০৯:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৮ জুলাই মুদ্রানীতি ঘোষণা

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে এবারের মুদ্রানীতির লক্ষ্য

◉ মুদ্রানীতিতে খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দেওয়া হবে
◉ এবারও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পথনির্দেশনা আসছে
◉ নীতি সুদহার বৃদ্ধি, ক্রলিং পেগে অটল মুদ্রানীতিতে

⮞ উচ্চপর্যায় থেকে মুদ্রানীতির ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলে স্বচ্ছতা কমে যায়- ড. জাহিদ হোসেন, সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস
⮞ খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে- আনোয়ার ফারুক তালুকদার, অর্থনীতি বিশ্লেষক

নিয়ম অনুযায়ী বছরে দুই বার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রানীতি ঘোষণার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা রক্ষার চেষ্টা করে থাকে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। লাগামহীন মূল্যস্ফীর ফলে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বাজার। বার বার চেষ্টা করেও মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে এবারের মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্য। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণের উপর নির্ভরশীল বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধ অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের জন্য ১৮ জুলাই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে এবার দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙে সংবাদ সম্মেলন না করেই মুদ্রানীতি ঘোষণা করার সিদ্ধন্ত নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেন হঠাৎ করে দীর্ঘদিনের এই সংস্কৃতি উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে-এ নিয়ে ব্যাংকপাড়ায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও এ নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্রে জানা গেছে, গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের অনাগ্রহ থেকেই মূলত এবার মুদ্রানীতি ঘোষণার দিন সংবাদ সম্মেলন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী গভর্নর নিজেই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মুদ্রানীতি ঘোষণা করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র বলেছে, এবার গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে চাচ্ছেন না। ব্যাংক খাতে বর্তমানে চরম দূরাবস্থা চলছে। উচ্চ খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট, মার্জারসহ ব্যাংক খাত ও নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নানা অনিয়ম-জালিয়াতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে গভর্নরকে। এছাড়া, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়েও এবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে গভর্নরকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও মুদ্রানীতি ঘোষণার দিন ব্যাংক খাতের অনিয়ম-জালিয়াতি নিয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নে তিনি বিব্রত হয়েছিলেন।

এছাড়া সম্প্রতি ছাগলকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সাথে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের দুইটি ছবি স্যোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে। মুদ্রানীতির অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা এনিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই আশঙ্কাও করছে। এসব কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংবাদ সম্মেলন না করে ওয়েব সাইটে মুদ্রানীতি প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বার বার চেষ্টা করেও মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না। ফলে এবারও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে মুদ্রানীতির অন্যতম লক্ষ্য। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করবে। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি এ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নামানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, নতুন অর্থবছরের জন্য আগামী ১৮ জুলাই মুদ্রানীতি ঘোষণার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মুদ্রানীতি সংক্রান্ত বৈঠক করা হয়েছে। আজ ১৪ জুলাই মুদ্রানীতি ঘোষণা-সংক্রান্ত মূল কমিটির সভা হবে। আগামী ১৬ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় মুদ্রানীতি পাস হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ। গত বছর ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে ও গত জুনের মধ্যে তা ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এদিকে গত অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। নভেম্বরের শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশে। জুনে এসে তা দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে। মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। পাশাপাশি নীতি সুদের হারও বাড়ানো হয়েছে। এতে ঋণের সুদের হার ১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সূত্র জানায়, এবারের মুদ্রানীতিতে খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পথনির্দেশনা আসছে। কারণ গত মুদ্রানীতিতেও একই ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এরই মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোটাই পুরোপুরি কাজে আসেনি। কবে নাগাদ কাজে আসবে তা-ও বলা যাচ্ছে না। তাই নীতি সুদহার বৃদ্ধি, ক্রলিং পেগে অটল এবং খেলাপি ঋণ কমানোর মতো পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তই আবারও আসতে পারে নতুন অর্থবছরের প্রথম অধ্যায়ের মুদ্রানীতিতে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মার্কিন ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় টাকার সংকট, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা এবং সুশাসনের অভাবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংক খাত, মোটাদাগে এই সবই হচ্ছে এখন দেশের আর্থিক খাতে প্রধান সমস্যা। এসব চ্যালেঞ্জ নিয়েই জুলাই মাসের ১৮ তারিখ নতুন অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগের মুদ্রানীতিগুলোর মতো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতেও সংকোচনমুখী ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এ ক্ষেত্রে সুদহার আরো বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। বাড়ানো হতে পারে নীতি সুদহার, রেপো, রিভার্স রেপোর মতো মুদ্রানীতির মৌলিক সুদ কাঠামোগুলোও।

অর্থনীতি বিশ্লেষক আনোয়ার ফারুক তালুকদার বলেন, মূদ্রানীতিতে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য বড় বড় ঋণখেলাপি গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা করা। সিন্ডিকেট ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যেভাবে কাজ করেছে, ঠিক একই পন্থায় বড় খেলাপি ঋণ আদায়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি বিষয়গুলো আরও সহজ ও দ্রুত করা এবং ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এবারের মূদ্রানীতির এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, একটা নীতি করলেই তো হবে না, নীতির প্রচারও করতে হবে। মুদ্রানীতির সংবাদগুলো বাজারে সঠিকভাবে পৌঁছাতে হবে। মুদ্রানীতির উপর বিভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা যদি উচ্চপর্যায় থেকে না পাওয়া যায় তাহলে এটার স্বচ্ছতাটা কমে যায়।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

