০৫:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বন্যায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি-প্রাণিসম্পদ

➤ ১৫ জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
➤ সিলেট বিভাগের কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭০০ কোটি
➤ ক্ষতিগ্রস্ত ২ লাখ ২ হাজার ১১৯ জন কৃষক
➤ ৫৭৯১ মেট্রিক টন মাছ এবং ৪৫৫ মেট্রিক টন মাছের পোনার ক্ষতি
➤ ক্ষতি পোষানো নিয়ে উৎকণ্ঠায় সংশ্লিষ্টরা

চলমান বন্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ও প্রাণিসম্পদ। সিলেট বিভাগে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। দেশের দুই লক্ষাধিক কৃষক এসব ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ ক্ষতি পোষানো নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলায় পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ১৫ জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। দেশের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা আছে। প্রতিমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী জেলাগুলো হলোÑ সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, গাইবান্ধা, ফেনী, রাঙামাটি, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট ও কক্সবাজার। তবে বন্যার পরিধি পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চলের লাখ লাখ বাসিন্দা এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দফায় দফায় সৃষ্ট বন্যার কারণে জনজীবনে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। পাশাপাশি বড় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ও মৎস্য খাত। সাধারণত গ্রামের মানুষ কৃষি কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এই বন্যার কারণে অনেকে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। যদি এই পরিস্থিতি চলমান থাকে তাহলে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা।

দেশের বিভিন্ন জেলার দফায় দফায় বন্যার আঘাতে উল্লেখ্য জেলাগুলো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি খাতে প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৬০৫ কোটি টাকার বেশি। আর মৎস্য খাতে প্রায় চার হাজার হেক্টর জলাশয়ে ১০৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২ লাখ ২ হাজার ১১৯ জন কৃষক। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন কৃষক রমজান বলেন, ‘আমি ৫ একর জমিতে ডাটা, করলা, ধুন্দল, ঝিঙ্গার চাষ করেছিলাম। পাহাড়ি ঢলে গ্রামের বাঁধ ভেঙে স্রোতের তোড়ে সব কিছু ভেসে যায়। এখন যে জমিতে আমি আমার কষ্টের ফসল চাষ করেছিলাম সেখানে কিছুই নেই কাদা ছাড়া।’

সিলেট বিভাগের চার জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সিলেট জেলার ২২ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ মে থেকে ৮ জুন পর্যন্ত প্রথম ধাপের বন্যায় নষ্ট হয় ৭ হাজার ৪৩ হেক্টর জমির ফসল। তাতে লোকসান হয় ১৪২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার। ১৪ জুন থেকে ২৪ জুন দ্বিতীয় ধাপের বন্যায় নষ্ট হয় ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল। এতে আর্থিক ক্ষতি হয় ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকার। সর্বশেষ ৩০ জুন থেকে তৃতীয় দফা বন্যায় ৪১২ হেক্টরের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে লোকসানের পরিমাণ ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকার। এই জেলায় তিন দফায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ২৭২ জন। মৌলভীবাজারে ৫ হাজার ৭৫৪.৩৫ হেক্টর জমির ফসলহানি হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১১৭ কোটি ২৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকার। এর মধ্যে সবজির জমি ৯৬৯.৬ হেক্টর, আউশ ধানের ৪ হাজার ৭৫৪.৭৫ হেক্টর আর ৩০ হেক্টর আউশ বীজতলার জমি।

