রাবি প্রতিনিধি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) করোনায় ক্ষুদ্র কৃষিজীবিদের ওপর প্রভাব ও তার ফলাফল প্রচার নিয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্সে এ সেমিনারের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ। এতে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করে ‘অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ’ নামক বিদেশি সংস্থা।
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল ওয়াদুদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক ইলিয়াস হোসাইন। এতে পেপার প্রেজেন্টর হিসেবে উপস্থাপনা করেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান।
অধ্যাপক ফরিদ তার উপস্থাপনায় বলেন, রাজশাহী এবং রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের ওপর ঐ সময়ে সমীক্ষা চালানো হয়। এতে এই অঞ্চলের অল্প জমিতে ফসল ফলানো কৃষকরা কি কি বিষয়ে সমস্যা মোকাবিলা করেছে তা উঠে এসেছে। করোনাকালীন সময়ে যাতায়াত সমস্যা, বিভিন্ন জায়গায় প্রাদুর্ভাব কমাতে কারফিউ, অসুস্থ ব্যক্তিদের ও তাদের পরিবার জনসম্মুখে বের হতে না পারাসহ বেশকিছু কারণে কৃষকরা ফসল উতপাদন করতে পারেনি। এতে ফসল উতপাদনে ভাটা পরেছে বলে মনে করেছেন দেশের ২৭ % কৃষক। বাকিরা বলেছেন উতপাদন হয়েছে তবে তা সন্তোষজনক না। এছাড়া ফসলে ভালো দাম না থাকা , কিটনাশক, সার আমদানিতে বেশ সমস্যায় পরেছিলেন কৃষকরা। গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা। এতে ব্যয় বাড়লেও আয় কমেছে বলে ধারণা পোষণ করেছেন ৭৩% কৃষিজীবি মানুষ। এমনকি কোভিডকালীন সময়ে ব্যয় কমাতে ১৩% কৃষক খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে মিল স্কিপ করেছেন। এসময় সরকার থেকে কৃষকদের সহযোগিতা করলেও তা যথেষ্ঠ নয় বলে মনে করেন ৯৩% ক্ষুদ্র কৃষিজীবিরা। এছাড়াও তিনি তার গবেষণা বিশ্লেষণে বলেন, ওই সময় যারা সৌর সেচ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল তারা প্রচলিত চাষ পদ্ধতি ব্যবহারকারীদের থেকে ভালো ছিল। তাই এই উন্নত পদ্ধতির ব্যবহার ক্রান্তিকালীন সময়ে কৃষকদের সহায়তা করার জন্য উন্নত সরকারী নীতির নিশ্চয়তা হতে পারে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, কৃষি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাণ। এটা আমাদের অর্থনীতির লাইফ লাইন। উন্নয়ন বলতে আমরা একটা ন্যাচারাল প্রগ্রেশনের কথা বলি। কৃষিভিত্তিক একটা সমাজ ট্রান্সফরমেশন হয়ে শিল্প সমাজের দিকে যায়। সেখান থেকে সার্ভিস বেজড অর্থনীতির দিকে যায়। কিন্তু কৃষির গুরুত্ব কখনো কমে না। কৃষিকে বার বার উপেক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু কৃষি নিজেই বার বার প্রমান করেছে যে, তাকে যতই উপেক্ষা করা হোক না কেনো কৃষিই এ দেশের মানুষের আশ্রয়স্থল। কোভিডের সময়ও তা প্রমান হয়েছে। ওই সময় যারা ঢাকায় বসবাস করেছিল, যাদের চাকরি নাই, ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ, কোম্পানি বন্ধ তারা তাদের বাচ্চার স্কুল থেকে ভর্তি বাতিল করে গ্রামে চলে গেছে। কোভিডের আমলে বাংলাদেশের মানুষের জীবনের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু কৃষিই তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে। গ্রামীন অর্থনীতি তাদের আশ্রয় দিয়েছে। কৃষি নিয়েই এই প্রকল্পটি। আমরা সব সময় এটাকে সাধুবাদ জানায় ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম বলেন, কোভিড যতদিন ছিল আমরা নিরাশ ছিলাম । আমরা শেষ পর্যন্ত বেচে থাকবো কি না। আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো কিনা। সেসময় প্রধানমন্ত্রী অমাদের মাঝে আশা জাগিয়ে রেখেছিলেন। শুধু এশিয়া না পুরো বিশ্বের মাঝে আমরা সেসময়ে মাথা উচু করে রেখেছিলাম। আমাদের যা কিছু প্রয়োজন, তা আমাদের জন্য সহজলভ্য করে দিয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তবে আমরা এমন এক জাতি। কোন কিছুই মনে রাখি না। সুফল কুফল ২ টাই ভুলে যাই।
এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। এতে মেন্টর হিসেবে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার অধ্যাপক ড. কে এম লরা লুডজেন সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া রাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুরশিদা ফেরদৌসি হাবিব, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রশিদ সরকার, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজি নেওয়াজ মোস্তফা এবং অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অরুপ ব্যানার্জী এ গবেষণাতে সহযোগিতা করেন।
এ সেমিনারে সঞ্চালনা করেন অরুপ ব্যানার্জি। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এর রাজশাহী জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার উম্মে সালমা
বিএমডিএ’র সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. শরিফুল হক, ড. মুরশিদা ফেরদৌাস হাবিব, অধ্যাপক কাজী নেওয়াজ শরীফ। এসময় বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।


























