মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা গত ১৭ জুন উদযাপিত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তা শেষ হয়েছে গতকাল বুধবার। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করেছেন। গত সোমবার (১৭ জুন) সকাল থেকে গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে পশু কোরবানি করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এই ৩ দিনে কোরবানি করতে গিয়ে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় গরুর লাথি ও গুঁতো খেয়ে হাত ও পায়ের হাড় ভেঙে আহত হয়েছেন অনেকে। আবার পশু জবাইয়ের সময় এবং মাংস বানাতে গিয়ে অনেকের হাত-পায়ের রগ কেটে গেছে। এদের মধ্যে প্রায় ২০০ জন আহত হয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (নিটোর) চিকিৎসা নিয়েছেন। একই সময়ে ঢাকা মেডিক্যাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়েছেন আরো ৩ শতাধিক ব্যক্তি। তাদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। গত ৩ দিন হাসপাতালগুলো সরেজমিন ঘুরে ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্যচিত্র পাওয়া গেছে।
ডেমরার মুক্তার হোসেন, ঈদের দিন সকাল ৯টার সময় জবাইকারী ব্যক্তি গরুর গলায় পোচ দিতে গিয়ে তার হাতের ওপর ছুরি চালিয়ে দিয়েছেন। এতে তার ডান হাতের রগ কেটে গেছে। দ্রুত অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে অসহায় হয়ে পড়েছেন। মুক্তার হোসেন বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল থেকে বলা হয়েছে সেখানে রগের কাজ করা হচ্ছে না। রগের সেলাই দেওয়া হচ্ছে না। পঙ্গু হাসপাতাল থেকে বলেছে- সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় লাগবে। এখন কোথায় যাব, কী করব?’ মৌসুমি কসাই মোয়াজ্জেম হোসেন এসেছেন মুন্সীগঞ্জ থেকে। গরু কোরবানি করতে গিয়ে লাথি খেয়ে তার ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। জরুরি বিভাগে কাতরাচ্ছেন তিনি। মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, গরুর লাথিতে ডান পা ভেঙে একদম পায়ের হাড্ডি বের হয়ে গেছে। মিরপুর-১ নম্বর থেকে এসেছেন সেলিম মিয়া।
গরুর গুঁতো খেয়ে পাঁজরের হাড় ভেঙেছে তার। জরুরি বিভাগে হুইল ট্রলিতে কাতরাচ্ছেন এই বয়ষ্ক মানুষ। সেলিম মিয়ার স্ত্রী বলেন, গরু জবাই দেওয়ার সময় লাফ দিয়েছে। গরুর পায়ের লাথি খেয়ে ছিটকে পড়ে কোমরের হাড় ভেঙেছে। সিএনজি অটোরিকশাচালক তামিম। বাড়তি লাভের আশায় গরুর চামড়া ছিলতে গিয়ে হাতে পোচ লেগেছে তার। ডান হাতের কবজি কেটে হাসপাতালে তিনি। এর পাশেই কাতরাচ্ছেন বাবুল মিয়া। তিনি মুগদা থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘কসাই গরু জবাই করতে গিয়ে বাম পায়ে পোচ মারছে। কোরবানির গরু জবাই করার সময় ছুরির আঘাতে হাতের রগ কেটে গেছে রাজধানীর আজিমপুরের যুবক মনোয়ারের। তার ডান হাতের ৪০ শতাংশ কেটে দুই ভাগ হয়ে গেছে। দয়াগঞ্জ এলাকার ফয়সাল আলম গরুর লাথি খেয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। এতে তার চোখের নিচটা মারাত্মকভাবে ফুলে উঠেছে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
নিটোরের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বলেন, শুধু ঈদের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০০ রোগীকে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। জটিল কিছু রোগী ভর্তিও রেখেছি। গতকাল পর্যন্ত আরো রোগী এসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ গরুর শিঙের আঘাত পেয়েছেন, আবার কেউ বা ছুরি চালাতে গিয়ে আঙুল কেটে ফেলেছেন। এ রকমই বেশি। কেউ আবার গরুর গুঁতো খেয়ে হাত-পা ভেঙেছেন। এদিকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঈদের দিন গত ১৭ জুন দিনভর পশু কোরবানি দিতে গিয়ে গরুর গুঁতো, লাথি ও মাংস কাটার সময় ছুরিকাঘাতে আহত ৯৪ জন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিয়েছেন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত আরো প্রায় ৬০-৭০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে। একইভাবে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় দেড়শ রোগী।


























