০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিএনপির কার্যক্রম-২

অনিশ্চয়তায় বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল

❖ বিশেষ ক্ষমতাবলে বিদেশে বসেই কমিটি পুনর্গঠন করছেন তারেক
❖ ভেঙে দেয়া হচ্ছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ দলটির বিভিন্ন কমিটি
❖ তরুণদের পদোন্নতি ও সিনিয়রদের বসানো হচ্ছে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে
❖ পর্যায়ক্রমে তৃণমূল পর্যন্ত সব কমিটি ঢেলে সাজানোর টার্গেট

দীর্ঘদিন রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপি যেন অনেকটাই অনিশ্চিত গন্তব্যে চলছে। নানা কারণে দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা ও অস্থিরতা। বিশেষ করে গত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে দলের স্বাভাবিক গতি অনেকটাই থমকে গেছে। ওই নির্বাচন ঠেকানোসহ আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। ধীরে ধীরে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে চলছে নানা তৎপরতা। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি শুরু হয়েছে দল পুনর্গঠন কাজ। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে অনুষ্ঠিত হয়েছে মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচি। এর সঙ্গে আরও অন্য ইস্যু জুড়ে নতুন নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে তৎপর হওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি। এক্ষেত্রে বিগত যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদেরও চাঙ্গা করা হচ্ছে।
এদিকে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার অংশ হিসেবে দল গোছানোর কাজও চালাচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে কাউন্সিল ছাড়াই দীর্ঘ ৫ বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। এতে নতুন জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠান নিয়ে সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। একের পর এক ভেঙে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিও। সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলে সাবেক রাষ্ট্রদূতসহ তিনজনকে নতুন করে স্থান দেয়া হয়েছে। দলীয় কার্যক্রম জোরদার ও ভবিষ্যৎ আন্দোলন কর্মসূচিকে সামনে রেখেই এ পুনর্গঠন চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এতে একদিকে যেমন নানা ব্যর্থতার কারণে সিনিয়র নেতাদেরকে বর্তমান পদ থেকে সরিয়ে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হচ্ছে, তেমননি অনেক তরুণ নেতাকে আবার পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট নেতা ও তাদের অনুসারীদের মাঝে বেশ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রের ধারবাহিকতায় তৃণমূলের বিভিন্ন কমিটিও একইভাবে ভেঙে দেয়া হবে। দলটির স্থায়ী কমিটির শূন্যপদগুলোও পূরণ করা হতে পারে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পদে রদবদল করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে দলের মহাসচিব পদেও পরিবর্তনের গুঞ্জন চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাউন্সিল করার পরিবেশ না থাকায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিশেষ ক্ষমতাবলে এসব কমিটি পুনর্গঠন করা হচ্ছে বলেও দলটি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান সবুজ বাংলাকে বলেন, পুনর্গঠন কাজ দলের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। তবে সম্প্রতি যে বড় ধরনের রদবদল করা হচ্ছে, অনেকেই মূল্যায়িত হচ্ছেন। এই পুনর্গঠনে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে কারও অসন্তোষের কোনো কারণ নেই। বর্তমানে কাউন্সিল করার পরিবেশ নেই দাবি করে এই নেতা বলেন, আমরা কাউন্সিলের জন্য প্রস্তুত। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ কাউন্সিল করা যাচ্ছে না। এজন্য দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পুনর্গঠন কাজ করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকার পতনের আন্দোলনের ব্যর্থতার অভিযোগ এনে দলটির বিভিন্ন স্তরে এবং অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটি ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি বৈঠকে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের বিষয়েও আলোচনা হয়। এরই প্রেক্ষিতে কমিটিগুলো বিলুপ্ত ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে রদবদল করার সিদ্ধান্ত হয়। এর অংশ হিসেবেই বিভিন্ন কমিটি বিলুপ্ত, পুনর্গঠন বা রদবদল করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাকি শূন্যপদগুলোও সামনে পূরণ করা হবে। পাশাপাশি সদ্য বিলুপ্ত হওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং যুবদলের কমিটিও শিগগিরই দেয়া হবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে আরও রদবদল হবে কি না, সেটা দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবেন। দলের গঠনতন্ত্রেও সেই নিয়ম রয়েছে।
