◉ রেমিট্যান্স প্রবাহ ঘাটতির প্রভাব
◉ ১২৪ টাকা ছাড়িয়েছে ডলারের দাম
➥ রাজনৈতিক পরিস্থিতিই এই অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করছে ড. আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট
➥ মার্কেটে ডলার কম থাকার কারণে দাম বেড়ে গেছে গৌতম দে, মহাসচিব, মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রভাব পড়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। পাশাপাশি বিদেশে রেমিট্যান্সবিরোধী প্রচারণায় খোলাবাজারে ডলার মূল্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
প্রায় দুই মাস ধরে কিছুটা স্থিতিশীল থাকলে কোটা আন্দোলন ইস্যুতে ফের এই অস্থিরতা শুরু হয়েছে।
গেল কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’ প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেক প্রবাসী। এ ছাড়া কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে চলতি জুলাইয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক কমে গেছে। এতে বেড়ে গেছে খোলাবাজারের ডলারের দাম। রাজাধানীর বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জারগুলোত ১২৪ টাকা ছাড়িয়েছে ডলারের দর। গত রোববার ও সোমবারেও খোলাবাজারে ডলার ১২১ থেকে ১২২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক দিনের ব্যাবধানে বেড়েছে ২-৩ টাকা। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় প্রভাবে এ দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংকগুলোও রেমিট্যান্স কেনায় দর বাড়িয়ে ১২০ টাকা করে ডলার কিনছে। ডলারের প্রবাহ বাড়াতে বেশ কিছু ব্যাংককে বেশি দাম দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পর ডলারের দাম বেড়ে ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
সর্বশেষ গত রোববার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বেশি দামে রেমিট্যান্স আনতে মৌখিক নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর বেশি রেমিট্যান্স আহরণ করে এমন ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এ নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে বৈধপথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর প্রচারণা শুরুর আগে খোলা বাজারে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছিল ১২০ টাকা করে। ব্যাংকগুলো তখন রেমিট্যান্স কেনায় ডলারের দাম দিতো ১১৭ টাকা।
গতকাল রাজধানীর মতিঝিল দিলকুশা এলাকায় বিভিন্ন মানি চেঞ্জার হাউজে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে। ক্রেতা ও বিক্রেতা পরিচয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে প্রায় সবগুলো মানি চেঞ্জার হাউজগুলোতেই ডলার কেনা হচ্ছে ১২৩ টাকা থেকে ১২৩ টাকা ৫০ পয়সায়। আর বিক্রি করা হচ্ছে ১২৪ টাকা থেকে ১২৪ টাকা ২০ পয়শা পর্যন্ত। মতিঝিলে ডলার কিনতে আসা রবিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ কয়েকদিনের জন্য দেশের বাইরে যেতে হচ্ছে। খরচের জন্য নগদ ডলার কিনতে মানি চেঞ্জারে এসেছি। কিন্ত ডলার ১২৪ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এই রেটেই কিনলাম। কারণ শুনলাম দাম আরো বেড়ে যাবে।
বিক্রেতা পরিচয়ে রাজধানীর ফকিরাপুলের একটি মানি এক্সচেঞ্জার লিমিটেডে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার প্রধান মাকছুদুর রহমান বলেন, আজকে পর্যন্ত আমরা ২৩ টাকা করে কিনতেছি। সব জায়গায় এই দামই কেনা হচ্ছে। ক্রেতা পরিচয়ে দিলকুশার জামান মানি এক্সচেঞ্জার হাউজের জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি কত ডলার কিনবেন তার ওপর দাম। আজকে ১২৪ টাকা দরে বিক্রি করতেছি। ১২৩ টাকা ৫০ পয়শা আমাদেরই কেনা পড়তেছে। কালকের দর কি হবে বলা যাচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুলাইয়ের ১ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার বা ১৮ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা ধরে)। সে হিসেবে প্রতিদিন এসেছে ৫ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে ১ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত এসেছে ৩৭ কোটি, ৭ থেকে ১৩ জুলাই ৬০ কোটি ও ১৪ থেকে ২০ জুলাই ৪৫ কোটি। আন্দোলনের তীব্রতা ও সরকারের কঠোর পদক্ষেপের পর ২১ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত এসেছে মাত্র ১৩ কোটি ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে চলতি মাসের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। এছাড়াও দেশে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন অনেক প্রবাসী। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে খোলা বাজারে। এ বিষয়ে মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব গৌতম-দে বলেন, মার্কেটে ডলার কম থাকার কারণে দাম বেড়ে গেছে। আন্দোলন পরিস্থিতির কারণে রেমিট্যান্স ঠিকমত আসছে না। যার কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। আজকে মার্কেট প্রাইজ ১২৩-১২৪ চলতেছে। সামনে কি হবে বলা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এই সংকট তৈরি হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সংকট আরও ঘনিভূত হবে, এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতিই এই অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করছে। মূলত ফরেন কারেন্সি সটেজের কারণে এই পরিস্থিতিতে তা আরও ঘনিভূত হচ্ছে। এক্সপোর্ট কমে গেছে, আবার রেমিট্যান্সও কম আসতেছে। এছাড়াও এই পরিস্থিতিতে অনেকেই এখন ক্যাশ ডলার হাতে রাখতে চাইবে। সব মিলে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থা স্বাভাবিক না হলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।






