মৎস্য খাতের ক্ষতি
মৎস্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, বন্যায় ৮৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা মূল্যের ৫ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন মাছ এবং ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা মূল্যের ৪৫৫ মেট্রিক টন মাছের পোনার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ১০ কোটি টাকার জাল ও সাত কোটি ২৪ লাখ টাকার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। মৎস্য খাতে শুধু সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলাতেই ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদরে ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ৭৯৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সারা জেলায় ১ হাজার ২২৪.৬৬ হেক্টর জুড়ে থাকা ৮ হাজার ২১টি পুকুর, দিঘি ও খামারের ৪ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন মাছ ও ১৮৫ মেট্রিক টন পোনা ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৭২ কোটি ১২ লাখ ৬ হাজার টাকা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা জিয়াপুর গ্রামের এনামুল হক সাতটি বড় পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন। এসব পুকুরে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ ছিল তার। এক রাতেই পানির তোড়ে ভেঙে যায় তার পুকুরগুলোর পাড়। ভেসে যায় সব মাছ। এরপর সিলেট জেলার ২ হাজার ৪৯৮ হেক্টরজুড়ে থাকা ১৫ হাজার ৭৪টি পুকুর, দীঘি ও খামারের ১ হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন মাছ ও ১৮১ মেট্রিক টন পোনা বন্যায় ভেসে গেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৯ কোটি ২৯ লাখ টাকার। মৎস্য খাতে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৮ কোটি টাকার, জকিগঞ্জে ৬ কোটি ২০ লাখ টাকার এবং কোম্পানীগঞ্জে ৩ কোটি ৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৌলভীবাজারে বন্যায় ১১৫ হেক্টরের ৭১৮টি পুকুর, দীঘি ও খামারের ২২৫ মেট্রিক টন মাছ ও ৮৯ মেট্রিক টন পোনা ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার। জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা শ্রীমঙ্গল। এখানে ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বড়লেখা উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামশুল করিম বলেন, ৮ হাজার পুকুর প্লাবিত হয়ে মাছ, পোনা ও অবকাঠামো মিলিয়ে ৭২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জলবায়ু সহনশীল মাছ চাষ প্রকল্প থেকে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মৎস্য অধিদপ্তর বিভাগের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বড় ক্ষতি হয়ে গেছে প্রথম দফা বন্যাতেই। মাছ, পোনা বা অবকাঠামো সব ক্ষেত্রেই। পরে সেটি আরো কিছুটা বেড়েছে।’

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেন রুমিন ফারহানা

বন্যায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি-প্রাণিসম্পদ

আপডেট সময় : ০৪:১৩:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪

➤ ১৫ জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
➤ সিলেট বিভাগের কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭০০ কোটি
➤ ক্ষতিগ্রস্ত ২ লাখ ২ হাজার ১১৯ জন কৃষক
➤ ৫৭৯১ মেট্রিক টন মাছ এবং ৪৫৫ মেট্রিক টন মাছের পোনার ক্ষতি
➤ ক্ষতি পোষানো নিয়ে উৎকণ্ঠায় সংশ্লিষ্টরা

চলমান বন্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ও প্রাণিসম্পদ। সিলেট বিভাগে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। দেশের দুই লক্ষাধিক কৃষক এসব ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ ক্ষতি পোষানো নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলায় পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ১৫ জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। দেশের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা আছে। প্রতিমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী জেলাগুলো হলোÑ সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, গাইবান্ধা, ফেনী, রাঙামাটি, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট ও কক্সবাজার। তবে বন্যার পরিধি পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চলের লাখ লাখ বাসিন্দা এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দফায় দফায় সৃষ্ট বন্যার কারণে জনজীবনে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। পাশাপাশি বড় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ও মৎস্য খাত। সাধারণত গ্রামের মানুষ কৃষি কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এই বন্যার কারণে অনেকে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। যদি এই পরিস্থিতি চলমান থাকে তাহলে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা।

দেশের বিভিন্ন জেলার দফায় দফায় বন্যার আঘাতে উল্লেখ্য জেলাগুলো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি খাতে প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৬০৫ কোটি টাকার বেশি। আর মৎস্য খাতে প্রায় চার হাজার হেক্টর জলাশয়ে ১০৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২ লাখ ২ হাজার ১১৯ জন কৃষক। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন কৃষক রমজান বলেন, ‘আমি ৫ একর জমিতে ডাটা, করলা, ধুন্দল, ঝিঙ্গার চাষ করেছিলাম। পাহাড়ি ঢলে গ্রামের বাঁধ ভেঙে স্রোতের তোড়ে সব কিছু ভেসে যায়। এখন যে জমিতে আমি আমার কষ্টের ফসল চাষ করেছিলাম সেখানে কিছুই নেই কাদা ছাড়া।’

