০৯:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কর্মী পাঠাতে ব্যর্থতার দায় নিচ্ছে না কেউ

➢মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়া সরকারকে দুষছে বায়রা, টাকা ফেরতের ঘোষণা
➢কর্মী পাঠাতে ব্যর্থ এজেন্সি চিহ্নিত করবে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি
➢বাংলাদেশের সময় বাড়ানোর আবেদন প্রত্যাখ্যান মালয়েশিয়ার

৩১ মে’র পরে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নেওয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালয়েশিয়া। তবে নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যেও দেশটির ভিসা ও এ দেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পেয়েও মালয়েশিয়া যেতে পারেননি প্রায় ১৭ হাজার কর্মী। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তসহ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ব্যাপক সংখ্যক কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে ব্যর্থতার জন্য কেউ দায় নিচ্ছে না। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যর্থতার কারণ ও জড়িত বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি খুঁজতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে ওই কমিটি। তবে নিজেদের দায় এড়িয়ে এ ব্যর্থতার জন্য মালয়েশিয়া সরকার এবং দেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে দুষছে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন-বায়রা।

এদিকে ভিসা ও ছাড়পত্র পাওয়া কর্মীদের পাঠাতে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করলেও মালয়েশিয়া সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। এতে আগ্রহী কর্মীদের মালয়েশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন আপাতত বাস্তবে রূপ নেওয়া অনিশ্চিতই থাকছে।

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)। তারা আরও দাবি করেন যে, মালয়েশিয়ায় পাঠানো শ্রমিকদের সংকটের জন্য সে দেশের সরকার এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দায়ী।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, ৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম হয়নি। বায়রার সেক্রেটারি জেনারেল আলী হায়দার চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মালয়েশিয়া সরকার নির্ধারিত সময়ের পরও ভিসা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে এবং শেষ মুহূর্তে শ্রমিক পাঠানো যাবে না জেনেও আমাদের মন্ত্রণালয় ছাড়পত্র দিয়েছে। তবে মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের টাকা এজেন্সির মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হবে বলে জানান বায়রা নেতারা।

এক প্রশ্নের জবাবে বায়রা সেক্রেটারি আরও বলেন, মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের জন্য ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি, কারণ ৩১ মে’র সময়সীমার পরও ই-ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ৩১ মে সময়সীমা শেষ হয়েছে, তারপরও ২ জুন ই-ভিসা দেওয়া হয়েছে, যা একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি। তার মতে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে দুর্নীতির জন্য মালয়েশিয়া সরকার ও বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় দায়ী।

ব্রিফিংয়ে বায়রার সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্বপন বলেন, বিএমইটি সনদধারী ২-৩ শতাংশ শ্রমিক তাদের গন্তব্য দেশে যেতে না পারা সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, অসদাচরণের জন্য কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করা বা টিকিটের অভাবে এমনটা হতে পারে। মালয়েশিয়ায় যেতে পারছেন না এমন ১৬ হাজার ৯৭০ জন শ্রমিকের প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাবের বিষয়ে তিনি বলেন, এই সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় হাজারের বেশি নয়।

তিনি আরও বলেন, তাদের মালয়েশিয়ায় পাঠাতে বা তাদের অর্থ ফেরত দিতে তারা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ২০২২ সালে সিন্ডিকেটে যোগ দেওয়ার আগে ৩০০ জনেরও বেশি লোকের তুলনায় এবার ৮ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি লোক পাঠানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মধ্যে কোনও সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, আমি কাউকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো বা ভিসা প্রসেসের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমি শুধু পুরো প্রক্রিয়াটি সহজতর করেছি। তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়া সরকার কাকতালীয়ভাবে সে দেশে কর্মী পাঠানোর জন্য পুনরায় এজেন্সিগুলোকে নিয়োগ দিয়েছে। কোনও ক্ষতিগ্রস্তকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব না হলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

তিনি দাবি করেন, একটি বিশেষ গোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের (রিক্রুটিং এজেন্সির) বদনাম করার চেষ্টা করছে। কয়েকটি গণমাধ্যমে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ বলেন, এ ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখার কোনও সুযোগ নেই। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া ছিল এবং ১০১টি এজেন্সি এই সিস্টেমের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার উপস্থিত ছিলেন। এদিকে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে কর্মী গ্রহণের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছিল বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তবে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল বলেছেন, সময় বাড়ানোর আর সুযোগ নেই। গতকাল পেনাংয়ে এক সরকারি সফরকালে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা বিদেশি কর্মীদের ৩১ মে’র পর আর সময় বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই। এমনকি বাংলাদেশ থেকে যে ১৭ হাজার কর্মীর ভিসা অনুমোদিত হয়েছিল, তাদেরকেও গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এই ১৭ হাজার কর্মীকে প্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য আবেদন করা হলেও, সেটি রাখা যাচ্ছে না।

মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের তথ্য চায় মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি : প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগের অনুমতিপত্র ও বিএমইটি স্মার্ট কার্ড পেয়েও গত ৩১ মে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি তাদের তথ্য চেয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। গতকাল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মালয়েশিয়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মী পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ চিহ্নিত করতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুক যারা দেশটিতে যেতে পারেননি, তারা আগামী ৮ জুনের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ (নাম, পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, রিক্রুটিং এজেন্সির নাম, পাসপোর্ট নম্বর, বিএমইটি’র স্মার্ট কার্ডের কপি এবং অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণসহ) [email protected] ই-মেইলে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। ই-মেইলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযোগ দাখিলের জন্য অনুরোধও জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।

 

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূর মো. মাহবুবুল হককে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। প্রতিবেদনের সুপরিশের আলোকে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।

