০৪:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ওএমএস ও টিসিবিতে অনিয়ম

সুবিধা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ

◉ টিসিবির চাল-আটা খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ
◉ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কোটি টাকা হাতাচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র
◉ নির্ধারিত পণ্য থেকেও পরিমাণে কম পাচ্ছেন ক্রেতারা
◉ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ
◉ দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য পাচ্ছেন না অনেকে
◉ স্থানীয় প্রভাবশালীদের সচ্ছল আত্মীয়স্বজনরা পাচ্ছেন কার্ড

❖ বাজার তদারকি জোরদার করে অসাধুদের আইনের আওতায় আনা দরকার- গোলাম রহমান, সভাপতি, ক্যাব

লাগামহীন নিত্যপণ্যের দামে দিশাহারা সাধারণ মানুষ। হু হু করে বেড়েই চলছে প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোও বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ। সরকার বিভিন্ন পণ্যে দাম নির্ধারণ করে দিলেও খুচরা বাজারে সুফল নেই। ভোক্তাকে উচ্চমূল্যেই কেনাকাটা করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতে অসহায়-দরিদ্রদের দেয়ালে পিঠ ঠেকার অবস্থা। এসব অসহায়-দরিদ্রদের সুবিধার জন্য টিসিবি কার্ডের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
টিসিবি সূত্র জানায়, দেশের এক কোটি পরিবারকে টিসিবির আওতায় নেওয়া হয়েছে। ফলে এই কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। কিন্তু টিসিবির এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এই নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। বলা হচ্ছে, টিসিবির এই কার্যক্রমে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসবে কি? নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকারের এই মহতী উদ্যোগের প্রশংসা করেছিল সবাই। কিন্তু সরকারের এই মহতী উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন বিষয় প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দ চাল-আটা ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি না করে খোলাবাজারে বেশি দামে বিক্রি করছেন ডিলাররা। তাদের এ কাজে সহায়তা করছেন তদারকির দায়িত্বে বেশকিছু সিন্ডিকেট। পরস্পর যোগসাজশে গরিবের অন্ন আত্মসাৎ করে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।
জানা যায়, সরকারের টিসিবি পণ্য বিক্রি এবং ওএমএস কর্মসূচিতে বিভিন্ন রকম অনিয়ম হচ্ছে। পরিমাণে কম যেমন দেওয়া হচ্ছে; তেমনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হচ্ছে গরিবের খাবার। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য পাচ্ছেন না অনেকে। কার্ড বিতরণেও জনপ্রতিনিধিরা টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগও করেছেন অনেকে। একইভাবে দুস্থদের না দিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের সচ্ছল আত্মীয়স্বজনকে কার্ড দিচ্ছেন। শুধু খাদ্যশস্যের বিক্রেতাদের ডিলার নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সিন্ডিকেট করে পণ্য বিক্রি করছেন অনেকে।
সূত্র মতে, গরিব মানুষ যাতে সহজে খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য খোলা বাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রির (ওপেন মার্কেট সেল, ওএমএস) কর্মসূচি চালু রয়েছে। একই উদ্দেশ্যে সরকারের টিসিবি (ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ) সাশ্রয়ী দামে খাদ্যপণ্য বিক্রি করছে। উভয় কর্মসূচি ডিলারদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কিন্তু ডিলাররা তাদের বরাদ্দের পুরোটা কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেন না; পরে সাধারণ বাজারে বেশি দামে বিক্রি করেন। আর সেখানে ভাগ বসাচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সেখানে সরকারের খাদ্যপরিদর্শক অবৈধ সুবিধা নিয়ে চুপ থাকছেন।
