেন মোদি, প্রায় প্রত্যেকটিতেই জনগণকে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তবে ভারতের অনেক রাজনীতি বিশ্লেষকের মতে, এবারের নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়ানোর বেশ ভালো সম্ভাবনা রয়েছে কংগ্রেসের; আর এই সম্ভাবনার মূলে রয়েছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ বা ইন্ডিয়া জোট। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে গঠিত এই জোটে রয়েছে বিজেপিবিরোধী ২৬টি রাজনৈতিক দল। এসব দলের মধ্যে কয়েকটি দল বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষমতায়ও রয়েছে।
ভারতের লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর যেসব বুথফেরত জরিপ সামনে এসেছে, তার বেশিরভাগই বলছে, বিরোধী ইন্ডিয়া জোট ১৪৩টি আসন পাবে। তবে জোটের প্রধান দল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলছেন, ইন্ডিয়া জোট ২৯৫টি আসন পেতে যাচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের আসন ২৩৫টির বেশি হবে না। বিজেপির বয়ানে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়। ইন্ডিয়া জোট অন্তত ২৯৫টি আসন জিতবে। এটা আমাদের মূল্যায়ন।
গত শনিবার লোকসভা নির্বাচনের সর্বশেষ ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরে ওই ভিডিও বার্তায় বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেন, যারা তোষামোদি ও পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি করে, দুর্নীতি করে, ভোটারেরা নির্বাচনে তাদের উপেক্ষা করেছে। বিজেপি ৩৭০টির বেশি আসন পাবে। আর বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ পাবে ৪০০-এর বেশি আসন।
৫ রাজ্যই খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে :
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের আগে পরিচালিত এক্সিট পোল অনুমান অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই রাজ্যগুলোতে আঞ্চলিক দলগুলোর আধিপত্য দেখা গেছে। এই অনুমান সঠিক প্রমাণিত হলে ইন্ডিয়া ব্লকের আশা ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে এবং বড় পরাজয়ের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ইন্ডিয়া টুডে এবং অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার এক্সিট পোল অনুসারে, এই পাঁচটি রাজ্যে এখন পর্যন্ত আঞ্চলিক দলগুলোর আধিপত্য দেখা গেলেও এবার চমক দেখাতে পারে বিজেপি। দেশে ৫৪৩টি লোকসভা আসন রয়েছে। জরিপ বলেছে, এবার এনডিএ ৩৬১ থেকে ৪০১টি আসন পেতে পারে। যেখানে ইন্ডিয়া ব্লক ১৩১ থেকে ১৬৬ আসন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যরা ৮ থেকে ২০ আসন পেতে পারে। এদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশে মোট ২৫টি আসন রয়েছে। এক্সিট পোলের ফলাফল অনুসারে, চন্দ্রবাবু নাইডুর দল টিডিপি, বিজেপি এবং জনসেনা পার্টি জোট এখানে জনপ্রিয়তা পেতে চলেছে। এতে বিজেপির বিপুল ভোট বাড়তে পারে এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ওয়াইএসআরসিপি বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এনডিএ অন্ধ্রপ্রদেশে ২১ থেকে ২৩টি আসন পেতে পারে এবং ওয়াইএসআরসিপি পেতে পারে ২ থেকে ৪ আসন। ইন্ডিয়া এখনও কোনো সম্ভাবনা তৈরি করতে পারেনি।
তিহাড়ে জেলে ফিরলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল :
রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থল, কনট প্লেসের হনুমন্দির পুজো দিয়ে তিহাড় জেলের দুই নম্বর সেলে ফিরলেন আম আদমি পার্টির প্রধান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ভোটের মাঝে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অন্তর্বর্তী জামিন পান তিনি। জেলমুক্ত হয়ে দলের হয়ে ভোটের প্রচার চালান তিনি। অসুস্থতার কথা জানিয়ে অতিরিক্ত সাত দিন জামিনের আবেদন করেন। যদিও তা গ্রাহ্য হয়নি শীর্ষ আদালত এবং নিম্ন আদালতেও। এর ফলেই ২ জুন আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলেন তিনি। জেলমুখো হওয়ার আগে আপ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে চোখে জল আনা বার্তা দেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। জেল থেকেই দল চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, আপনারা ভালো থাকলে আপনার কেজরিওয়ালও জেলে ভালো থাকতে পারবে। ৪ জুন ক্ষমতায় ফিরবে না বিজেপি।
