০৬:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঋণনির্ভর বাজেট মূদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিবে

❖করারোপ বৃদ্ধিতে বাড়বে জনগণের নাভিঃশ্বাস
❖জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে মূল্যস্ফীতিতে

প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও উল্টো উসকে দিবে মূল্যস্ফীতিকে। নতুন করে বেশকিছু খাতে আরো ভ্যাট আরোপ এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বাড়বে মূল্যস্ফীতি। সংকটের সময়ে একটি সাধারণ বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। দুই বছর ধরে নিত্যপণ্যের চড়া দামের চাপে থাকা মধ্যবিত্তের জীবন আরও কঠিন হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, বিভিন্নভাবে মধ্যবিত্তের খরচ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার তাদের আয় বাড়ার আশাও কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার আকার এবার খুব একটা বাড়ায়নি। বিনিয়োগ ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও আশা করার মতো খবর নেই। ফলে খুব বেশি নতুন কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হবে, অনেক কর্মসংস্থান হবে, বাড়তি সংখ্যক বেকার চাকরি পাবেন, চাকরির বাজারে চাহিদার কারণে পুরোনোদের বেতন বেশি হারে বাড়বে- এসব আশা করা যাচ্ছে না। মধ্যবিত্ত পরিবারে যে তরুণ বেকার, তার জন্য সুখবর নেই।

বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণদের নিয়ে করা একটি জরিপে জানিয়েছে, দেশের ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ পেশাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। ভোজ্যতেল, চিনি, জ্বালানি তেল ইত্যাদি পণ্যের শুল্ককর কমানোর কোনো ঘোষণা নেই বাজেটে। আলু, পেঁয়াজ, ডিম, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, মাছ ইত্যাদির চড়া দাম কীভাবে কমবে, সে কথাও বাজেটে নেই। নিত্যপণ্যে খরচ বাড়ল : বাজেটে বিভিন্ন নিত্যপণ্য সরবরাহে উৎসে আয়কর কমানো হয়েছে। ২ শতাংশ থেকে করা হয়েছে ১ শতাংশ। এতে খরচ কমতে পারে ১০০ টাকায় এক টাকা। সুফলটি মূলত পাবেন আমদানিকারকেরা। ওদিকে আমদানি পর্যায়ে মার্কিন ডলারের দাম ১১৩ টাকা ধরে শুল্কায়ন শুরু হয়েছে। এতে নিত্যপণ্যসহ সব পণ্য থেকে বাড়তি কর পাওয়া শুরু করেছে সরকার। আগামী মাসে ডলারের দাম আরও বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ১১৭ টাকার বেশি।

বাজেটে শুল্ক কমানোর তালিকায় রয়েছে উল্লেখযোগ্য গুঁড়া দুধ। এর দাম কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু ভোজ্যতেল, চিনি, জ্বালানি তেল ইত্যাদি পণ্যের শুল্ককর কমানোর কোনো ঘোষণা নেই বাজেটে। আলু, পেঁয়াজ, ডিম, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, মাছ ইত্যাদির চড়া দাম কীভাবে কমবে, সে কথাও বাজেটে নেই। গতকাল শুক্রবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলামও স্পষ্ট করে কিছু বললেন না। এদিকে বাজেটে আগেই ঢাকা ওয়াসা পানির দাম ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে, যা বাজেট কার্যকরের দিন ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হবে। বিদ্যুতের দাম আগামী তিন বছর সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে সরকার, যা কার্যত বৃদ্ধি।

বিশ্বব্যাংকের মতে, বর্তমান অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৬ ভাগ। সংকোচনমূলক বাজেটের সদিচ্ছা থাকলে ২০২৫ অর্থবছরের জন্য শতকরা পৌনে ৭ ভাগ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্থমন্ত্রী গ্রহণ করতেন না। বড়জোর ৪-৫ ভাগে সীমিত থাকতেন। এ নিয়ে জনতার মধ্যে হইচই শুরু হতো না, যতটা হইচই হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ে।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) হিসাবে, প্রতি মাসে কোনো ব্যক্তির করযোগ্য আয় সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা হলেই ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। দেশে ১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি আছে। এখন যার আয় মাসে ৩৭ হাজার টাকা, এক বছর পরে তার ক্রয়ক্ষমতা অনেকটাই কমে যাবে মূল্যস্ফীতির কারণে। কিন্তু করের ক্ষেত্রে ছাড় নেই।

 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বাজেটে গৃহীত পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে এককভাবে এটা কমানো যাবে না। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নের নির্দেশনা নেই। তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব কর ফাঁকিকে উৎসাহিত করবে। তাছাড়া এ প্রস্তাব নিয়মিত করদাতাদের তিরস্কৃত করছে। এটা সামাজিক ন্যায্যতা বিবর্জিত কাজ। নৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঋণনির্ভর বাজেট মূদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিবে

আপডেট সময় : ০৭:৪৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০২৪

❖করারোপ বৃদ্ধিতে বাড়বে জনগণের নাভিঃশ্বাস
❖জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে মূল্যস্ফীতিতে

প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও উল্টো উসকে দিবে মূল্যস্ফীতিকে। নতুন করে বেশকিছু খাতে আরো ভ্যাট আরোপ এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বাড়বে মূল্যস্ফীতি। সংকটের সময়ে একটি সাধারণ বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। দুই বছর ধরে নিত্যপণ্যের চড়া দামের চাপে থাকা মধ্যবিত্তের জীবন আরও কঠিন হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, বিভিন্নভাবে মধ্যবিত্তের খরচ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার তাদের আয় বাড়ার আশাও কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার আকার এবার খুব একটা বাড়ায়নি। বিনিয়োগ ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও আশা করার মতো খবর নেই। ফলে খুব বেশি নতুন কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হবে, অনেক কর্মসংস্থান হবে, বাড়তি সংখ্যক বেকার চাকরি পাবেন, চাকরির বাজারে চাহিদার কারণে পুরোনোদের বেতন বেশি হারে বাড়বে- এসব আশা করা যাচ্ছে না। মধ্যবিত্ত পরিবারে যে তরুণ বেকার, তার জন্য সুখবর নেই।

বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণদের নিয়ে করা একটি জরিপে জানিয়েছে, দেশের ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ পেশাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। ভোজ্যতেল, চিনি, জ্বালানি তেল ইত্যাদি পণ্যের শুল্ককর কমানোর কোনো ঘোষণা নেই বাজেটে। আলু, পেঁয়াজ, ডিম, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, মাছ ইত্যাদির চড়া দাম কীভাবে কমবে, সে কথাও বাজেটে নেই। নিত্যপণ্যে খরচ বাড়ল : বাজেটে বিভিন্ন নিত্যপণ্য সরবরাহে উৎসে আয়কর কমানো হয়েছে। ২ শতাংশ থেকে করা হয়েছে ১ শতাংশ। এতে খরচ কমতে পারে ১০০ টাকায় এক টাকা। সুফলটি মূলত পাবেন আমদানিকারকেরা। ওদিকে আমদানি পর্যায়ে মার্কিন ডলারের দাম ১১৩ টাকা ধরে শুল্কায়ন শুরু হয়েছে। এতে নিত্যপণ্যসহ সব পণ্য থেকে বাড়তি কর পাওয়া শুরু করেছে সরকার। আগামী মাসে ডলারের দাম আরও বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ১১৭ টাকার বেশি।

বাজেটে শুল্ক কমানোর তালিকায় রয়েছে উল্লেখযোগ্য গুঁড়া দুধ। এর দাম কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু ভোজ্যতেল, চিনি, জ্বালানি তেল ইত্যাদি পণ্যের শুল্ককর কমানোর কোনো ঘোষণা নেই বাজেটে। আলু, পেঁয়াজ, ডিম, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, মাছ ইত্যাদির চড়া দাম কীভাবে কমবে, সে কথাও বাজেটে নেই। গতকাল শুক্রবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলামও স্পষ্ট করে কিছু বললেন না। এদিকে বাজেটে আগেই ঢাকা ওয়াসা পানির দাম ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে, যা বাজেট কার্যকরের দিন ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হবে। বিদ্যুতের দাম আগামী তিন বছর সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে সরকার, যা কার্যত বৃদ্ধি।

বিশ্বব্যাংকের মতে, বর্তমান অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৬ ভাগ। সংকোচনমূলক বাজেটের সদিচ্ছা থাকলে ২০২৫ অর্থবছরের জন্য শতকরা পৌনে ৭ ভাগ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্থমন্ত্রী গ্রহণ করতেন না। বড়জোর ৪-৫ ভাগে সীমিত থাকতেন। এ নিয়ে জনতার মধ্যে হইচই শুরু হতো না, যতটা হইচই হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ে।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) হিসাবে, প্রতি মাসে কোনো ব্যক্তির করযোগ্য আয় সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা হলেই ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। দেশে ১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি আছে। এখন যার আয় মাসে ৩৭ হাজার টাকা, এক বছর পরে তার ক্রয়ক্ষমতা অনেকটাই কমে যাবে মূল্যস্ফীতির কারণে। কিন্তু করের ক্ষেত্রে ছাড় নেই।

 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বাজেটে গৃহীত পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে এককভাবে এটা কমানো যাবে না। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নের নির্দেশনা নেই। তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব কর ফাঁকিকে উৎসাহিত করবে। তাছাড়া এ প্রস্তাব নিয়মিত করদাতাদের তিরস্কৃত করছে। এটা সামাজিক ন্যায্যতা বিবর্জিত কাজ। নৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।