বেশ কয়েকজন ডিলারের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, ভোর থেকে লাইনে দাঁড়ানোর পরও কোনো ডিলার সকাল ১০টায়, কেউ বা সাড়ে ১০টায় বিক্রি শুরু করেন। এরপর যারা পরিচিত তাদের কাছে লাইন ছাড়াই পণ্য বিক্রি করেন। কারও কারও জন্য বস্তায় ভরে আলাদা করে পণ্য রেখে দেন। এ কারণে তিন-চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে চাল-আটা পান না। আবার একজনের কাছে পাঁচ কেজি বিক্রির নিয়ম থাকলেও কখনও তিন কেজি, কখনও দুই কেজি বিক্রি করছেন। ক্রেতাদের চাল-আটা দুটোই দিচ্ছেন না ডিলাররা। অধিকাংশ ডিলার যাকে চাল দেন তাকে আটা দেন না। প্রতিদিন প্রতিটি দোকান থেকে এক মেট্রিক টন (৫০ কেজির ২০ বস্তা) আটা বরাদ্দ থাকলেও ৮-১০ বস্তার বেশি কেউ বিক্রি করেন না। আবার অনেকে আটা বিক্রিই করেন না।
রাজধানীর মালিবাগ এলাকার মেসার্স ইলিয়াছ ট্রেডার্স ডিলার, পুরান ঢাকার বকশিবাজার এলাকার এস এম ব্রাদার্স ডিলার পয়েন্টে এমন চিত্র দেখা গেছে। জানতে চাইলে মেসার্স হারুন স্টোরের মালিক মো. হারুন বলেন, চালের সঙ্গে আমরা আটাও বিক্রি করি। প্রয়োজনে আপনি দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে পারেন। তিনি কোনো অনিয়ম করেন না বলে দাবি করেন। অথচ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেছে, একজন ক্রেতা চাল-আটা দুটোই পাঁচ কেজি করে কিনতে চাইলেও তার কাছে শুধু তিন কেজি চাল বিক্রি করা হয়। বিষয়টি উল্লেখ করলে ডিলার হারুন কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
কার্ডধারীরা অভিযোগ করেন, একাধিকবার ডিলার পয়েন্টে যোগাযোগ করেও পণ্য পাচ্ছেন না তারা। একাধিক কার্ডধারী জানিয়েছেন, প্রায় সময় ডিলার পয়েন্টে গিয়ে তারা পণ্য পাননি। ডিলাররা কখনও বলেন তেল এখনও আসেনি আবার কখনও বলেন এখনও ডাল আসেনি। এমন নানা কথা বলে প্রায়ই ক্রেতাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে কার্ডধারীরা জানান।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে কথা হয় দিনমজুর মো. আজিম উল্লার্হ সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মালামাল বহন করে ৪৫০-৫০০ টাকা আয় করেছি। এই টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি। কিন্তু বাজারে সবকিছুর দাম অনেক বেশি। তাই কী দিয়ে কী কিনব তা ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। আগের চেয়ে ডাল, ডিম, আলুসহ সবকিছুর দাম এখন বেশি। অথচ এগুলো দিয়ে আগে দুইবেলা পার করতাম। তিনি বলেন, যে টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি তা দিয়ে এগুলো এখন কীভাবে কিনব; সেটাই ভাবছি। আমাদের এই বোবাকান্না কেউ শোনে না। এখন বাধ্য হয়ে এই টাকার মধ্যে টিসিবির পণ্য চাল, ডাল ও তেল কিনব। মাছ-মাংস আমাদের ভাগ্যে নেই। চাল-আটার কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, ওএমএসের চালের দাম প্রতিকেজি ৩০ টাকা। খোলাবাজারে ওই চাল বিক্রি করা যায় ৬০ টাকা কেজিতে। আর ওএমএসের যে আটা ২৪ টাকায় বিক্রি হয়, খোলাবাজারে তা ৬০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এ জন্য অনেক ডিলার নিয়ম ভেঙে চাল-আটা খোলাবাজারে ছেড়ে দেন।
এ ব্যাপারে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই নিম্ন আয়ের মানুষ কষ্টের মধ্যে আছে। এর মধ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একাধিক পণ্যের দাম হু-হু করে বাড়ছে। এতে উচ্চশ্রেণির মানুষের ভোগান্তি না হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে নিম্নআয়ের মানুষ। যারা তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেন, পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় তা দিয়ে তাদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ফলে কেনার সময় অনেকে পরিমাণে কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে; বাজার তদারকি জোরদার করে অসাধুদের আইনের আওতায় আনা।

