০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোলায় ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে নিহত-৩

ভোলা সদর হাসপাতালে শয্যায় সংকটে শিশুদের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ করেই বেড়েছে নিউমোনিয়া ও ডায়েরিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। প্রতিদিনই ভোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শতাধিকেরও বেশি শিশু। এতে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা। এদের বয়স-১৫ দিন থেকে ৩ বছরের মধ্যে। একদিকে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে দেখা দিয়েছে ওষুধ, ক্যানোলা, নেবুলাইজার মাক্স ও স্যালাইন সংকট। এ ছাড়াও ধারণ ক্ষমতার বেশি ভর্তি হওয়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকটও। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে শিশুদের। এর মধ্যে নিউমোনিয়া ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ৭দিনে (২ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর) ১৫০০ শিশু ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিউমোনিয়ায় মারা গেছে ৩ জন। গতকাল রবিবার ২০০ জনের বেশি শিশু ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালে শিশুশয্যা রয়েছে মাত্র ৫০টি।

সরে-জমিনে দেখা যায়,শয্যা না পেয়ে বেশিরভাগ শিশুই হাসপাতালের মেঝে চিকিৎসা নিচ্ছে। যারা শয্যা পেয়েছে তারা এক শয্যায় ২/৩ জন গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে করে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। দৌলতখান পৌর এলাকার শিশু রোগীর মা লাইজু বেগম ও লালমোহনের চর উম্মেদ এলাকার শিশু রোগীর মা আসমা আক্তার জানান, তাদের ৬ মাস ও ৫ মাসের বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। কোনো শয্যা না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মতো শত শত মা হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসারত রয়েছেন। এতে প্রচন্ড গরমে তাদের ও সন্তানদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। এ ছাড়াও হাসপাতালে ডাক্তার ওষুধ, ক্যানোলা, নেবুলাইজার মাক্স লিখে দিয়েছেন। আর সেবিকারা বলছেন, সেগুলো হাসপাতালে নেই, বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। টাকা দিয়ে ফার্মেসি থেকে কিনতে হয়েছে।

ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা জংশন গ্রামের নাজমা বেগম জানান, শিশুর নিউমোনিয়া হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। কিন্তু শয্যা সংকট থাকায় এক বেডে ২/৩ জন করে শিশু রেখে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আমরা একটু বসতেও পারি না। অনেক কষ্টে বাচ্চাদের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া শিশুদের স্বজন নূরজাহান বেগম, সবিতা রানী, জসিম উদ্দিনসহ কয়েকজন জানান, দিনে একবার একজন ডাক্তার আসেন বেড ও মেঝেতে ভর্তি হওয়ায় শিশু রোগীদের দেখতে। তাও আবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। এ ছাড়াও সেবিকারা ঠিকমতো আসেন না আমাদের সন্তানদের সমস্যা দেখতে। তাদের অনেক ডাকাডাকি করলে তারপর আসেন। অনেক সময় সেবিকাদের বেশি ডাকাডাকি করলে রাগারাগি করেন। বাধ্য হয়ে বেশিরভাগ সময়ই বাচ্চাদের সেবিকাদের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়।

হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা (শিশু বিভাগ) আবদুল মজিদ শাকিল বলেন, সংকট থাকায় দৈনিক একজন চিকিৎসক শিশু রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। রোগী বেশি থাকায় চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ ভাবে শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।
সেবিকা সুপারভাইজার নাছিমা বেগম বলেন, হাসপাতালে সেবিকার সংকট রয়েছে। তাই রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার পরও প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে একটি শিশুর চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সময় অন্য শিশুদের মায়েরা ডাকাডাকি করেন। ওই সময় তো চিকিৎসাসেবা শেষ না করে আসা সম্ভব নয়। এজন্য রোগীর স্বজনদের অনেক অভিযোগ থাকে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ইমতিয়াজ বেলাল বলেন, হাসপাতালে-ওষুধ, ক্যানোলা, নেবুলাইজার মাক্স ও স্যালাইন সংকটের রয়েছে, হঠাৎ ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। এ ছাড়া চিকিৎসক ও নার্স সংকটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সোনারগাঁয়ে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করায় গুড়িয়ে দেয়া হয় দু’টি প্রতিষ্ঠান, একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

ভোলায় ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে নিহত-৩

আপডেট সময় : ০৪:৪৭:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ভোলা সদর হাসপাতালে শয্যায় সংকটে শিশুদের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ করেই বেড়েছে নিউমোনিয়া ও ডায়েরিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। প্রতিদিনই ভোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শতাধিকেরও বেশি শিশু। এতে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা। এদের বয়স-১৫ দিন থেকে ৩ বছরের মধ্যে। একদিকে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে দেখা দিয়েছে ওষুধ, ক্যানোলা, নেবুলাইজার মাক্স ও স্যালাইন সংকট। এ ছাড়াও ধারণ ক্ষমতার বেশি ভর্তি হওয়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকটও। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে শিশুদের। এর মধ্যে নিউমোনিয়া ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ৭দিনে (২ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর) ১৫০০ শিশু ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিউমোনিয়ায় মারা গেছে ৩ জন। গতকাল রবিবার ২০০ জনের বেশি শিশু ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালে শিশুশয্যা রয়েছে মাত্র ৫০টি।

সরে-জমিনে দেখা যায়,শয্যা না পেয়ে বেশিরভাগ শিশুই হাসপাতালের মেঝে চিকিৎসা নিচ্ছে। যারা শয্যা পেয়েছে তারা এক শয্যায় ২/৩ জন গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে করে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। দৌলতখান পৌর এলাকার শিশু রোগীর মা লাইজু বেগম ও লালমোহনের চর উম্মেদ এলাকার শিশু রোগীর মা আসমা আক্তার জানান, তাদের ৬ মাস ও ৫ মাসের বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। কোনো শয্যা না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মতো শত শত মা হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসারত রয়েছেন। এতে প্রচন্ড গরমে তাদের ও সন্তানদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। এ ছাড়াও হাসপাতালে ডাক্তার ওষুধ, ক্যানোলা, নেবুলাইজার মাক্স লিখে দিয়েছেন। আর সেবিকারা বলছেন, সেগুলো হাসপাতালে নেই, বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। টাকা দিয়ে ফার্মেসি থেকে কিনতে হয়েছে।

ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা জংশন গ্রামের নাজমা বেগম জানান, শিশুর নিউমোনিয়া হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। কিন্তু শয্যা সংকট থাকায় এক বেডে ২/৩ জন করে শিশু রেখে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আমরা একটু বসতেও পারি না। অনেক কষ্টে বাচ্চাদের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া শিশুদের স্বজন নূরজাহান বেগম, সবিতা রানী, জসিম উদ্দিনসহ কয়েকজন জানান, দিনে একবার একজন ডাক্তার আসেন বেড ও মেঝেতে ভর্তি হওয়ায় শিশু রোগীদের দেখতে। তাও আবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। এ ছাড়াও সেবিকারা ঠিকমতো আসেন না আমাদের সন্তানদের সমস্যা দেখতে। তাদের অনেক ডাকাডাকি করলে তারপর আসেন। অনেক সময় সেবিকাদের বেশি ডাকাডাকি করলে রাগারাগি করেন। বাধ্য হয়ে বেশিরভাগ সময়ই বাচ্চাদের সেবিকাদের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়।

হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা (শিশু বিভাগ) আবদুল মজিদ শাকিল বলেন, সংকট থাকায় দৈনিক একজন চিকিৎসক শিশু রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। রোগী বেশি থাকায় চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ ভাবে শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।
সেবিকা সুপারভাইজার নাছিমা বেগম বলেন, হাসপাতালে সেবিকার সংকট রয়েছে। তাই রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার পরও প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে একটি শিশুর চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সময় অন্য শিশুদের মায়েরা ডাকাডাকি করেন। ওই সময় তো চিকিৎসাসেবা শেষ না করে আসা সম্ভব নয়। এজন্য রোগীর স্বজনদের অনেক অভিযোগ থাকে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ইমতিয়াজ বেলাল বলেন, হাসপাতালে-ওষুধ, ক্যানোলা, নেবুলাইজার মাক্স ও স্যালাইন সংকটের রয়েছে, হঠাৎ ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। এ ছাড়া চিকিৎসক ও নার্স সংকটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।