সিলেট বিভাগের চার জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সিলেট জেলার ২২ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ মে থেকে ৮ জুন পর্যন্ত প্রথম ধাপের বন্যায় নষ্ট হয় ৭ হাজার ৪৩ হেক্টর জমির ফসল। তাতে লোকসান হয় ১৪২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার। ১৪ জুন থেকে ২৪ জুন দ্বিতীয় ধাপের বন্যায় নষ্ট হয় ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল। এতে আর্থিক ক্ষতি হয় ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকার। সর্বশেষ ৩০ জুন থেকে তৃতীয় দফা বন্যায় ৪১২ হেক্টরের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে লোকসানের পরিমাণ ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকার। এই জেলায় তিন দফায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ২৭২ জন। মৌলভীবাজারে ৫ হাজার ৭৫৪.৩৫ হেক্টর জমির ফসলহানি হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১১৭ কোটি ২৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকার। এর মধ্যে সবজির জমি ৯৬৯.৬ হেক্টর, আউশ ধানের ৪ হাজার ৭৫৪.৭৫ হেক্টর আর ৩০ হেক্টর আউশ বীজতলার জমি।

মৎস্য খাতের ক্ষতি
মৎস্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, বন্যায় ৮৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা মূল্যের ৫ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন মাছ এবং ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা মূল্যের ৪৫৫ মেট্রিক টন মাছের পোনার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ১০ কোটি টাকার জাল ও সাত কোটি ২৪ লাখ টাকার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। মৎস্য খাতে শুধু সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলাতেই ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদরে ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ৭৯৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সারা জেলায় ১ হাজার ২২৪.৬৬ হেক্টর জুড়ে থাকা ৮ হাজার ২১টি পুকুর, দিঘি ও খামারের ৪ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন মাছ ও ১৮৫ মেট্রিক টন পোনা ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৭২ কোটি ১২ লাখ ৬ হাজার টাকা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা জিয়াপুর গ্রামের এনামুল হক সাতটি বড় পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন। এসব পুকুরে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ ছিল তার। এক রাতেই পানির তোড়ে ভেঙে যায় তার পুকুরগুলোর পাড়। ভেসে যায় সব মাছ। এরপর সিলেট জেলার ২ হাজার ৪৯৮ হেক্টরজুড়ে থাকা ১৫ হাজার ৭৪টি পুকুর, দীঘি ও খামারের ১ হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন মাছ ও ১৮১ মেট্রিক টন পোনা বন্যায় ভেসে গেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৯ কোটি ২৯ লাখ টাকার। মৎস্য খাতে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৮ কোটি টাকার, জকিগঞ্জে ৬ কোটি ২০ লাখ টাকার এবং কোম্পানীগঞ্জে ৩ কোটি ৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৌলভীবাজারে বন্যায় ১১৫ হেক্টরের ৭১৮টি পুকুর, দীঘি ও খামারের ২২৫ মেট্রিক টন মাছ ও ৮৯ মেট্রিক টন পোনা ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার। জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা শ্রীমঙ্গল। এখানে ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বড়লেখা উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামশুল করিম বলেন, ৮ হাজার পুকুর প্লাবিত হয়ে মাছ, পোনা ও অবকাঠামো মিলিয়ে ৭২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জলবায়ু সহনশীল মাছ চাষ প্রকল্প থেকে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মৎস্য অধিদপ্তর বিভাগের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বড় ক্ষতি হয়ে গেছে প্রথম দফা বন্যাতেই। মাছ, পোনা বা অবকাঠামো সব ক্ষেত্রেই। পরে সেটি আরো কিছুটা বেড়েছে।’