জনপ্রিয় সংবাদ

ওএমএস ও টিসিবিতে অনিয়ম

সুবিধা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ

আপডেট সময় : ০৭:৫৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪

◉ টিসিবির চাল-আটা খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ
◉ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কোটি টাকা হাতাচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র
◉ নির্ধারিত পণ্য থেকেও পরিমাণে কম পাচ্ছেন ক্রেতারা
◉ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ
◉ দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য পাচ্ছেন না অনেকে
◉ স্থানীয় প্রভাবশালীদের সচ্ছল আত্মীয়স্বজনরা পাচ্ছেন কার্ড

❖ বাজার তদারকি জোরদার করে অসাধুদের আইনের আওতায় আনা দরকার- গোলাম রহমান, সভাপতি, ক্যাব

লাগামহীন নিত্যপণ্যের দামে দিশাহারা সাধারণ মানুষ। হু হু করে বেড়েই চলছে প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোও বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ। সরকার বিভিন্ন পণ্যে দাম নির্ধারণ করে দিলেও খুচরা বাজারে সুফল নেই। ভোক্তাকে উচ্চমূল্যেই কেনাকাটা করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতে অসহায়-দরিদ্রদের দেয়ালে পিঠ ঠেকার অবস্থা। এসব অসহায়-দরিদ্রদের সুবিধার জন্য টিসিবি কার্ডের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
টিসিবি সূত্র জানায়, দেশের এক কোটি পরিবারকে টিসিবির আওতায় নেওয়া হয়েছে। ফলে এই কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। কিন্তু টিসিবির এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এই নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। বলা হচ্ছে, টিসিবির এই কার্যক্রমে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসবে কি? নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকারের এই মহতী উদ্যোগের প্রশংসা করেছিল সবাই। কিন্তু সরকারের এই মহতী উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন বিষয় প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দ চাল-আটা ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি না করে খোলাবাজারে বেশি দামে বিক্রি করছেন ডিলাররা। তাদের এ কাজে সহায়তা করছেন তদারকির দায়িত্বে বেশকিছু সিন্ডিকেট। পরস্পর যোগসাজশে গরিবের অন্ন আত্মসাৎ করে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।
জানা যায়, সরকারের টিসিবি পণ্য বিক্রি এবং ওএমএস কর্মসূচিতে বিভিন্ন রকম অনিয়ম হচ্ছে। পরিমাণে কম যেমন দেওয়া হচ্ছে; তেমনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হচ্ছে গরিবের খাবার। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য পাচ্ছেন না অনেকে। কার্ড বিতরণেও জনপ্রতিনিধিরা টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগও করেছেন অনেকে। একইভাবে দুস্থদের না দিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের সচ্ছল আত্মীয়স্বজনকে কার্ড দিচ্ছেন। শুধু খাদ্যশস্যের বিক্রেতাদের ডিলার নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সিন্ডিকেট করে পণ্য বিক্রি করছেন অনেকে।
সূত্র মতে, গরিব মানুষ যাতে সহজে খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য খোলা বাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রির (ওপেন মার্কেট সেল, ওএমএস) কর্মসূচি চালু রয়েছে। একই উদ্দেশ্যে সরকারের টিসিবি (ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ) সাশ্রয়ী দামে খাদ্যপণ্য বিক্রি করছে। উভয় কর্মসূচি ডিলারদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কিন্তু ডিলাররা তাদের বরাদ্দের পুরোটা কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেন না; পরে সাধারণ বাজারে বেশি দামে বিক্রি করেন। আর সেখানে ভাগ বসাচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সেখানে সরকারের খাদ্যপরিদর্শক অবৈধ সুবিধা নিয়ে চুপ থাকছেন।
