◉ ঐতিহাসিক জয়ের আশায় অতি ডানপন্থিদের
◉ কার্যত রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টির সম্ভাবনা
◉ কট্টর ডানপন্থিদের উত্থানে মাখোঁর অগ্নিপরীক্ষা
ফ্রান্সে আগাম সংসদীয় নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে যা চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফার এই ভোটে কট্টর ডানপন্থিরা ঐতিহাসিক বিজয়ের আশা করলেও রাজনৈতিক অচলাবস্থার সম্ভাবনাই বেশি মনে হচ্ছে। ফরাসি জনগণ তাদের চলতি বছরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নির্বাচনগুলোর মধ্যে একটিতে ভোট দেবে, এই নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়ের আশায় রয়েছে অতি ডানপন্থিরা, কিন্তু কার্যত দেশটিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি। এই প্রথম মেরিন লে পেন এবং জর্ডান বারডেলার অভিবাসন বিরোধী ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) দেশটিতে সরকার পরিচালনা এবং জাতীয় পরিষদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বাস্তবসম্মত সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু গত রোববারের আগাম সেই পার্লামেন্ট নির্বাচনে আএন-এর প্রথম রাউন্ডের বিজয়ের পর শত শত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অন্যদেরকে অতি ডানপন্থিদের পরাজিত করার আরও ভালো সুযোগ দিতে নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।
এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির রাজনীতিতে নতুন একটি সমীকরণ যুক্ত হতে পারে। কেননা ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের ভোটে ডানপন্থি দলের উত্থানে কিছুট হলেও শঙ্কিত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। সেই শঙ্কা থেকেই হয়ত তিনি তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তার এই সিদ্ধান্ত যে তার জন্য মঙ্গল বয়ে আনেনি সেটা নির্বাচনের প্রথম ধাপেই বিশ্ব জেনে গিয়েছে। প্রথম দফার ভোটে ৩৩ শতাংশ ভোট নিয়ে এগিয়ে আছে ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র্যালি (এনআর)। বুথ ফেরত বিভিন্ন জরিপের পূর্বাভাসেও এবার ফ্রান্সে ডানপন্থী দল এনআর-এর বিজয়ের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে ম্যাক্রনের দল ২১ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। তবে এবারের নির্বাচনে কোনো দলেরই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দল গঠনের সম্ভাবনা নেই। জরিপের পূর্বাভাসে দেশটিতে এবার ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, যদি দেশটিতে এমন ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠিত হয় তাহলে দেশটিতে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। এছাড়া প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে যাতে তার কর্তৃত্বে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সমানভাবে যদি জাতীয়তাবাদী, ইউরোসেপটিক আরএন সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম হয় তাহলে ম্যাক্রনের ভরাডুবি হতে পারে। মেরি লা পেনের আরএন নির্বাচনের প্রথম ধাপে সাফল্য অর্জন করেছে। বলা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ফ্রান্সে এবারই প্রথম ডানপন্থী কোনো দলের উত্থানের আভাস বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ডানপন্থীদের উত্থান ঠেকাতে একজোট হয়েছে দেশটির মধ্যপন্থী ও বামপন্থী দলগুলো। এরফলে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে মেরি লা পেনের দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সম্ভাবনা খুবই কম। আরএন সর্বাধিক আসনে জয় পেলেও তারা সংসদে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হতে পারে বলে জরিপের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। ৫৭৭টি আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে এককভাবে ২৮৯টি আসনের প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে মেরি লা পেন এবং তার দলের ২৮ বছর বয়সী রাজনীতিক জর্ডান বারডেলা সেটা অর্জনে ব্যর্থ হবেন। তবে সংখ্যাগিরষ্ঠতা না পেলেও ফ্রান্সে ডানপন্থী রাজনীতির ধারা আরও শক্তিশালী করতে জোরালোভাবে কাজ করবে আরএন যা ম্যাক্রন এবং বামপন্থি দলগুলোর চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোটারদের জরিপের ফলাফল বিশ্বাস না করার আহ্বান জানিয়ে লা পেন বলেছেন, জরিপের ফলাফল কোনো বিজ্ঞান নয় যে সেটা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। সেক্ষেত্রে এখন দেখার বিষয় ফ্রান্সের জনগণ কোন দলকে বেছে নেয়। তারা কী আরএন নেতৃত্বাধীন ডানপন্থী জোটকে সমর্থন করবে নাকি তারা বামপন্থী দলগুলোসহ অন্যান্য দলগুলোকে সংসদে পাঠবে।
কট্টর ডানপন্থিদের উত্থানে মাখোঁর অগ্নিপরীক্ষা
এ দফায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। এতে ফ্রান্সের ক্ষমতায় যেতে পারেন কট্টর ডানপন্থিরা। এ জন্য মাখোঁর জন্য দ্বিতীয় দফার ভোট এক অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে ফ্রান্স ও ইউরোপীয় রাজনীতি বিষয়ের অধ্যাপক ফিলিপ মারলিয়ার বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত নাটকীয় ও গুরুতর হতে যাচ্ছে। আরএন যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, সেই চেষ্টাই চলছে। ইউনিভার্সিটি টুলুস ক্যাপিটলের তুলনামূলক আইনের ফরাসি গবেষক রিম-সারাহ আলাউন বলেন, আমরা কখনোই আর বিদেশ-আতঙ্ক, বর্ণবাদের ওপর অর্থায়নকারী ও নাৎসি সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে এমন গোষ্ঠীর ক্ষমতায় আসার এতটা সম্ভাবনা দেখিনি। এই দ্বিতীয় দফার ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি আগামী কয়েক বছরের জন্য এদেশের দিকনির্দেশনা দেবে। এটা বলাটা অতিরঞ্জিত হবে না, আমাদের প্রজাতন্ত্রের ভিত্তিটি খুব নড়বড়ে মাটিতে রয়েছে। অতি ডানপন্থিরা কোনো সাধারণ দল নয়। আপনি যখন ডানদিকে ক্ষমতা দেন, আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন না, তারা কখন তা ফিরিয়ে দেবে। আরএন পার্টি যদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তাহলে লেপেনের অনুসারী জর্ডান বারদেল্লা ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী হতেপারেন। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা বারদেল্লাকে ভোট দিচ্ছেন। তাদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। ব্রিটানির ফরাসি-হাঙ্গেরিয়ান ইংরেজি সাহিত্য ও অনুবাদের অধ্যাপক ড্যানিয়েল সাজাবো বলেন, মানুষ প্রার্থীকেও ভোট দিচ্ছে না। তারা বারদেল্লাকে প্রধানমন্ত্রী করতে ভোট দিচ্ছে।

























