০৪:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এবার আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর

❖ গুরুত্ব পাবে ঋণসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়
❖ ঢাকা-দিল্লি ১০ চুক্তি ও সমঝোতার সফলতা নিয়ে চলছে হিসাব নিকাশ
❖ তিস্তা নিয়ে কারিগরি দল আসাটা খুবই ইতিবাচক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
❖ চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক কিন্তু ইন্ডিয়ার সঙ্গে আত্মিক এবং উচ্চমাত্রার সম্পর্ক : কুদরত-ই-খুদা
❖ চুক্তি না করে তিস্তা প্রকল্পে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে ভারত : ফখরুল

ভারত সফরের পর এবার প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনে রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে। আগামী ৯ জুলাই বেইজিংয়ে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। এতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানায়। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে সফলতা নিয়ে চলছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলের হিসাব নিকাশ।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফরে গুরুত্ব পাবে বাণিজ্য এবং অর্থনীতি। বাংলাদেশের জন্য চীনের ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৪০ কোটি ইউয়ানের বেশি ঋণ। এর মধ্যে বাণিজ্য সহায়তার আওতায় ৫০০ কোটি ডলার ও বাজেট সহায়তার আওতায় ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় বাংলাদেশকে ঋণ দেবে চীন। এই সফরে সাতটি সমঝোতা স্মারকসহ (এমওইউ) ১১টি দলিল চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি চলছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চীনের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (জিডিআই), বাণিজ্য সহায়তা, বিনিয়োগ সুরক্ষা, ডিজিটাল অর্থনীতি, সুনীল অর্থনীতি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সমীক্ষার ঘোষণা ও একাধিক মৈত্রী সেতু নির্মাণ ও সংস্কার।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরের মূল অগ্রাধিকার থাকবে বাণিজ্য ও অর্থনীতি। দুই দেশের অসম বাণিজ্যে ভারসাম্য আনা এবং যেসব সহায়তা দরকার, তা নিয়ে আলোচনা হবে। চীনের কাছ থেকে বাণিজ্য সহায়তা ও বাজেট সহায়তার আওতায় ঋণ নিয়ে আলোচনা চলছে। সফরে এ বিষয় চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরের দুই সপ্তাহ আগে গত শনিবার ঢাকায় এসেছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লি জিয়ানছাও। চার দিনের বাংলাদেশ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে তার দেখা করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন তিনি।

আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের কথা রয়েছে। তবে সফরের মূল কর্মসূচি ৯ ও ১০ জুলাই সীমিত থাকবে। ৯ জুলাই দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। ১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এ সফরের সময় চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস অব চায়নার প্রেসিডেন্ট ঝাও লেজির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

বাংলাদেশকে ৯৮ শতাংশ পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও ওই দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি তেমন বাড়েনি। গত বছর বাংলাদেশ প্রায় ৭০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে, চীন থেকে আমদানি করেছে ২ হাজার কোটি ডলার পণ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সেখানে তিস্তা কিংবা যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ৫৪টি যৌথ নদী রয়েছে। সেই নদীর যদি একটি অভিন্ন ব্যবস্থাপনা করতে পারি, তাহলে তা দুটি দেশকেই উপকৃত করবে। সে নিয়ে আমরা আলোচনা উপস্থাপন করেছি। তিস্তা নিয়ে চীনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে আমরা ভারত সরকারের সহায়তা চেয়েছি। তখন চীনা প্রসঙ্গ এসেছে। সেখানে জাতিগত যে সংঘাত চলছে, তাতে চীনের ভূমিকা নিয়ে কথা হয়েছে। অন্য কোনো কিছুতে চীনা প্রসঙ্গ আসেনি।’

তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা করতে ভারতের কারিগর দল আসবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তিস্তা একটি বড় প্রকল্প। সেটা নিয়ে তাদের কারিগরি দল আসতেই হবে। আর কারিগরি দল আসা খুবই ইতিবাচক। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবারও তিস্তা সমস্যার সমাধান হয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের কাছে সেবাদাসে পরিণত হয়েছে। চুক্তিগুলো আমরা দেখলাম-বেশির ভাগ বলা হচ্ছে মেমোরান্ডাম পার্টনারশিপ সই করেছেন। অনেকগুলো করবেন… কারিগরি… দল পাঠাবেন ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের যে সমস্যা আমরা যে তিস্তা নদীর পানির যে ন্যায্য হিসসা তা পাচ্ছি না, সেই ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। উপরন্ত কী হয়েছে, তিস্তা প্রকল্পের যে প্রস্তাব তারা দিয়েছেন, সেই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করবার জন্য অর্থাৎ বিনিয়োগ করার জন্য ভারতবর্ষ প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সবার আগে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য বণ্টন চাই। এবং অভিন্ন যে নদীগুলো আছে প্রত্যেকটি নদীর ন্যায্য হিসসাটা চাই- এটা আমাদের অধিকার। আন্তর্জাতিক আইনের অধিকার। এই কথাগুলো বলতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর চীন ও ভারত সফর প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক কুদরত-ই-খুদা বলেন, এই সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তিটা হলো রাজনৈতিক। বাংলাদেশের সরকারের সাথে তাদের একটা উচ্চমাত্রার সম্পর্ক আছে। সেই ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে মারাত্মকভাবে সরকার লাভবান হয়েছে। তবে, সরকারের যে অর্থনৈতিক সমস্যাটা এই সমস্যা এই মুহুর্তে সরাসরিভাবে হেল্প করার জন্য ইনডিয়ার ঐ সক্ষমতাটা নাই, আমাদের যে ডলার ক্রাইসিস, আমাদের যে বাজেট সহায়তা এটা কিন্তু পারবেনা। তবে যেহেতু মোদীর সাথে কিম্বা ইনডিয়ার সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবই উচ্চমাত্রায় এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সহযোগিতা আসবে। এমনি আমি যেটা দেখলাম যে, মেডিকেল ই ভিসা চালু হচ্ছে। এটা কোন রাষ্ট্রীয় চুক্তিগুলোর মধ্যে পড়েনা। এটা খুবই সিম্পল একটা ম্যাটার। আর দ্বিতীয় বিষয় হলো এমওইউ যেটা সেটা কোন চুক্তি না। চুক্তি অন্য বিষয়। এমওইউ হলো সমঝোতার প্রস্তাব। এটা দুই দেশই যেকোন সময় না করতে পারে। এখন আমার মনে হচ্ছে এই বিষয়টা এখন আর চুক্তি আকারে করা যাবেনা। আমরা দুইদেশ করবনা তো করবনা। এমওইউটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। নতুন কোন গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়েছে আমার ধারণা নাই। তবে, যেটা দেখলাম কিছু এমওইউ নবায়ন হয়েছে। বাংলাদেশের মূল যে বিষয়টা ছিল তিস্তা, সেটার ব্যাপারে আরও বেশি কূটনৈতিক তৎপরতা, আরও বেশি বার্গেনিং করার উচিত ছিল আমাদের। বার্গেনিং করে তিস্তার পানিবন্টনের বিষয়টা নিশ্চিত করার দরকার ছিল। যদিও ওদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে আমাদের কারিগরি টিম পাঠাবে।

এটা লেনদি প্রসেসের ব্যাপার। ডিসিশন গমমেন্ট টু গমমেন্ট অথবা হাই লেভেলের কথা বার্তা বলে কিছুটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেলেই ভাল হয়। তাহলে আমরা যে তিস্তা নিয়ে অনেকদিন ভুগছি। আমাদের জনগণের প্রত্যাশা হলো, তিস্তার ন্যায্য পানির হিস্যাটা আমরা পাব। এই বিষয়ে কোন ডিসিশন হয় নাই। যেহেতু ডিসিশন হয়নাই সেক্ষেত্রে প্রাপ্তিটা আমাদের হয়েছে সেটা বলা যাবে না। তবে, মূল প্রাপ্তিটা রাজনৈতিক প্রাপ্তি। আমরা তো জানি যে প্রধানমন্ত্রী আগামী মাসে চীনে যাবেন। চীন আমাদের অর্থনৈতিক পার্টনার। ক্রাইসিস মুহুর্তে চীন আমাদেরকে টাকা দিচ্ছে। দিয়েছে, দিবে। এই ক্রাইসিসের মুহুর্তে টাকাটা কিন্তু আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ট ডেভেলপমেন্ট পার্টনার উনাদেরও এই ধরণের সক্ষমতা নেই যে চীন যেভাবে টাকা দিয়ে হেল্প করে দ্রুত সেই অবস্থাটা ইনডিয়ার নেই। তবে, ভূরাজনৈতিক কারণে আমাদের চীনের সাথে সম্পর্ক অর্থনৈতিক কিন্তু ইনডিয়ার সাথে সম্পর্ক আত্মিক এবং উচ্চমাত্রায়।

