বৈষম্যমূলক সর্বজনীন পেনশন প্রতাহারের দাবিতে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(বশেমুরবিপ্রবি) কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শৌচাগার গুলোতে ময়লার ভাগাড় জমে আছে। শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারছেনা শৌচাগারগুলো। একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েও সমাধান করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পর্যাপ্ত পরিমান লোকবলের অভাবে এমন হচ্ছে বলে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যমূলক সর্বজনীন পেনশন প্রতাহারের দাবিতে সারাদেশের ন্যায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যায় বশেমুরবিপ্রবি কর্মচারী সমিতি। এতে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেনা কর্মচারীরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শৌচাগারগুলোতে ময়লার ভাগাড় জমে আছে। শিক্ষার্থীরা জরুরি মুহূর্ত্যে শৌচাগারগুলো ব্যবহার করতে পারছেনা। এমনকি শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীরা জানান, ১০-১৫দিন পর পর শৌচাগারগুলো পরিষ্কার করা হয়। এতে দীর্ঘদিন জমে থাকা ময়লা থেকে কটা গন্ধ বের হয়। পাঠদানে মনযোগ দিতে পারছেনা আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
আবাসিক হলগুলো ঘুরে দেখা যায়, ছেলেদের জন্য তিনটি এবং মেয়েদের জন্য দুইটি আবাসিক হলে সংস্কার করা হয়েছে। সংস্কারের অংশ হিসেবে শৌচাগারগুলোতে টাইলস, সাবান রাখার পাত্র এবং পানির নতুন ট্যাব লাগানো হয়েছে। কিন্তু শৌচাগারে সাবান অথবা লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ ও টিস্যুর ব্যবস্থা নেই। এছাড়া ব্যবহৃত টিস্যু যত্রতত্র পড়ে আছে। যার উপর পোকা নড়াচড়া করছে। বেশিরভাগ শৌচাগারেই সাবান ও টিস্যুর ব্যবস্থা নেই। নেই টিস্যু ফেলার পর্যাপ্ত ঝুঁড়ি। নষ্ট হওয়ার খাবার ফেলানোর ড্রামগুলো যেন পঁচাগলা ডাস্টবিন। এগুলো থেকে ছড়াচ্ছে পঁচাগলা দূর্গন্ধ। গণরুমের পাশে শৌচাগারগুলো থাকায় ডাস্টবিনের পঁচাগলা গন্ধে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন পরিষ্কারের অভাবে ভিতর থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। প্রশ্রাবখানার অবস্থা আরো ভয়াবহ। কটা গন্ধে অব্যবহৃত হয়ে পড়েছে এগুলো। হলগুলোর প্রায় সব কয়টিতে একই রকম অবস্থা দেখা গিয়েছে।
একাডেমিক ভবন এবং প্রশাসনিক ভবনের চিত্রও একই। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা কোনো শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। ফলে শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে কমন শৌচাগার ব্যবহার করে থাকেন। কিছু শৌচাগারে পানি আছে কিন্তু বদনা নেই। আবার কয়েকটিতে বদনা আছে তো পানি নেই। এমনকি বেশিরভাগ শৌচাগারে পানি এবং বদনা কোনোটাই নেই। নেই স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা। পাশাপাশি মেয়েদের জন্য আলাদা কোনো শৌচাগারের ব্যবস্থা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিজয় দিবস হলের আবাসিক শিক্ষার্থী টনি বলেন, ঈদের আগে শৌচাগারগুলো একবার পরিষ্কার করা হয়েছে। প্রায় ১মাস হতে চললো এখনো পরিষ্কার করার কোনো নামগন্ধ নেই। আমরা এগুলো ব্যবহার করতে পারছিনা। আমাদের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও নেই। মামাদেরকে কয়েকবার জানানো হয়েছে কিন্তু তারা কর্মবিরতির অযুহাত দিয়ে কাজ করছেনা। রিতিমত আমরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা বেশিদিন টিকতে পারবনা।
স্বাধীনতা দিবস হলের গণরুমের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার মনে হচ্ছেনা আমি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। শৌচাগারের দুর্গন্ধে রিতিমত আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। এভাবে আর কতদিন থাকতে হবে জানিনা। একাডেমিক ভবনের শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।
একাডেমিক ভবনের শৌচাগার নিয়ে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমানে ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এবিষয়ে যোগাযোগ করা হয় পরিষ্কারকদের সুপারভাইজার মিলন সমাদ্দারের সাথে। মিলন বলেন, প্রতিটি আবাসিক হলের শৌচাগার অনেকগুলো। কিন্তু প্রতি হলের জন্য আমার লোকবল মাত্র ২জন। একজন সরকারি আরেকজন মজুরি ভিত্তিক। এই দুইজন দিয়ে প্রতিদিন শৌচাগারগুলো পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছেনা। তিনি বলেন, আমার লোকবল প্রয়োজন। প্রশাসনকে এবিষয়ে অনেকবার অবগত করেছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমি কি করবো বলেন! শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে কথা শোনায়। কিন্তু আমরাতো চেষ্টা করতেছি।
কর্মবিরতি নিয়ে মিলন বলেন, কর্মবিরতির সময় কর্মবিরতি চলবে। একজন কর্মবিরতি পালন করলে আরেকজন কাজ করবে। এভাবেই চালিয়ে নিতে হবে। না’হয় শিক্ষার্থীরা শৌচাগারগুলো ব্যবহার করতে পারবেনা। আগামীকাল থেকে আমি লোকজন পাঠিয়ে শৌচাগারগুলো পরিষ্কার করিয়ে দিব।


























