০৩:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চরম অস্তিত্ব সংকটে পোল্ট্রি শিল্প প্রান্তিক পর্যায়ে কমেছে খামারি

◉ এক বছরে খামার কমেছে ১০ থেকে ১৫ হাজার
◉ খাদ্য ও বাচ্চার দাম বাড়ায় কমেছে উৎপাদন
◉ অধিক সুবিধা নিচ্ছে করপোরেট ব্যবসায়ীরা
◉ পোলট্রিশিল্পের বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা

➤ অধিদপ্তর করপোরেটদের সবসময় সহযোগিতা করছে অথচ প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব অনেকÑ সুমন হাওলাদার, সভাপতি, বিপিএ
➤ নিজেদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগী হতে হবে; ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাষি ও খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে হবেÑ শামসুল আরেফিন খালেদ, সভাপতি, এফআইএবি

পোলট্রি আমাদের দেশে সম্ভাবনাময় একটি লাভজনক শিল্প। হাঁস-মুরগি পালন ও ডিম উৎপাদন করে দেশের অনেক মানুষের ভাগ্য ফিরেছে। এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান জড়িত আছে। বর্তমানে সংকটে পড়েছে দেশের বেকারত্ব ঘুচিয়ে এগিয়ে যাওয়া পোলট্রিশিল্প। মুরগির খাদ্য, বাচ্চার দাম বৃদ্ধি, উৎপাদন কমে যাওয়া এবং সিন্ডিকেট আর করপোরেট প্রতিষ্ঠানের রাজত্বের কারণে চরম অস্তিত্ব সংকটে এ শিল্প। সম্প্রতি নানা সংকটের কারণে ছোট ছোট খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও আমরা ব্যবসা করতে পারছি না। করপোরেট ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে নিঃস্ব হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা। পোলট্রি শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় টিকতে না পেরে এরই মধ্যে খামার গুটিয়ে নিয়েছেন বহু উদ্যোক্তা। গত এক বছরে পোলট্রি খামার কমে গেছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার। ফলে উৎপাদন কমে তৈরি হচ্ছে সরবরাহ ঘাটতি। যার প্রভাবে বেড়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। যার সুবিধা নিচ্ছে এ খাতে করপোরেট ব্যবসায়ীরাÑ এমনটাই দাবি প্রান্তিক খামারিদের। প্রান্তিক খামারি আফজাল হোসেন বলেন, আগে সবকিছুর দাম অনেক কম ছিল। বর্তমানে মুরগির বাচ্চা, ফিড থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বন্যা ও তীব্র গরমের কারণে প্রতিনিয়ত সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আর তাছাড়া আমাদের কেউ সহজে ঋণ দিতে চায় না। এতে করে আমাদের পক্ষে আগের মত খামার পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।

বেশ কয়েকমাস ধরে এই শিল্পের বাজার ঊর্ধ্বমুখী প্রতিনিয়ত বাড়ছে মুরগি ও ডিমের দাম। বর্তমানে রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা যায়, লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ১৫০-১৮০ টাকায়। ১০০ ডিমের দাম ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। সাদা ডিমের ডজন ১৭০-১৯০ টাকা। হাঁসের ডিমের ডজন ২২০-২৫০ টাকা। খামারিরা বলছেন, বর্তমানে ১০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা ৮০ পয়সার মধ্যে উৎপাদন পর্যায়ে ডিম বিক্রি করছেন তারা। এতে ১০০ ডিমের দাম ১ হাজার ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০ টাকা। অথচ ভোক্তা পর্যায়ের খুচরা দোকানগুলোতে প্রতিটি ডিম ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন দোকানে ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। এতে এক ডজন ডিম কিনতে হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৮০ টাকায়। বেড়েছে মুরগির দামও। কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা, দেশি মুরগি ৭০০-৭৩০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকায়। আর প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়।

প্রতিনিয়ত দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে পোলট্রি ব্যবসায়ী মো: মামুন বলেন, চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় প্রতিনিয়ত মুরগির দাম বাড়ছে। উৎপাদনের চেয়ে খরচ বেড়ে যাওয়া অনেক খামারি বাচ্চা তোলেননি খামারে। এতে করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সেই সুযোগ নিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন। ব্রয়লারের মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে নিম্নবিত্ত পরিবারেও। প্রতিনিয়ত দাম বাড়ার কারণে দোকানিদের সঙ্গে ক্রেতাদের চলছে তর্কবিতর্ক। বিক্রেতারা বলছেন দাম বাড়ার কারণে মুরগি আনা কমিয়ে দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, দাম বাড়ায় তাদের বিক্রি কমেছে বলেও জানিয়েছেন তারা। গতকাল এ বিষয়ে কথা হয় কাওরানবাজারে বাজার করতে আসা দিনমজুর আজিজুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারে প্রতিনিয়ত সবকিছুর দাম বাড়ছে। আমাদের গরুর মাংস ক্রয় করে খাওয়ার মত সামর্থ্য নেই। আমরা কোন রকম ব্রয়লার মুরগি ক্রয় করতাম। আর এখন তাও আমাদের সাধ্যের বাইরে। পাশাপাশি বেড়েছে ডিমের দামও।