সূত্রমতে, দীর্ঘ আট বছর আগে ২০১৬ সালের মার্চে বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে। কিন্তু সেটা আট বছরেও হয়নি। অর্থাৎ বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ প্রায় ৫ বছর আগেই শেষ হয়েছে। নতুন কাউন্সিল না হলেও মাঝে মাঝে শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বড় রদবদল শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা কমিটিগুলো এবং অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠন করা হবে। এরপর পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে কাউন্সিল করার কথা ভাবছে দলটি। এদিকে চলমান পুনর্গঠন পর্বে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান করে নতুন করে ‘চেয়ারপারসন ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটি’ এবং ‘স্পেশাল অ্যাসিসট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপার্সনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।।
এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, কাউন্সিলের জন্য আমরা কাজ করছি এবং চেষ্টাও করেছি। কিন্তু জাতীয় কাউন্সিলের আগে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো গঠন করতে হবে। এটা না হলে তো কাউন্সিল করা যাবে না। যেটা সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে হয়নি, এক জায়গায় আমরা একত্রিত হতে পারি নাই। পরিবেশ ও পরিস্থিতি হলে অবশ্যই কাউন্সিলে হবে।
গত ১৫ জুন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৪৫টি পদে রদবদল করা হয়। একই দিন বিদেশ বিষয়ক দুটি (চেয়ারপার্সনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স এডভাইজরি কমিটি এবং স্পেশাল এসিস্ট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপার্সনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স এডভাইজরি) কমিটি গঠন হয়। এতে প্রধান করা হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। এদিনই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫৭ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটিও ঘোষণা করা হয় এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেলকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক থেকে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে গত ১৩ জুন সরকার পতনের একদফার আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর বিএনপির চারটি আহ্বায়ক কমিটি এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। একই দিন ছাত্রদলের ঢাকা মহানগরের চারটি কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়। যেকোনো সময় যুবদল, ঢাকা মহানগর ছাত্রদলসহ বিএনপির চার ইউনিটে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সম্প্রতি যুগ্ম মহাসচিব থেকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য হওয়া অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার সবুজ বাংলাকে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরে দাঁড়াতে দল পুনর্গঠনের বিকল্প নেই। আর সেই পুনর্গঠনের কাজই করছে বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক এবিএমএ রাজ্জাক দল গঠনের বর্তমান কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন পুরানো কমিটি ভেঙে যেভাবে নতুন কমিটি করা হচ্ছে, তাতে ভালো কাজ হবে। দলের ত্যাগী ও সক্রিয় কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে বলে আশা করি। বিগত আন্দোলনে অনেক বড় বড় নেতা রাজপথে ছিল না, এখন মাঠপর্যায়ের নেতাদের মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। ঢাকা মহানগরে আমিনুল হকের মতো ত্যাগী নেতার প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গুলি খেয়েও আন্দোলনে-নেতৃত্বে টিকে আছেন আমিনুল। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতেও মাঠে আন্দোলনে নেতৃত্বের যোগ্যদের স্থান দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিএনপির কার্যক্রম-২