জনপ্রিয় সংবাদ

এবার আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর

আপডেট সময় : ০৭:০৬:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

❖ গুরুত্ব পাবে ঋণসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়
❖ ঢাকা-দিল্লি ১০ চুক্তি ও সমঝোতার সফলতা নিয়ে চলছে হিসাব নিকাশ
❖ তিস্তা নিয়ে কারিগরি দল আসাটা খুবই ইতিবাচক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
❖ চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক কিন্তু ইন্ডিয়ার সঙ্গে আত্মিক এবং উচ্চমাত্রার সম্পর্ক : কুদরত-ই-খুদা
❖ চুক্তি না করে তিস্তা প্রকল্পে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে ভারত : ফখরুল

ভারত সফরের পর এবার প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনে রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে। আগামী ৯ জুলাই বেইজিংয়ে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। এতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানায়। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে সফলতা নিয়ে চলছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলের হিসাব নিকাশ।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফরে গুরুত্ব পাবে বাণিজ্য এবং অর্থনীতি। বাংলাদেশের জন্য চীনের ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৪০ কোটি ইউয়ানের বেশি ঋণ। এর মধ্যে বাণিজ্য সহায়তার আওতায় ৫০০ কোটি ডলার ও বাজেট সহায়তার আওতায় ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় বাংলাদেশকে ঋণ দেবে চীন। এই সফরে সাতটি সমঝোতা স্মারকসহ (এমওইউ) ১১টি দলিল চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি চলছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চীনের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (জিডিআই), বাণিজ্য সহায়তা, বিনিয়োগ সুরক্ষা, ডিজিটাল অর্থনীতি, সুনীল অর্থনীতি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সমীক্ষার ঘোষণা ও একাধিক মৈত্রী সেতু নির্মাণ ও সংস্কার।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরের মূল অগ্রাধিকার থাকবে বাণিজ্য ও অর্থনীতি। দুই দেশের অসম বাণিজ্যে ভারসাম্য আনা এবং যেসব সহায়তা দরকার, তা নিয়ে আলোচনা হবে। চীনের কাছ থেকে বাণিজ্য সহায়তা ও বাজেট সহায়তার আওতায় ঋণ নিয়ে আলোচনা চলছে। সফরে এ বিষয় চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরের দুই সপ্তাহ আগে গত শনিবার ঢাকায় এসেছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লি জিয়ানছাও। চার দিনের বাংলাদেশ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে তার দেখা করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন তিনি।

আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের কথা রয়েছে। তবে সফরের মূল কর্মসূচি ৯ ও ১০ জুলাই সীমিত থাকবে। ৯ জুলাই দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। ১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এ সফরের সময় চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস অব চায়নার প্রেসিডেন্ট ঝাও লেজির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

বাংলাদেশকে ৯৮ শতাংশ পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও ওই দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি তেমন বাড়েনি। গত বছর বাংলাদেশ প্রায় ৭০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে, চীন থেকে আমদানি করেছে ২ হাজার কোটি ডলার পণ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সেখানে তিস্তা কিংবা যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ৫৪টি যৌথ নদী রয়েছে। সেই নদীর যদি একটি অভিন্ন ব্যবস্থাপনা করতে পারি, তাহলে তা দুটি দেশকেই উপকৃত করবে। সে নিয়ে আমরা আলোচনা উপস্থাপন করেছি। তিস্তা নিয়ে চীনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে আমরা ভারত সরকারের সহায়তা চেয়েছি। তখন চীনা প্রসঙ্গ এসেছে। সেখানে জাতিগত যে সংঘাত চলছে, তাতে চীনের ভূমিকা নিয়ে কথা হয়েছে। অন্য কোনো কিছুতে চীনা প্রসঙ্গ আসেনি।’

তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা করতে ভারতের কারিগর দল আসবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তিস্তা একটি বড় প্রকল্প। সেটা নিয়ে তাদের কারিগরি দল আসতেই হবে। আর কারিগরি দল আসা খুবই ইতিবাচক। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবারও তিস্তা সমস্যার সমাধান হয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের কাছে সেবাদাসে পরিণত হয়েছে। চুক্তিগুলো আমরা দেখলাম-বেশির ভাগ বলা হচ্ছে মেমোরান্ডাম পার্টনারশিপ সই করেছেন। অনেকগুলো করবেন… কারিগরি… দল পাঠাবেন ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের যে সমস্যা আমরা যে তিস্তা নদীর পানির যে ন্যায্য হিসসা তা পাচ্ছি না, সেই ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। উপরন্ত কী হয়েছে, তিস্তা প্রকল্পের যে প্রস্তাব তারা দিয়েছেন, সেই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করবার জন্য অর্থাৎ বিনিয়োগ করার জন্য ভারতবর্ষ প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সবার আগে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য বণ্টন চাই। এবং অভিন্ন যে নদীগুলো আছে প্রত্যেকটি নদীর ন্যায্য হিসসাটা চাই- এটা আমাদের অধিকার। আন্তর্জাতিক আইনের অধিকার। এই কথাগুলো বলতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর চীন ও ভারত সফর প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক কুদরত-ই-খুদা বলেন, এই সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তিটা হলো রাজনৈতিক। বাংলাদেশের সরকারের সাথে তাদের একটা উচ্চমাত্রার সম্পর্ক আছে। সেই ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে মারাত্মকভাবে সরকার লাভবান হয়েছে। তবে, সরকারের যে অর্থনৈতিক সমস্যাটা এই সমস্যা এই মুহুর্তে সরাসরিভাবে হেল্প করার জন্য ইনডিয়ার ঐ সক্ষমতাটা নাই, আমাদের যে ডলার ক্রাইসিস, আমাদের যে বাজেট সহায়তা এটা কিন্তু পারবেনা। তবে যেহেতু মোদীর সাথে কিম্বা ইনডিয়ার সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবই উচ্চমাত্রায় এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সহযোগিতা আসবে। এমনি আমি যেটা দেখলাম যে, মেডিকেল ই ভিসা চালু হচ্ছে। এটা কোন রাষ্ট্রীয় চুক্তিগুলোর মধ্যে পড়েনা। এটা খুবই সিম্পল একটা ম্যাটার। আর দ্বিতীয় বিষয় হলো এমওইউ যেটা সেটা কোন চুক্তি না। চুক্তি অন্য বিষয়। এমওইউ হলো সমঝোতার প্রস্তাব। এটা দুই দেশই যেকোন সময় না করতে পারে। এখন আমার মনে হচ্ছে এই বিষয়টা এখন আর চুক্তি আকারে করা যাবেনা। আমরা দুইদেশ করবনা তো করবনা। এমওইউটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। নতুন কোন গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়েছে আমার ধারণা নাই। তবে, যেটা দেখলাম কিছু এমওইউ নবায়ন হয়েছে। বাংলাদেশের মূল যে বিষয়টা ছিল তিস্তা, সেটার ব্যাপারে আরও বেশি কূটনৈতিক তৎপরতা, আরও বেশি বার্গেনিং করার উচিত ছিল আমাদের। বার্গেনিং করে তিস্তার পানিবন্টনের বিষয়টা নিশ্চিত করার দরকার ছিল। যদিও ওদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে আমাদের কারিগরি টিম পাঠাবে।

এটা লেনদি প্রসেসের ব্যাপার। ডিসিশন গমমেন্ট টু গমমেন্ট অথবা হাই লেভেলের কথা বার্তা বলে কিছুটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেলেই ভাল হয়। তাহলে আমরা যে তিস্তা নিয়ে অনেকদিন ভুগছি। আমাদের জনগণের প্রত্যাশা হলো, তিস্তার ন্যায্য পানির হিস্যাটা আমরা পাব। এই বিষয়ে কোন ডিসিশন হয় নাই। যেহেতু ডিসিশন হয়নাই সেক্ষেত্রে প্রাপ্তিটা আমাদের হয়েছে সেটা বলা যাবে না। তবে, মূল প্রাপ্তিটা রাজনৈতিক প্রাপ্তি। আমরা তো জানি যে প্রধানমন্ত্রী আগামী মাসে চীনে যাবেন। চীন আমাদের অর্থনৈতিক পার্টনার। ক্রাইসিস মুহুর্তে চীন আমাদেরকে টাকা দিচ্ছে। দিয়েছে, দিবে। এই ক্রাইসিসের মুহুর্তে টাকাটা কিন্তু আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ট ডেভেলপমেন্ট পার্টনার উনাদেরও এই ধরণের সক্ষমতা নেই যে চীন যেভাবে টাকা দিয়ে হেল্প করে দ্রুত সেই অবস্থাটা ইনডিয়ার নেই। তবে, ভূরাজনৈতিক কারণে আমাদের চীনের সাথে সম্পর্ক অর্থনৈতিক কিন্তু ইনডিয়ার সাথে সম্পর্ক আত্মিক এবং উচ্চমাত্রায়।