জনপ্রিয় সংবাদ

গুলশান ও নয়াপল্টনে কালো পতাকা, দলীয় পতাকা অর্ধনমিত

কর্মী পাঠাতে ব্যর্থতার দায় নিচ্ছে না কেউ

আপডেট সময় : ০৭:৪৫:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪

➢মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়া সরকারকে দুষছে বায়রা, টাকা ফেরতের ঘোষণা
➢কর্মী পাঠাতে ব্যর্থ এজেন্সি চিহ্নিত করবে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি
➢বাংলাদেশের সময় বাড়ানোর আবেদন প্রত্যাখ্যান মালয়েশিয়ার

৩১ মে’র পরে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নেওয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালয়েশিয়া। তবে নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যেও দেশটির ভিসা ও এ দেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পেয়েও মালয়েশিয়া যেতে পারেননি প্রায় ১৭ হাজার কর্মী। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তসহ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ব্যাপক সংখ্যক কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে ব্যর্থতার জন্য কেউ দায় নিচ্ছে না। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যর্থতার কারণ ও জড়িত বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি খুঁজতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে ওই কমিটি। তবে নিজেদের দায় এড়িয়ে এ ব্যর্থতার জন্য মালয়েশিয়া সরকার এবং দেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে দুষছে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন-বায়রা।

এদিকে ভিসা ও ছাড়পত্র পাওয়া কর্মীদের পাঠাতে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করলেও মালয়েশিয়া সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। এতে আগ্রহী কর্মীদের মালয়েশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন আপাতত বাস্তবে রূপ নেওয়া অনিশ্চিতই থাকছে।

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)। তারা আরও দাবি করেন যে, মালয়েশিয়ায় পাঠানো শ্রমিকদের সংকটের জন্য সে দেশের সরকার এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দায়ী।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, ৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম হয়নি। বায়রার সেক্রেটারি জেনারেল আলী হায়দার চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মালয়েশিয়া সরকার নির্ধারিত সময়ের পরও ভিসা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে এবং শেষ মুহূর্তে শ্রমিক পাঠানো যাবে না জেনেও আমাদের মন্ত্রণালয় ছাড়পত্র দিয়েছে। তবে মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের টাকা এজেন্সির মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হবে বলে জানান বায়রা নেতারা।

এক প্রশ্নের জবাবে বায়রা সেক্রেটারি আরও বলেন, মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের জন্য ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি, কারণ ৩১ মে’র সময়সীমার পরও ই-ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ৩১ মে সময়সীমা শেষ হয়েছে, তারপরও ২ জুন ই-ভিসা দেওয়া হয়েছে, যা একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি। তার মতে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে দুর্নীতির জন্য মালয়েশিয়া সরকার ও বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় দায়ী।

ব্রিফিংয়ে বায়রার সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্বপন বলেন, বিএমইটি সনদধারী ২-৩ শতাংশ শ্রমিক তাদের গন্তব্য দেশে যেতে না পারা সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, অসদাচরণের জন্য কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করা বা টিকিটের অভাবে এমনটা হতে পারে। মালয়েশিয়ায় যেতে পারছেন না এমন ১৬ হাজার ৯৭০ জন শ্রমিকের প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাবের বিষয়ে তিনি বলেন, এই সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় হাজারের বেশি নয়।

তিনি আরও বলেন, তাদের মালয়েশিয়ায় পাঠাতে বা তাদের অর্থ ফেরত দিতে তারা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ২০২২ সালে সিন্ডিকেটে যোগ দেওয়ার আগে ৩০০ জনেরও বেশি লোকের তুলনায় এবার ৮ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি লোক পাঠানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মধ্যে কোনও সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, আমি কাউকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো বা ভিসা প্রসেসের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমি শুধু পুরো প্রক্রিয়াটি সহজতর করেছি। তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়া সরকার কাকতালীয়ভাবে সে দেশে কর্মী পাঠানোর জন্য পুনরায় এজেন্সিগুলোকে নিয়োগ দিয়েছে। কোনও ক্ষতিগ্রস্তকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব না হলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

তিনি দাবি করেন, একটি বিশেষ গোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের (রিক্রুটিং এজেন্সির) বদনাম করার চেষ্টা করছে। কয়েকটি গণমাধ্যমে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ বলেন, এ ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখার কোনও সুযোগ নেই। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া ছিল এবং ১০১টি এজেন্সি এই সিস্টেমের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার উপস্থিত ছিলেন। এদিকে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে কর্মী গ্রহণের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছিল বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তবে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল বলেছেন, সময় বাড়ানোর আর সুযোগ নেই। গতকাল পেনাংয়ে এক সরকারি সফরকালে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা বিদেশি কর্মীদের ৩১ মে’র পর আর সময় বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই। এমনকি বাংলাদেশ থেকে যে ১৭ হাজার কর্মীর ভিসা অনুমোদিত হয়েছিল, তাদেরকেও গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এই ১৭ হাজার কর্মীকে প্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য আবেদন করা হলেও, সেটি রাখা যাচ্ছে না।

মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের তথ্য চায় মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি : প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগের অনুমতিপত্র ও বিএমইটি স্মার্ট কার্ড পেয়েও গত ৩১ মে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি তাদের তথ্য চেয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। গতকাল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মালয়েশিয়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মী পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ চিহ্নিত করতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুক যারা দেশটিতে যেতে পারেননি, তারা আগামী ৮ জুনের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ (নাম, পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, রিক্রুটিং এজেন্সির নাম, পাসপোর্ট নম্বর, বিএমইটি’র স্মার্ট কার্ডের কপি এবং অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণসহ) [email protected] ই-মেইলে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। ই-মেইলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযোগ দাখিলের জন্য অনুরোধও জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।

 

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূর মো. মাহবুবুল হককে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। প্রতিবেদনের সুপরিশের আলোকে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।