০৩:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কমেছে খেলার মাঠ, বেড়েছে মোবাইল ফোনে আসক্তি

শারীরিক সুস্থতায় খেলাধুলা প্রয়োজনীয় হলেও বহুতল ভবন নির্মাণে রংপুরে হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। রংপুরে শহরে এক সময়ের ফাঁকা মাঠগুলো এখন আর চোখে পড়ে না। এসব মাঠ এখন শুধুই সোনালী অতীত। অলিগলিতে কিংবা শহরের বুকে বিভিন্ন মাঠে এখন আকাশ ছোঁয়া বহুতল ভবন শোভা পাচ্ছে। কমেছে শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ, বেড়েছে মোবাইল ফোনে আসক্তি। এতে করে শারীরিক ও মানসিক ব্যাঘাত ঘটছে তাদের। রংপুর মহানগরীতে দেখা যায়, শহরে অট্টালিকার পাশাপাশি গ্রামীণ কৃষিজমিতেও গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি, কলকারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এতে কমেছে খেলার মাঠ ও কৃষি জমি। আগে ওই মাঠগুলোতে শিশু-কিশোরদের খেলার দৃশ্যই দেখা যেত। এখন মাঠ না থাকায় শিশু, কিশোর ও যুবকরা খেলায় আগ্রহ হারিয়ে ঝুঁকছেন স্মার্টফোনে। এতে স্বাস্থ্যে ব্যাঘাত ঘটার পাশাপাশি উঠতি বয়সে সঙ্গদোষে মাদকসহ অপ্রীতিকর কাজে লিপ্ত হচ্ছে কিশোর-যুবকরা। ফলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সংশ্লিষ্ট তথ্য সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীতে ৩৩টি ওয়ার্ডের ১০ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এরমধ্যে শিশু রয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ। তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় শহরের বুকে স্টেডিয়াম, ক্রিকেট গার্ডেন, কালেক্টরেট মাঠ থাকলেও আর তেমন কোন মাঠের নেই সুব্যবস্থা। আবার মাঠে সকল শিশু উন্মুক্তভাবে খেলাধুলার সুযোগ থেকেও বি ত। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ। তবে প্রাতিষ্ঠানিক মাঠেও শিক্ষার্থী কিংবা আশেপাশের শিশু-কিশোররা ছাড়া অন্যদের নেই খেলার সুযোগ। মহানগরীর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে দৃশ্য গ্রামীণ পরিবেশের। সেখানে মাঠ বলতে ফসলি জমির উপর কিংবা ঈদগা মাঠের নির্ভর করে থাকে। ফসল তোলার উৎসব শেষে ফুটবল নিয়ে খেলার ধুম পড়ে যায় শিশু-কিশোর ও উঠতি বয়সী যুবকদের মাঝে। গ্রামীণ কিছু খেলার পাশাপাশি ক্রিকেট, ফুটবল খেলায় শৈশবের দৃশ্য নজর কাড়ে যে কারোই। তবে নগরায়ণের ফলে এসব মাঠে খেলাধুলা ও দর্শকের উচ্ছ্বাস হারিয়ে গেছে ছোট-বড় দোকানপাট, বাজার ও অট্টালিকা মাঝে। নগরীর ২৪নং ওয়ার্ড তাঁতীপাড়া হাউজিং মাঠ এলাকার সৈয়দ আলী বলেন, ছোট থেকে বড় হয়েছি এখানে খেলাধুলা করে। কিন্তু এখন আর মাঠ নাই, চারিদিকে বিল্ডিংয়ের সমাহার। এলাকার সব শিশু কিশোর মিলে মৌসুমে প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা হতো। গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অতিথি বানিয়ে শিশুদের উৎসাহিত করতে পুরস্কৃত করা হতো। সেইদিন এখন শুধু অতীত। এখন প্রজন্মরা ব্যস্ত মোবাইল নিয়ে। তাদের মাঝে শ্রদ্ধাবোধ কমে গেছে। সচেতন মানুষ বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার অতি গুরুত্বপূর্ণ। মনকে ভালো রাখতে, মেধার বিকাশ ঘটাতে খেলাধুলার চর্চা করতে হবে। প্রতিদিনের তালিকায় আধাঘণ্টা হলেও খেলাধুলার চর্চা করা উচিত। যেহেতু আধুনিকায়নে সবকিছু পরিবর্তনের পাশাপাশি ফাঁকা মাঠগুলো ভবনের দখলে। তবুও ছেলেমেয়েদের পার্থক্য না রেখে উভয়ের খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে মাঠের ব্যবস্থা করা জরুরি। রংপুর আরসিসিআই স্কুল এন্ড কলেজের ক্রীড়াশিক্ষক আবু তাহের বলেন, সুস্থ থাকতে খেলাধুলা চর্চার বিকল্প নেই। শিশু-কিশোররা একে অপরের মাঝে আনন্দে বেড়ে উঠতে খেলার মাঠ বেশ ভূমিকা রাখে। একটা সময় প্রতিটি এলাকায়, অলিগলিতে খেলার মাঠ ছিল, এখন অনেকটাই কমে গেছে। ফলে শিশুরা খেলাধুলার প্রতি অনাগ্রহী হয়ে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ‘মাদককে না বলে’ শিশু-কিশোরদের বেড়ে উঠতে, খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে মোবাইল ফোনে অনাগ্রহী করতে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সোনারগাঁয়ে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করায় গুড়িয়ে দেয়া হয় দু’টি প্রতিষ্ঠান, একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