দাম বৃদ্ধি পাশাপাশি বর্তমানে খামারিদের কি অবস্থা জানতে চাইলে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, পোলট্রি শিল্প নিয়ে চারটি নীতিমালা থাকলেও একটিও বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অবহেলায় আজ পোলট্রি শিল্প ধ্বংসের পথে। অধিদপ্তর করপোরেটদের সবসময় সহযোগিতা করছে অথচ প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব অনেক। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্ব এ শিল্পকে রক্ষা করা। প্রাণিসম্পদের সহযোগিতায় করপোরেটরা আরো বড় হচ্ছে আর প্রান্তিক খামারি দিন দিন কমে যাচ্ছে। সরকার সব সুযোগ-সুবিধা দিলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা অবহেলিত। প্রান্তিক খামারিদের কথা চিন্তা করে হলেও সরকারের উচিত এ ব্যবসায় সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে করে প্রান্তিক খামারিরা বড় লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পান এবং এ ব্যবসায় তারা টিকে থাকতে পারেন।

পোল্ট্রি শিল্পের খাদ্যের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত দামের বিষয়ে জানতে চাইলে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (এফআইএবি) সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, কোভিড মহামারির ধকল যখন কিছুটা সহনীয় হতে শুরু করেছে ঠিক তখনই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ফিড তৈরির কাঁচামালের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। যেহেতু ফিড তৈরির অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল ভুট্টা, সয়াবিনসহ অধিকাংশ উপকরণই আমদানি-নির্ভর তাই কাঁচামালের দর বৃদ্ধি ছাড়াও জাহাজ ভাড়া ও ডলারের দর বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচে কোনভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বজুড়েই একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোও রপ্তানিতে মাঝে মধ্যেই রাশ টেনে ধরছেন। তাই নিজেদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগী হতে হবে; ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাষি ও খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) গত বছরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে মুরগির খামার আছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার। করোনার আগে ছিল ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশে প্রতিদিন ৪ কোটির বেশি ডিম ও ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদিত হয়। পোলট্রিশিল্পের বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার।

জনপ্রিয় সংবাদ

চরম অস্তিত্ব সংকটে পোল্ট্রি শিল্প প্রান্তিক পর্যায়ে কমেছে খামারি

আপডেট সময় : ০২:১৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪

◉ এক বছরে খামার কমেছে ১০ থেকে ১৫ হাজার
◉ খাদ্য ও বাচ্চার দাম বাড়ায় কমেছে উৎপাদন
◉ অধিক সুবিধা নিচ্ছে করপোরেট ব্যবসায়ীরা
◉ পোলট্রিশিল্পের বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা

➤ অধিদপ্তর করপোরেটদের সবসময় সহযোগিতা করছে অথচ প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব অনেকÑ সুমন হাওলাদার, সভাপতি, বিপিএ
➤ নিজেদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগী হতে হবে; ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাষি ও খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে হবেÑ শামসুল আরেফিন খালেদ, সভাপতি, এফআইএবি

পোলট্রি আমাদের দেশে সম্ভাবনাময় একটি লাভজনক শিল্প। হাঁস-মুরগি পালন ও ডিম উৎপাদন করে দেশের অনেক মানুষের ভাগ্য ফিরেছে। এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান জড়িত আছে। বর্তমানে সংকটে পড়েছে দেশের বেকারত্ব ঘুচিয়ে এগিয়ে যাওয়া পোলট্রিশিল্প। মুরগির খাদ্য, বাচ্চার দাম বৃদ্ধি, উৎপাদন কমে যাওয়া এবং সিন্ডিকেট আর করপোরেট প্রতিষ্ঠানের রাজত্বের কারণে চরম অস্তিত্ব সংকটে এ শিল্প। সম্প্রতি নানা সংকটের কারণে ছোট ছোট খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও আমরা ব্যবসা করতে পারছি না। করপোরেট ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে নিঃস্ব হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা। পোলট্রি শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় টিকতে না পেরে এরই মধ্যে খামার গুটিয়ে নিয়েছেন বহু উদ্যোক্তা। গত এক বছরে পোলট্রি খামার কমে গেছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার। ফলে উৎপাদন কমে তৈরি হচ্ছে সরবরাহ ঘাটতি। যার প্রভাবে বেড়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। যার সুবিধা নিচ্ছে এ খাতে করপোরেট ব্যবসায়ীরাÑ এমনটাই দাবি প্রান্তিক খামারিদের। প্রান্তিক খামারি আফজাল হোসেন বলেন, আগে সবকিছুর দাম অনেক কম ছিল। বর্তমানে মুরগির বাচ্চা, ফিড থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বন্যা ও তীব্র গরমের কারণে প্রতিনিয়ত সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আর তাছাড়া আমাদের কেউ সহজে ঋণ দিতে চায় না। এতে করে আমাদের পক্ষে আগের মত খামার পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।