১৮ জুলাই মুদ্রানীতি ঘোষণা

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে এবারের মুদ্রানীতির লক্ষ্য

আপডেট সময় : ০৪:৪৭:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

◉ মুদ্রানীতিতে খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দেওয়া হবে
◉ এবারও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পথনির্দেশনা আসছে
◉ নীতি সুদহার বৃদ্ধি, ক্রলিং পেগে অটল মুদ্রানীতিতে

⮞ উচ্চপর্যায় থেকে মুদ্রানীতির ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলে স্বচ্ছতা কমে যায়- ড. জাহিদ হোসেন, সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস
⮞ খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে- আনোয়ার ফারুক তালুকদার, অর্থনীতি বিশ্লেষক

নিয়ম অনুযায়ী বছরে দুই বার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রানীতি ঘোষণার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা রক্ষার চেষ্টা করে থাকে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। লাগামহীন মূল্যস্ফীর ফলে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বাজার। বার বার চেষ্টা করেও মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে এবারের মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্য। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণের উপর নির্ভরশীল বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধ অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের জন্য ১৮ জুলাই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে এবার দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙে সংবাদ সম্মেলন না করেই মুদ্রানীতি ঘোষণা করার সিদ্ধন্ত নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেন হঠাৎ করে দীর্ঘদিনের এই সংস্কৃতি উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে-এ নিয়ে ব্যাংকপাড়ায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও এ নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্রে জানা গেছে, গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের অনাগ্রহ থেকেই মূলত এবার মুদ্রানীতি ঘোষণার দিন সংবাদ সম্মেলন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী গভর্নর নিজেই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মুদ্রানীতি ঘোষণা করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র বলেছে, এবার গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে চাচ্ছেন না। ব্যাংক খাতে বর্তমানে চরম দূরাবস্থা চলছে। উচ্চ খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট, মার্জারসহ ব্যাংক খাত ও নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নানা অনিয়ম-জালিয়াতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে গভর্নরকে। এছাড়া, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়েও এবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে গভর্নরকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও মুদ্রানীতি ঘোষণার দিন ব্যাংক খাতের অনিয়ম-জালিয়াতি নিয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নে তিনি বিব্রত হয়েছিলেন।

এছাড়া সম্প্রতি ছাগলকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সাথে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের দুইটি ছবি স্যোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে। মুদ্রানীতির অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা এনিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই আশঙ্কাও করছে। এসব কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংবাদ সম্মেলন না করে ওয়েব সাইটে মুদ্রানীতি প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বার বার চেষ্টা করেও মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না। ফলে এবারও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে মুদ্রানীতির অন্যতম লক্ষ্য। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করবে। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি এ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নামানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, নতুন অর্থবছরের জন্য আগামী ১৮ জুলাই মুদ্রানীতি ঘোষণার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মুদ্রানীতি সংক্রান্ত বৈঠক করা হয়েছে। আজ ১৪ জুলাই মুদ্রানীতি ঘোষণা-সংক্রান্ত মূল কমিটির সভা হবে। আগামী ১৬ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় মুদ্রানীতি পাস হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ। গত বছর ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে ও গত জুনের মধ্যে তা ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এদিকে গত অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। নভেম্বরের শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশে। জুনে এসে তা দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে। মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। পাশাপাশি নীতি সুদের হারও বাড়ানো হয়েছে। এতে ঋণের সুদের হার ১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সূত্র জানায়, এবারের মুদ্রানীতিতে খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পথনির্দেশনা আসছে। কারণ গত মুদ্রানীতিতেও একই ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এরই মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোটাই পুরোপুরি কাজে আসেনি। কবে নাগাদ কাজে আসবে তা-ও বলা যাচ্ছে না। তাই নীতি সুদহার বৃদ্ধি, ক্রলিং পেগে অটল এবং খেলাপি ঋণ কমানোর মতো পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তই আবারও আসতে পারে নতুন অর্থবছরের প্রথম অধ্যায়ের মুদ্রানীতিতে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মার্কিন ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় টাকার সংকট, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা এবং সুশাসনের অভাবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংক খাত, মোটাদাগে এই সবই হচ্ছে এখন দেশের আর্থিক খাতে প্রধান সমস্যা। এসব চ্যালেঞ্জ নিয়েই জুলাই মাসের ১৮ তারিখ নতুন অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগের মুদ্রানীতিগুলোর মতো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতেও সংকোচনমুখী ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এ ক্ষেত্রে সুদহার আরো বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। বাড়ানো হতে পারে নীতি সুদহার, রেপো, রিভার্স রেপোর মতো মুদ্রানীতির মৌলিক সুদ কাঠামোগুলোও।

অর্থনীতি বিশ্লেষক আনোয়ার ফারুক তালুকদার বলেন, মূদ্রানীতিতে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য বড় বড় ঋণখেলাপি গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা করা। সিন্ডিকেট ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যেভাবে কাজ করেছে, ঠিক একই পন্থায় বড় খেলাপি ঋণ আদায়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি বিষয়গুলো আরও সহজ ও দ্রুত করা এবং ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এবারের মূদ্রানীতির এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, একটা নীতি করলেই তো হবে না, নীতির প্রচারও করতে হবে। মুদ্রানীতির সংবাদগুলো বাজারে সঠিকভাবে পৌঁছাতে হবে। মুদ্রানীতির উপর বিভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা যদি উচ্চপর্যায় থেকে না পাওয়া যায় তাহলে এটার স্বচ্ছতাটা কমে যায়।