কমেছে খেলার মাঠ, বেড়েছে মোবাইল ফোনে আসক্তি

আপডেট সময় : ০৩:০৩:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শারীরিক সুস্থতায় খেলাধুলা প্রয়োজনীয় হলেও বহুতল ভবন নির্মাণে রংপুরে হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। রংপুরে শহরে এক সময়ের ফাঁকা মাঠগুলো এখন আর চোখে পড়ে না। এসব মাঠ এখন শুধুই সোনালী অতীত। অলিগলিতে কিংবা শহরের বুকে বিভিন্ন মাঠে এখন আকাশ ছোঁয়া বহুতল ভবন শোভা পাচ্ছে। কমেছে শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ, বেড়েছে মোবাইল ফোনে আসক্তি। এতে করে শারীরিক ও মানসিক ব্যাঘাত ঘটছে তাদের। রংপুর মহানগরীতে দেখা যায়, শহরে অট্টালিকার পাশাপাশি গ্রামীণ কৃষিজমিতেও গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি, কলকারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এতে কমেছে খেলার মাঠ ও কৃষি জমি। আগে ওই মাঠগুলোতে শিশু-কিশোরদের খেলার দৃশ্যই দেখা যেত। এখন মাঠ না থাকায় শিশু, কিশোর ও যুবকরা খেলায় আগ্রহ হারিয়ে ঝুঁকছেন স্মার্টফোনে। এতে স্বাস্থ্যে ব্যাঘাত ঘটার পাশাপাশি উঠতি বয়সে সঙ্গদোষে মাদকসহ অপ্রীতিকর কাজে লিপ্ত হচ্ছে কিশোর-যুবকরা। ফলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সংশ্লিষ্ট তথ্য সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীতে ৩৩টি ওয়ার্ডের ১০ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এরমধ্যে শিশু রয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ। তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় শহরের বুকে স্টেডিয়াম, ক্রিকেট গার্ডেন, কালেক্টরেট মাঠ থাকলেও আর তেমন কোন মাঠের নেই সুব্যবস্থা। আবার মাঠে সকল শিশু উন্মুক্তভাবে খেলাধুলার সুযোগ থেকেও বি ত। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ। তবে প্রাতিষ্ঠানিক মাঠেও শিক্ষার্থী কিংবা আশেপাশের শিশু-কিশোররা ছাড়া অন্যদের নেই খেলার সুযোগ। মহানগরীর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে দৃশ্য গ্রামীণ পরিবেশের। সেখানে মাঠ বলতে ফসলি জমির উপর কিংবা ঈদগা মাঠের নির্ভর করে থাকে। ফসল তোলার উৎসব শেষে ফুটবল নিয়ে খেলার ধুম পড়ে যায় শিশু-কিশোর ও উঠতি বয়সী যুবকদের মাঝে। গ্রামীণ কিছু খেলার পাশাপাশি ক্রিকেট, ফুটবল খেলায় শৈশবের দৃশ্য নজর কাড়ে যে কারোই। তবে নগরায়ণের ফলে এসব মাঠে খেলাধুলা ও দর্শকের উচ্ছ্বাস হারিয়ে গেছে ছোট-বড় দোকানপাট, বাজার ও অট্টালিকা মাঝে। নগরীর ২৪নং ওয়ার্ড তাঁতীপাড়া হাউজিং মাঠ এলাকার সৈয়দ আলী বলেন, ছোট থেকে বড় হয়েছি এখানে খেলাধুলা করে। কিন্তু এখন আর মাঠ নাই, চারিদিকে বিল্ডিংয়ের সমাহার। এলাকার সব শিশু কিশোর মিলে মৌসুমে প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা হতো। গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অতিথি বানিয়ে শিশুদের উৎসাহিত করতে পুরস্কৃত করা হতো। সেইদিন এখন শুধু অতীত। এখন প্রজন্মরা ব্যস্ত মোবাইল নিয়ে। তাদের মাঝে শ্রদ্ধাবোধ কমে গেছে। সচেতন মানুষ বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার অতি গুরুত্বপূর্ণ। মনকে ভালো রাখতে, মেধার বিকাশ ঘটাতে খেলাধুলার চর্চা করতে হবে। প্রতিদিনের তালিকায় আধাঘণ্টা হলেও খেলাধুলার চর্চা করা উচিত। যেহেতু আধুনিকায়নে সবকিছু পরিবর্তনের পাশাপাশি ফাঁকা মাঠগুলো ভবনের দখলে। তবুও ছেলেমেয়েদের পার্থক্য না রেখে উভয়ের খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে মাঠের ব্যবস্থা করা জরুরি। রংপুর আরসিসিআই স্কুল এন্ড কলেজের ক্রীড়াশিক্ষক আবু তাহের বলেন, সুস্থ থাকতে খেলাধুলা চর্চার বিকল্প নেই। শিশু-কিশোররা একে অপরের মাঝে আনন্দে বেড়ে উঠতে খেলার মাঠ বেশ ভূমিকা রাখে। একটা সময় প্রতিটি এলাকায়, অলিগলিতে খেলার মাঠ ছিল, এখন অনেকটাই কমে গেছে। ফলে শিশুরা খেলাধুলার প্রতি অনাগ্রহী হয়ে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ‘মাদককে না বলে’ শিশু-কিশোরদের বেড়ে উঠতে, খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে মোবাইল ফোনে অনাগ্রহী করতে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সচেতন মহল।