বেশ কয়েকমাস ধরে এই শিল্পের বাজার ঊর্ধ্বমুখী প্রতিনিয়ত বাড়ছে মুরগি ও ডিমের দাম। বর্তমানে রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা যায়, লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ১৫০-১৮০ টাকায়। ১০০ ডিমের দাম ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। সাদা ডিমের ডজন ১৭০-১৯০ টাকা। হাঁসের ডিমের ডজন ২২০-২৫০ টাকা। খামারিরা বলছেন, বর্তমানে ১০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা ৮০ পয়সার মধ্যে উৎপাদন পর্যায়ে ডিম বিক্রি করছেন তারা। এতে ১০০ ডিমের দাম ১ হাজার ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০ টাকা। অথচ ভোক্তা পর্যায়ের খুচরা দোকানগুলোতে প্রতিটি ডিম ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন দোকানে ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। এতে এক ডজন ডিম কিনতে হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৮০ টাকায়। বেড়েছে মুরগির দামও। কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা, দেশি মুরগি ৭০০-৭৩০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকায়। আর প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়।

প্রতিনিয়ত দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে পোলট্রি ব্যবসায়ী মো: মামুন বলেন, চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় প্রতিনিয়ত মুরগির দাম বাড়ছে। উৎপাদনের চেয়ে খরচ বেড়ে যাওয়া অনেক খামারি বাচ্চা তোলেননি খামারে। এতে করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সেই সুযোগ নিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন। ব্রয়লারের মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে নিম্নবিত্ত পরিবারেও। প্রতিনিয়ত দাম বাড়ার কারণে দোকানিদের সঙ্গে ক্রেতাদের চলছে তর্কবিতর্ক। বিক্রেতারা বলছেন দাম বাড়ার কারণে মুরগি আনা কমিয়ে দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, দাম বাড়ায় তাদের বিক্রি কমেছে বলেও জানিয়েছেন তারা। গতকাল এ বিষয়ে কথা হয় কাওরানবাজারে বাজার করতে আসা দিনমজুর আজিজুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারে প্রতিনিয়ত সবকিছুর দাম বাড়ছে। আমাদের গরুর মাংস ক্রয় করে খাওয়ার মত সামর্থ্য নেই। আমরা কোন রকম ব্রয়লার মুরগি ক্রয় করতাম। আর এখন তাও আমাদের সাধ্যের বাইরে। পাশাপাশি বেড়েছে ডিমের দামও।

দাম বৃদ্ধি পাশাপাশি বর্তমানে খামারিদের কি অবস্থা জানতে চাইলে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, পোলট্রি শিল্প নিয়ে চারটি নীতিমালা থাকলেও একটিও বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অবহেলায় আজ পোলট্রি শিল্প ধ্বংসের পথে। অধিদপ্তর করপোরেটদের সবসময় সহযোগিতা করছে অথচ প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব অনেক। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্ব এ শিল্পকে রক্ষা করা। প্রাণিসম্পদের সহযোগিতায় করপোরেটরা আরো বড় হচ্ছে আর প্রান্তিক খামারি দিন দিন কমে যাচ্ছে। সরকার সব সুযোগ-সুবিধা দিলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা অবহেলিত। প্রান্তিক খামারিদের কথা চিন্তা করে হলেও সরকারের উচিত এ ব্যবসায় সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে করে প্রান্তিক খামারিরা বড় লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পান এবং এ ব্যবসায় তারা টিকে থাকতে পারেন।

পোল্ট্রি শিল্পের খাদ্যের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত দামের বিষয়ে জানতে চাইলে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (এফআইএবি) সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, কোভিড মহামারির ধকল যখন কিছুটা সহনীয় হতে শুরু করেছে ঠিক তখনই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ফিড তৈরির কাঁচামালের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। যেহেতু ফিড তৈরির অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল ভুট্টা, সয়াবিনসহ অধিকাংশ উপকরণই আমদানি-নির্ভর তাই কাঁচামালের দর বৃদ্ধি ছাড়াও জাহাজ ভাড়া ও ডলারের দর বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচে কোনভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বজুড়েই একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোও রপ্তানিতে মাঝে মধ্যেই রাশ টেনে ধরছেন। তাই নিজেদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগী হতে হবে; ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাষি ও খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) গত বছরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে মুরগির খামার আছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার। করোনার আগে ছিল ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশে প্রতিদিন ৪ কোটির বেশি ডিম ও ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদিত হয়। পোলট্রিশিল্পের বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার।