- ১৫৫ স্থানে যানজটের উচ্চঝুঁকি
- আগাম টিকিটের সংকট বাস ও ট্রেনে
- রেলের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু
সপ্তাহ পেরোলেই মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদের আনন্দ স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে গ্রামমুখী হবেন লাখ লাখ মানুষ। আর কয়েকদিন পরই সড়ক, রেল ও নৌপথে চাপ বাড়বে ঈদযাত্রার। রেলের টিকিট এখন অনলাইনে হওয়ায় রেলপথে বাড়ি ফিরবেন ২ লাখ মানুষ। ফলে গেল ঈদের মতো এবারও চাপ থাকবে সড়কে। তবে ঈদুল ফিতরে ঈদযাত্রা কমবেশি নির্বিঘ্ন থাকলেও এবার মানুষের মনে ভোগান্তির শঙ্কা বিরাজ করছে। মহাসড়কের পাশে পশুর হাট, ঘূর্ণিঝড়ে রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও যনজটপ্রবণ এলাকাগুলোর সড়ক বর্ধিতকরণ না হওয়ায় এবং যাত্রীবাহী বাস ও পশুবাহী পরিবহনের চাপ থাকায় সড়কপথে ভোগান্তির শঙ্কা বাড়ছে। এছাড়াও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে রেলের ঈদযাত্রার আগাম টিকিট বিক্রি, বাসেও মিলছে না আগাম টিকিট, ফলে ঈদযাত্রায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে হচ্ছে অনেককে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছর সড়ক ও মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী ২১৭ পশুর হাট বসে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এসব হাটের কারণে যানজট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় সড়কসংলগ্ন ৩০টি হাট, কক্সবাজার জেলায় ২৩টি, ঢাকা জেলায় ১৫টি, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ১৩টি, নাটোর জেলায় ১২টি, গাজীপুরে ১১টি, পঞ্চগড় ও বগুড়ায় ৯টি, সিলেটে ছয়টি উল্লেখযোগ্য। আর যানজটপ্রবণ ১৫৫টি স্থান রয়েছে মহাসড়কগুলোতে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৪৮টি স্পট। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের ৫২টি, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ছয়টি, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৪১টি ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আটটি স্থান।
ঈদযাত্রার এসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে গত ৩০ মে রাজধানীর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে এক সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভায় ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যানজটপ্রবণ এ স্থানগুলো তদারকি ও পর্যবেক্ষণ করবে সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় পুলিশ সুপার ও হাইওয়ে পুলিশ। একই সঙ্গে টোলপ্লাজায় পশুবাহী পরিবহন পারাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং যানজটমুক্ত রাখতে ইটিসি বুথ চালুর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক টোল আদায় অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বিআরটিএ’র সদর দপ্তর, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআরটিএ, বিআরটিসি এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে সাত দিনের জন্য একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলতে বলা হয়েছে। সভায় অস্থায়ী এসব পশুর হাটগুলোকে না বসাতে স্থানীয় সরকার বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
মহাসড়ক ছাড়াও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় যাত্রী ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় দৌলতদিয়ার ৪ ও ৭ এবং পাটুরিয়ার ৪ নম্বর ঘাটে পন্টুনের আশপাশ পানিতে তলিয়ে আছে, যা ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা যাত্রী ও যানবাহনচালকদের। পদ্মায় পানি বাড়ায় দৌলতদিয়ার দুটি ও পাটুরিয়ার একটি ঘাটে ফেরি পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির মূল কারণ হতে পারে এ নৌ-রুটের তিনটি ঘাট।
এছাড়াও ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বাড়তে পারে উত্তরের মানুষদের। ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক ধরে উত্তরের পথে এবারও ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার রাস্তার কাজ এখনো ভোগাচ্ছে। এরই মধ্যে পরিকল্পনার পরিবর্তন ঘটিয়ে যাত্রীদের ঘরে ফেরা নিশ্চিতে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। আর বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের যানজট মুক্ত ঈদযাত্রায় তারা সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবছর এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড়ে আরও অন্তত ৫ কিলোমিটার নতুন করে চার লেন সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়াও ঈদযাত্রা যানজটমুক্ত রাখতে প্রস্তুত আছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও ঘরমুখী মানুষের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিস’ চালু করতে যাচ্ছে সরকারের পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। এ লক্ষ্যে সোমবার থেকে বিআরটিসির সংশ্লিষ্ট ডিপো থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। বিশেষ এই বাস সেবা চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত। ১৭ জুন ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। বিআরটিসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকায় সংস্থাটির মতিঝিল, জোয়ারসাহারা, কল্যাণপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপো (চাষাড়া) থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষে এবার ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল সোমবার থেকে রেলওয়ের ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত। গতকাল বিক্রি হয়েছে ২০ জুনের টিকিট, ২১ জুনের আসন বিক্রি হবে আজ মঙ্গলবার; ২২ জুনের আসন বিক্রি হবে আগামীকাল বুধবার; ২৩ জুনের আসন বিক্রি হবে ১৩ জুন এবং ২৪ জুনের আসন বিক্রি হবে ১৪ জুন। পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করার আন্তঃনগর ট্রেনের আসনের টিকিট সকাল ৮টা থেকে পাওয়া যাচ্ছে। আর পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের আসন বেলা ২টা থেকে বিক্রি করা হবে।
