এর আগে, সোশাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, আমি সুপ্রিম কোর্টের কাছে কৃতজ্ঞ। আজ তিহাড়ে গিয়ে আত্মসমর্পণ করব। বিকাল তিনটে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরব। প্রথমে রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাব। সেখান থেকে আমি হনুমানজির আশীর্বাদ নিতে কনট প্লেসের হনুমান মন্দিরে যাব। সেখান থেকে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে সব কর্মী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করব। এর পর আমি তিহাড়ের উদ্দেশে রওনা হব।
অরুণাচলে বিজেপি, সিকিমে এসকেএম :
উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য অরুণাচল প্রদেশে বিধানসভার নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি। অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের আরেক রাজ্য সিকিমে সরকার গড়তে চলেছে সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চা (এসকেএম)। গত ১৯ এপ্রিল ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটের দিনই অরুণাচল প্রদেশের ৬০ আসনে এবং সিকিমের ৩২ আসনে বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অরুণাচল প্রদেশে ভোট পড়ে ৮২.৯৫ শতাংশ, সিকিমে ভোট পড়ে ৭৯.৮৮ শতাংশ। গতকাল ছিল তার ভোট গণনা। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে সকাল ৬টা থেকে এই দুই রাজ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। অরুণাচল প্রদেশে (৬০) সরকার গড়তে গেলে প্রয়োজন ৩১ আসন। সেখানে বিজেপি জয় পেয়েছে ৪৬ আসনে। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই ১০ আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। প্রধান প্রতিপক্ষ ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) পেয়েছে ৫টি আসন, ১টি আসনে জয় পেয়েছে শতাব্দীর প্রাচীন দল কংগ্রেস এবং অন্যরা ৮টি আসনে জয়ী হয়েছে। অন্যদিকে, সিকিমে (৩২) সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৭ আসন। সেখানে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল এসকেএম ৩১ আসনে জয়ী হয়েছে। প্রধান প্রতিপক্ষ সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (এসডিএফ) ঝুলিতে গেছে মাত্র ১টিই আসন। জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম এসকেএম প্রধান ও মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং। যদিও রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং এসডিএফ প্রধান পবন চামলিং পরাজিত হয়েছেন। এই নিয়ে অরুণাচল প্রদেশে পরপর তিনবার ক্ষমতায় আসলো রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা প্রেমা খান্ডুর নেতৃত্বাধীন বিজেপি। অন্যদিকে, সিকিমে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসলো মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাংয়ের নেতৃত্বাধীন এসকেএম।
পশ্চিমবঙ্গে বুথফেরত জরিপে এগিয়ে বিজেপি :
পশ্চিমবঙ্গে বুথফেরত জরিপে তৃণমূলের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। অধিকাংশ সমীক্ষাতেই দেখা যাচ্ছে, সদ্য শেষ হওয়া সাত দফার লোকসভা ভোটে বাংলার ৪২টি আসনের লড়াইয়ে তৃণমূলকে ছাপিয়ে যেতে চলেছে বিজেপি। গত শনিবার সপ্তম দফার ভোট শেষ হতেই বিভিন্ন সংস্থা সমীক্ষা প্রকাশ করছে। তিনটি সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গেছে, আসনের বিচারে এবার সবার ওপরে রয়েছে বিজেপি, এরপরেই রয়েছে তৃণমূল। আসনসংখ্যা থেকে ভোট শতাংশ- দুটি ক্ষেত্রেই রাজ্যের শাসক দলকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে কেন্দ্রের শাসক দল। বুথফেরত সমীক্ষার জরিপ যে সব সময় সঠিক হয়, বিষয়টি তেমন নয়।
তবে টিভি নাইন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বুথফেরত এ সমীক্ষাকে একেবারেই গুরুত্ব দেননি পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সমীক্ষাকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ভাঁওতা এবং বিরোধীদের মনোবল ভাঙতে বিজেপির চিত্রনাট্য বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, আমাদের রাজ্য নিয়ে যেটা দেখাচ্ছে, তাকে আমি বিশ্বাস করি না, বিশ্বাস করি না, বিশ্বাস করি না। এটা একেবারে ভেগ, একেবারে ফেক। সংবাদমাধ্যম কী করে বলে দিচ্ছে, ওই আসনে ও জিতবে, অমুক আসনে কে জিতবে… কত টাকার বিনিময়ে? আমি এই সংবাদমাধ্যমের হিসাব মানি না। কর্মীদের বলব শক্ত থাকতে। গণনা ভালো করে করতে। যা দেখিয়েছে সংবাদমাধ্যম, তার দ্বিগুণ পাব।


























