◆ ভাড়া করা ফ্ল্যাটে ও গ্রামে জাল টাকার ছাপাখানা
◆ মোবাইল-কুরিয়ারে যাচ্ছে জাল টাকা
◆ দুই দিনে দেড় কোটি টাকার জাল নোট ও মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ৫
থামছেই না জাল টাকার বিস্তার। দেশে ঈদ কিংবা জাতীয় বড় কোনো উৎসব এলেই ক্রমেই সক্রিয় হয়ে ওঠে জাল টাকার কারবারিরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানেও কৌশল পাল্টে চক্রটি গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। ভাড়া করা ফ্ল্যাট কিংবা গ্রামের নির্জন কোনো এলাকার ভাড়া বাড়িতেই ছাপাখানা গড়ে তুলছে। এবার খোদ রাজধানীর বসুন্ধরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী ও শ্যামপুর এলাকায় জাল টাকা তৈরির ছাপাখানার সন্ধান পেয়েছে ডিবি পুলিশ ও র্যাব। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কয়েক কোটি টাকার জাল নোটসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। সংঘবদ্ধ এ চক্রের মূলহোতা গুরু জাকিরসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে দুটি ঈদ-পূজাসহ জাতীয় বড় কোনো উৎসব এলেই চক্রটি তৎপর হয়ে ওঠে। এদের প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, জাল নোটের ব্যবহার রোধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির ডিবি জানায়, গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বসুন্ধরা ও যাত্রাবাড়ীর কদমতলী এলাকায় পৃথক দুটি বাসায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ। এরা হচ্ছেন- লিয়াকত হোসেন জাকির ওরফে মাজার জাকির ওরফে গুরু জাকির (৪০), তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ বেগম (২৫), লিমা আক্তার রিনা (৪০) ও সাজেদা আক্তার (২৮)। ডিবি জানায়, চক্রের মূলহোতা জাকির ১২ বছর ধরে ৫০০ ও এক হাজার টাকার জাল নোট তৈরি করে আসছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেন সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য বর্তমানে ১০০ ও ২০০ টাকার জাল নোট তৈরি করতেন। ঈদুল আজহা টার্গেট করে চক্রটি বিপুল পরিমাণ জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অভিযানে দুটি বাসা থেকে প্রায় সোয়া এক কোটি টাকা এবং আরও প্রায় তিন কোটি জাল টাকা তৈরির মতো বিশেষ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান বলেন, ২৫ বছর ধরে জাল টাকার খুচরা ও পাইকারি কারবার করলেও গত ১২ বছরে জাকির কখনো জাল টাকা খুচরায় বিক্রি করেননি। নারী-পুরুষ মিলে তার প্রায় ১৫/২০ জন কর্মচারী আছেন, যাদের মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতন দিতেন। তিনি বলেন, জাল নোট প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও আন্তরিক হওয়ার তাগিদ দিয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, জাকির যে বাসায় অবস্থান করে জাল নোট বানাতেন সেই বাসার আশপাশে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে নজরদারি করতেন যেন তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরতে না পারে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে জাল টাকার মামলার বিচারে দ্রুত বিচার আদালত নেই। ফলে দীর্ঘসময় ধরে বিচারকাজ চলায় আসামিরা কারাগার থেকে জামিন পেয়ে আবারও একই কাজে জড়িয়ে যান।
এদিকে গত ৬ জুন রাজধানীর শ্যামপুর এলাকা থেকে জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্রের মূলহোতা হৃদয় মাতব্বরকে (২২) গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩ এর একটি দল। সংস্থাটির স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার মো. শামীম হোসেন দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, অভিযানে ৬০ হাজার ৭০০ টাকা মূল্যমানের জাল টাকাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত ৭ জুন সকালে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক পিএলসি’র উদ্যোগে খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত জাল নোট প্রচলন প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে একটি চক্র জাল টাকার নোটের লেনদেনের চেষ্টা চালায়। জাল নোট না চেনার কারণে অনেকেই বিপদে পড়েন। আমাদেরকে জাল নোট কীভাবে শনাক্ত করতে হবে? সেটা অবশ্যই জানতে হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, চক্রটি বিভিন্ন জেলায় নিযুক্ত এজেন্টের মাধ্যমে অনলাইনে যোগাযোগ করে অর্ডার কনফার্ম করে কুরিয়ারে করে জেলা শহরে পাঠাচ্ছে জাল টাকা। তিনি বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে মফস্বল পর্যন্ত জাল টাকার চালান ছড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গরু ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, এসব অপরাধ প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে আরো সতর্ক থাকতে হবে এবং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার দরকার বলে জানান ডিবিপ্রধান।

























