➤ যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস
➤ প্রথম মুসলিম নারী আইনমন্ত্রী পেল যুক্তরাজ্য
সদ্য বিদায় নেওয়া প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনা বাতিল ঘোষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তিনি। স্টারমার বলেন, শুরু হওয়ার আগেই রুয়ান্ডা নীতির মৃত্যু ও সমাধি হয়েছে। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আটকাতে এটি কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ ছিল না। যে পরিকল্পনা কোনো কাজে আসে না, সে ধরনের কৌশল আমি চালু রাখব না। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি এমন কৌশল চালিয়ে যেতে প্রস্তুত নই, যেগুলো প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে না। পরিকল্পনাটিকে আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করছি। যেসব অভিবাসনপ্রত্যাশী ছোট নৌকায় করে আসেন, তাদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর সম্ভাবনা মাত্র ১ শতাংশ। আর এ বিষয়টি মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটগুলো খুব ভালো করেই জানে। তাই তারা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে ইউরোপে নিয়ে আসা অব্যাহতই রেখেছে।
ইংলিশ চ্যানেল হয়ে নৌকায় করে যারা অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন, তাদের মধ্য থেকে কিছুসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনা হিসেবে ২০২২ সালের এপ্রিলে রুয়ান্ডার সঙ্গে যুক্তরাজ্য সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী পাঁচ বছরে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জায়গা দেবে রুয়ান্ডা। বিনিময়ে রুয়ান্ডাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সহায়তা দেবে ব্রিটিশ সরকার। পাশাপাশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পুনর্বাসন বাবদ বাড়তি অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। মে মাস থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আটকে ধরপাকড় শুরু হয়।
২০২২ সালের জুনে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে প্রথম ফ্লাইটটি রওনা করার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের এক আদেশে তা বাতিল হয়ে যায়। পরের বছরের নভেম্বরে এ ধরনের পরিকল্পনাকে অবৈধ ঘোষণা করে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট। তবে ঋষি সুনাক এটি কার্যকর করার চেষ্টা করে যেতে থাকেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রুয়ান্ডা বিল উত্থাপনের পর এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে বিরোধী দলগুলো। এ নিয়ে অনেক দিন ধরে পার্লামেন্টে তর্ক-বিতর্ক চলার পর চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেন। এর আগে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল মানবিক দিক বিবেচনা করলে রুয়ান্ডা পরিকল্পনা একটি অবৈধ পরিকল্পনা। কিন্তু আদালতকে টপকে ঋষি সুনাক পার্লামেন্টে আইনটি পাস করান।
প্রথম নারী মুসলিম আইনমন্ত্রী পেল যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের নতুন মন্ত্রিসভায় আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ে প্রথমবারের মতো দায়িত্ব পেয়েছেন একজন মুসলিম নারী। জানা গেছে, নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুক্রবার থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন কিয়ার স্টারমার। এরপরই মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা শুরু করেন তিনি। এতে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন শাবানা মাহমুদ নামের এক মুসলিম নারী। যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী মুসলিম বিচারমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। শাবানা মাহমুদের জন্ম বার্মিংহামে। তিনি পাকিস্তানশাসিত আজাদ কাশ্মীর বংশোদ্ভূত। তার বাবা-মা কাশ্মীরের মিরপুরের বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের তায়েফে কাটিয়েছেন শাবানা। প্রথম অব্রিটিশ মুসলিম নারী হিসেবে ২০১০ সালে হাউস অব কমন্সে নির্বাচিত হন শাবানা। একই বছরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলি ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ইয়াসমিন কুরেশি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। শাবানা মাহমুদ কেবল প্রথম নারী মুসলিম বিচারমন্ত্রীই নন, তিনি দেশটির ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী যিনি লর্ড অব চ্যান্সেলর নামক প্রাচীন পদটিও গ্রহণ করেছেন। এর আগে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শাবানা। ২০১৬ সাল তিনি লেবার পার্টির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন তিনি। এদিকে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টির নিরঙ্কুশ জয়ের পর দেশটির নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন র্যাচেল রিভস। দেশটির নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে গতকাল তার নাম ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। এর মধ্য দিয়ে ইতিহাস গড়েছেন র্যাচেল। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হয়েছেন তিনি।


