বেশ কয়েকজন ডিলারের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, ভোর থেকে লাইনে দাঁড়ানোর পরও কোনো ডিলার সকাল ১০টায়, কেউ বা সাড়ে ১০টায় বিক্রি শুরু করেন। এরপর যারা পরিচিত তাদের কাছে লাইন ছাড়াই পণ্য বিক্রি করেন। কারও কারও জন্য বস্তায় ভরে আলাদা করে পণ্য রেখে দেন। এ কারণে তিন-চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে চাল-আটা পান না। আবার একজনের কাছে পাঁচ কেজি বিক্রির নিয়ম থাকলেও কখনও তিন কেজি, কখনও দুই কেজি বিক্রি করছেন। ক্রেতাদের চাল-আটা দুটোই দিচ্ছেন না ডিলাররা। অধিকাংশ ডিলার যাকে চাল দেন তাকে আটা দেন না। প্রতিদিন প্রতিটি দোকান থেকে এক মেট্রিক টন (৫০ কেজির ২০ বস্তা) আটা বরাদ্দ থাকলেও ৮-১০ বস্তার বেশি কেউ বিক্রি করেন না। আবার অনেকে আটা বিক্রিই করেন না।
রাজধানীর মালিবাগ এলাকার মেসার্স ইলিয়াছ ট্রেডার্স ডিলার, পুরান ঢাকার বকশিবাজার এলাকার এস এম ব্রাদার্স ডিলার পয়েন্টে এমন চিত্র দেখা গেছে। জানতে চাইলে মেসার্স হারুন স্টোরের মালিক মো. হারুন বলেন, চালের সঙ্গে আমরা আটাও বিক্রি করি। প্রয়োজনে আপনি দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে পারেন। তিনি কোনো অনিয়ম করেন না বলে দাবি করেন। অথচ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেছে, একজন ক্রেতা চাল-আটা দুটোই পাঁচ কেজি করে কিনতে চাইলেও তার কাছে শুধু তিন কেজি চাল বিক্রি করা হয়। বিষয়টি উল্লেখ করলে ডিলার হারুন কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
কার্ডধারীরা অভিযোগ করেন, একাধিকবার ডিলার পয়েন্টে যোগাযোগ করেও পণ্য পাচ্ছেন না তারা। একাধিক কার্ডধারী জানিয়েছেন, প্রায় সময় ডিলার পয়েন্টে গিয়ে তারা পণ্য পাননি। ডিলাররা কখনও বলেন তেল এখনও আসেনি আবার কখনও বলেন এখনও ডাল আসেনি। এমন নানা কথা বলে প্রায়ই ক্রেতাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে কার্ডধারীরা জানান।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে কথা হয় দিনমজুর মো. আজিম উল্লার্হ সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মালামাল বহন করে ৪৫০-৫০০ টাকা আয় করেছি। এই টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি। কিন্তু বাজারে সবকিছুর দাম অনেক বেশি। তাই কী দিয়ে কী কিনব তা ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। আগের চেয়ে ডাল, ডিম, আলুসহ সবকিছুর দাম এখন বেশি। অথচ এগুলো দিয়ে আগে দুইবেলা পার করতাম। তিনি বলেন, যে টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি তা দিয়ে এগুলো এখন কীভাবে কিনব; সেটাই ভাবছি। আমাদের এই বোবাকান্না কেউ শোনে না। এখন বাধ্য হয়ে এই টাকার মধ্যে টিসিবির পণ্য চাল, ডাল ও তেল কিনব। মাছ-মাংস আমাদের ভাগ্যে নেই। চাল-আটার কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, ওএমএসের চালের দাম প্রতিকেজি ৩০ টাকা। খোলাবাজারে ওই চাল বিক্রি করা যায় ৬০ টাকা কেজিতে। আর ওএমএসের যে আটা ২৪ টাকায় বিক্রি হয়, খোলাবাজারে তা ৬০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এ জন্য অনেক ডিলার নিয়ম ভেঙে চাল-আটা খোলাবাজারে ছেড়ে দেন।
এ ব্যাপারে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই নিম্ন আয়ের মানুষ কষ্টের মধ্যে আছে। এর মধ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একাধিক পণ্যের দাম হু-হু করে বাড়ছে। এতে উচ্চশ্রেণির মানুষের ভোগান্তি না হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে নিম্নআয়ের মানুষ। যারা তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেন, পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় তা দিয়ে তাদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ফলে কেনার সময় অনেকে পরিমাণে কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে; বাজার তদারকি জোরদার করে অসাধুদের আইনের আওতায় আনা।