অনিশ্চয়তায় বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল

আপডেট সময় : ০৭:৪২:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪

❖ বিশেষ ক্ষমতাবলে বিদেশে বসেই কমিটি পুনর্গঠন করছেন তারেক
❖ ভেঙে দেয়া হচ্ছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ দলটির বিভিন্ন কমিটি
❖ তরুণদের পদোন্নতি ও সিনিয়রদের বসানো হচ্ছে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে
❖ পর্যায়ক্রমে তৃণমূল পর্যন্ত সব কমিটি ঢেলে সাজানোর টার্গেট

দীর্ঘদিন রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপি যেন অনেকটাই অনিশ্চিত গন্তব্যে চলছে। নানা কারণে দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা ও অস্থিরতা। বিশেষ করে গত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে দলের স্বাভাবিক গতি অনেকটাই থমকে গেছে। ওই নির্বাচন ঠেকানোসহ আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। ধীরে ধীরে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে চলছে নানা তৎপরতা। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি শুরু হয়েছে দল পুনর্গঠন কাজ। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে অনুষ্ঠিত হয়েছে মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচি। এর সঙ্গে আরও অন্য ইস্যু জুড়ে নতুন নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে তৎপর হওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি। এক্ষেত্রে বিগত যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদেরও চাঙ্গা করা হচ্ছে।
এদিকে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার অংশ হিসেবে দল গোছানোর কাজও চালাচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে কাউন্সিল ছাড়াই দীর্ঘ ৫ বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। এতে নতুন জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠান নিয়ে সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। একের পর এক ভেঙে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিও। সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলে সাবেক রাষ্ট্রদূতসহ তিনজনকে নতুন করে স্থান দেয়া হয়েছে। দলীয় কার্যক্রম জোরদার ও ভবিষ্যৎ আন্দোলন কর্মসূচিকে সামনে রেখেই এ পুনর্গঠন চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এতে একদিকে যেমন নানা ব্যর্থতার কারণে সিনিয়র নেতাদেরকে বর্তমান পদ থেকে সরিয়ে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হচ্ছে, তেমননি অনেক তরুণ নেতাকে আবার পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট নেতা ও তাদের অনুসারীদের মাঝে বেশ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রের ধারবাহিকতায় তৃণমূলের বিভিন্ন কমিটিও একইভাবে ভেঙে দেয়া হবে। দলটির স্থায়ী কমিটির শূন্যপদগুলোও পূরণ করা হতে পারে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পদে রদবদল করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে দলের মহাসচিব পদেও পরিবর্তনের গুঞ্জন চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাউন্সিল করার পরিবেশ না থাকায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিশেষ ক্ষমতাবলে এসব কমিটি পুনর্গঠন করা হচ্ছে বলেও দলটি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান সবুজ বাংলাকে বলেন, পুনর্গঠন কাজ দলের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। তবে সম্প্রতি যে বড় ধরনের রদবদল করা হচ্ছে, অনেকেই মূল্যায়িত হচ্ছেন। এই পুনর্গঠনে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে কারও অসন্তোষের কোনো কারণ নেই। বর্তমানে কাউন্সিল করার পরিবেশ নেই দাবি করে এই নেতা বলেন, আমরা কাউন্সিলের জন্য প্রস্তুত। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ কাউন্সিল করা যাচ্ছে না। এজন্য দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পুনর্গঠন কাজ করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকার পতনের আন্দোলনের ব্যর্থতার অভিযোগ এনে দলটির বিভিন্ন স্তরে এবং অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটি ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি বৈঠকে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের বিষয়েও আলোচনা হয়। এরই প্রেক্ষিতে কমিটিগুলো বিলুপ্ত ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে রদবদল করার সিদ্ধান্ত হয়। এর অংশ হিসেবেই বিভিন্ন কমিটি বিলুপ্ত, পুনর্গঠন বা রদবদল করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাকি শূন্যপদগুলোও সামনে পূরণ করা হবে। পাশাপাশি সদ্য বিলুপ্ত হওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং যুবদলের কমিটিও শিগগিরই দেয়া হবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে আরও রদবদল হবে কি না, সেটা দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবেন। দলের গঠনতন্ত্রেও সেই নিয়ম রয়েছে।
সূত্রমতে, দীর্ঘ আট বছর আগে ২০১৬ সালের মার্চে বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে। কিন্তু সেটা আট বছরেও হয়নি। অর্থাৎ বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ প্রায় ৫ বছর আগেই শেষ হয়েছে। নতুন কাউন্সিল না হলেও মাঝে মাঝে শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বড় রদবদল শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা কমিটিগুলো এবং অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠন করা হবে। এরপর পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে কাউন্সিল করার কথা ভাবছে দলটি। এদিকে চলমান পুনর্গঠন পর্বে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান করে নতুন করে ‘চেয়ারপারসন ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটি’ এবং ‘স্পেশাল অ্যাসিসট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপার্সনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।।
এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, কাউন্সিলের জন্য আমরা কাজ করছি এবং চেষ্টাও করেছি। কিন্তু জাতীয় কাউন্সিলের আগে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো গঠন করতে হবে। এটা না হলে তো কাউন্সিল করা যাবে না। যেটা সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে হয়নি, এক জায়গায় আমরা একত্রিত হতে পারি নাই। পরিবেশ ও পরিস্থিতি হলে অবশ্যই কাউন্সিলে হবে।
গত ১৫ জুন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৪৫টি পদে রদবদল করা হয়। একই দিন বিদেশ বিষয়ক দুটি (চেয়ারপার্সনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স এডভাইজরি কমিটি এবং স্পেশাল এসিস্ট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপার্সনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স এডভাইজরি) কমিটি গঠন হয়। এতে প্রধান করা হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। এদিনই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫৭ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটিও ঘোষণা করা হয় এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেলকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক থেকে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে গত ১৩ জুন সরকার পতনের একদফার আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর বিএনপির চারটি আহ্বায়ক কমিটি এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। একই দিন ছাত্রদলের ঢাকা মহানগরের চারটি কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়। যেকোনো সময় যুবদল, ঢাকা মহানগর ছাত্রদলসহ বিএনপির চার ইউনিটে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সম্প্রতি যুগ্ম মহাসচিব থেকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য হওয়া অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার সবুজ বাংলাকে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরে দাঁড়াতে দল পুনর্গঠনের বিকল্প নেই। আর সেই পুনর্গঠনের কাজই করছে বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক এবিএমএ রাজ্জাক দল গঠনের বর্তমান কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন পুরানো কমিটি ভেঙে যেভাবে নতুন কমিটি করা হচ্ছে, তাতে ভালো কাজ হবে। দলের ত্যাগী ও সক্রিয় কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে বলে আশা করি। বিগত আন্দোলনে অনেক বড় বড় নেতা রাজপথে ছিল না, এখন মাঠপর্যায়ের নেতাদের মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। ঢাকা মহানগরে আমিনুল হকের মতো ত্যাগী নেতার প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গুলি খেয়েও আন্দোলনে-নেতৃত্বে টিকে আছেন আমিনুল। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতেও মাঠে আন্দোলনে নেতৃত্বের যোগ্যদের স্থান দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।