১১:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বিদ্যুৎ আদালতের বিচারক

Oplus_131072

সরকারি কর্মকর্তাদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি তৈরির পেছনে থাকে অনৈতিক সুবিধা অর্জন। কিন্তু বগুড়ার বিদ্যুৎ আদালতের বিচারকের সম্পদের হিসাব যেন চোখ কপালে ওঠার মতো। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বগুড়া বিদ্যুৎ আদালতে যোগদান করলেও গত ছয় মাসের অবৈধ ইনকামের টাকায় কিনেছেন বগুড়া শহরের আভিজাত এলাকা উপশহরের ২৯ নম্বর রোডের পাঁচ শতক জমির উপরে নির্মাণকৃত একটি বাড়ি। সরকারি আজিজুল হক কলেজ এলাকায় শেরে বাংলা নগরে তিন শতক জমি। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে স্থাবর কোন সম্পত্তি কিনতে গেলে লাগবে হাইকোর্টের অনুমোদন। কিন্তু তিনি হাইকোর্টের অনুমোদন ছাড়াই গত ছয় মাসের অনৈতিক সুবিধা অর্জন করে কিনেছেন দুই কোটি টাকার জমি। আছে শেয়ার ব্যবসা, দুইটি ব্যাংক একাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকার ট্রানজেকশন।

 

বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের দাবিতে সারাদেশে যখন উত্তাল বাংলাদেশ তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ পলায়নের পর বিভিন্ন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অফিস এবং বাড়িতে একের পর এক সম্পদের তথ্য এবং নগদ অর্থ বের করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঠিক সেই মুহূর্তে বগুড়ায় বিদ্যুৎ আদালতের চত্বরে আসতে থাকে একের পর এক অভিযোগ। আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে থাকে তিনি সাধারণ কেউ নন, তিনি নিজেও একজন বিচারক অথচ তার বিরুদ্ধেই হাজারো অভিযোগের পাহাড়।

 

বগুড়ায় কর্মরত বিদ্যুৎ আদালতের বিচারক আবুল বাসেত মোহাম্মদ বুলু মিয়া, (যুগ্ম জেলা জজ)। কর্মস্থল বগুড়া হলেও তার জন্মস্থান পার্শ্ববর্তী জেলা জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা। প্রভাবশালী এক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতার সুপারিশে চাকরি পেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন।

 

বগুড়ার সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখা একাউন্ট নাম্বার 5106001020833 ও পূবালী ব্যাংক সাতমাথা গালা পট্টি শাখায় একাউন্ট নাম্বার 3372101099535 ব্যবহার করে ঘুষের টাকা নিজের বউয়ের একাউন্টে ট্রান্সফার করেন। চলতি বছরের ২০ শে মার্চ তিনটি ম্যামোতে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে পারাপার করা হয়েছে।

 

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, গত রমজানে বগুড়া নিউ মার্কেটে প্রাইড শোরুম এ গিয়ে অভিযোগ না থাকলেও বৈদ্যুতিক লাইন কেটে দেওয়া হয় এবং মনগড়া একটি মামলা করা হয়। ১১ লক্ষ টাকা জরিমানা লিখলেও পরবর্তীতে প্রাইড শোরুমের স্বত্বাধিকারী ফিরোজ খানকে বলা হয় দেড় লক্ষ টাকা সরকারি চালানের মাধ্যমে জমা দেবে আর পাঁচ লক্ষ টাকা নিজের একাউন্টে জমা দেবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে তিনি বউয়ের একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করেন।

 

কলোনী এলাকার রিটু নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তার বাড়িতে বৈদ্যুতিক গোলযোগ হবার কারণে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মেইন খুঁটি থেকে লাইন নেন কোন মাধ্যমে জানতে পেরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াই ঘটনাস্থলে যান বগুড়ার বিদ্যুৎ আদালতের বিচারক। পরে তার কাছ থেকে নগদ এক লক্ষ টাকা এবং আরো তিন লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন। লিখিত অভিযোগে ব্যবসায়ী রিটু বলেন, আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে আমার নামে মামলা এবং আমাকে জেলে নিয়ে যাবে এমন হুমকি দিয়ে নগদ এক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আরও তিন লক্ষ টাকা পেশকার মশিউর রহমানকে দিতে বলেছে।

 

বগুড়া নিউমার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির যুগ্ম  সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ না পেলেও লাইন কেটে দেয় এবং আমার নামে মামলা দেয়। আমি তাকে মামলা দিতে নিষেধ করলেও সে মামলা দিয়ে এক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় এবং সরকারি কোষাগারে এক লক্ষ টাকা জমা দিতে বলে। পরে আমি আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তিনি আমাকে গ্রেফতার করে, তখন আমার ভাই পেশকারকে বলে আপনারা ঘুষ চেয়েছিলেন আমরা তো ঘুষ দিয়েছি তার পরেও আমার ভাইকে কেন গ্রেপ্তার করলেন তখন পেশকার মশিউর আরো ৫ হাজার টাকা দাবি করেন এবং ৩০ মিনিট পর বিচারক তাকে ছেড়ে দেয়।

 

অপরাধের মাত্রা শুধু এখানেই শেষ নয়, জয়পুরহাটে অবস্থানরত তার বাবা চোখের কর্নিয়া জনিত সমস্যা হওয়ায় জয়পুরহাটে একজন ডাক্তারকে দেখান পরবর্তীতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শাহিন কে দেখান, তিনি যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে চোখের অপারেশন করতে বলেন কিন্তু অপারেশন না করে সময়ক্ষেপণ করে ঢাকায় নিয়ে যান। ঢাকাতে গিয়ে অপারেশনের পর ডাক্তার তার চোখ অচল বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু বিদ্যুৎ আদালতের বিচারক ডাক্তার শাহীন এর নামে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে পেশকার মশিউর কে পাঠিয়ে দফারফা করে অনৈতিক সুবিধা হাসিলের চেষ্টা করেন।

 

এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে মশিউর রহমান সাংবাদিকদের সামনে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। পরে তাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বদলি করে।

 

বিচারকের চেম্বারে একাধিকবার সাংবাদিকদের পরিচয় কার্ড পাঠিয়ে দিলেও তিনি দেখা করতে ও কথা বলতে রাজি হয়নি। পরে আদালত থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তার ঘুষ গ্রহণ এবং অনৈতিক সুবিধা অর্জনের বিষয়ে একাধিক প্রশ্ন করলেও কোন কথা না বলে তিনি পালিয়ে যান। সম্প্রতি তাকে দিনাজপুরে বদলী করা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বিদ্যুৎ আদালতের বিচারক

আপডেট সময় : ০৩:৪৩:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

সরকারি কর্মকর্তাদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি তৈরির পেছনে থাকে অনৈতিক সুবিধা অর্জন। কিন্তু বগুড়ার বিদ্যুৎ আদালতের বিচারকের সম্পদের হিসাব যেন চোখ কপালে ওঠার মতো। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বগুড়া বিদ্যুৎ আদালতে যোগদান করলেও গত ছয় মাসের অবৈধ ইনকামের টাকায় কিনেছেন বগুড়া শহরের আভিজাত এলাকা উপশহরের ২৯ নম্বর রোডের পাঁচ শতক জমির উপরে নির্মাণকৃত একটি বাড়ি। সরকারি আজিজুল হক কলেজ এলাকায় শেরে বাংলা নগরে তিন শতক জমি। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে স্থাবর কোন সম্পত্তি কিনতে গেলে লাগবে হাইকোর্টের অনুমোদন। কিন্তু তিনি হাইকোর্টের অনুমোদন ছাড়াই গত ছয় মাসের অনৈতিক সুবিধা অর্জন করে কিনেছেন দুই কোটি টাকার জমি। আছে শেয়ার ব্যবসা, দুইটি ব্যাংক একাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকার ট্রানজেকশন।

 

বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের দাবিতে সারাদেশে যখন উত্তাল বাংলাদেশ তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ পলায়নের পর বিভিন্ন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অফিস এবং বাড়িতে একের পর এক সম্পদের তথ্য এবং নগদ অর্থ বের করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঠিক সেই মুহূর্তে বগুড়ায় বিদ্যুৎ আদালতের চত্বরে আসতে থাকে একের পর এক অভিযোগ। আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে থাকে তিনি সাধারণ কেউ নন, তিনি নিজেও একজন বিচারক অথচ তার বিরুদ্ধেই হাজারো অভিযোগের পাহাড়।

 

বগুড়ায় কর্মরত বিদ্যুৎ আদালতের বিচারক আবুল বাসেত মোহাম্মদ বুলু মিয়া, (যুগ্ম জেলা জজ)। কর্মস্থল বগুড়া হলেও তার জন্মস্থান পার্শ্ববর্তী জেলা জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা। প্রভাবশালী এক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতার সুপারিশে চাকরি পেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন।

 

বগুড়ার সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখা একাউন্ট নাম্বার 5106001020833 ও পূবালী ব্যাংক সাতমাথা গালা পট্টি শাখায় একাউন্ট নাম্বার 3372101099535 ব্যবহার করে ঘুষের টাকা নিজের বউয়ের একাউন্টে ট্রান্সফার করেন। চলতি বছরের ২০ শে মার্চ তিনটি ম্যামোতে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে পারাপার করা হয়েছে।

 

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, গত রমজানে বগুড়া নিউ মার্কেটে প্রাইড শোরুম এ গিয়ে অভিযোগ না থাকলেও বৈদ্যুতিক লাইন কেটে দেওয়া হয় এবং মনগড়া একটি মামলা করা হয়। ১১ লক্ষ টাকা জরিমানা লিখলেও পরবর্তীতে প্রাইড শোরুমের স্বত্বাধিকারী ফিরোজ খানকে বলা হয় দেড় লক্ষ টাকা সরকারি চালানের মাধ্যমে জমা দেবে আর পাঁচ লক্ষ টাকা নিজের একাউন্টে জমা দেবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে তিনি বউয়ের একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করেন।

 

কলোনী এলাকার রিটু নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তার বাড়িতে বৈদ্যুতিক গোলযোগ হবার কারণে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মেইন খুঁটি থেকে লাইন নেন কোন মাধ্যমে জানতে পেরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াই ঘটনাস্থলে যান বগুড়ার বিদ্যুৎ আদালতের বিচারক। পরে তার কাছ থেকে নগদ এক লক্ষ টাকা এবং আরো তিন লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন। লিখিত অভিযোগে ব্যবসায়ী রিটু বলেন, আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে আমার নামে মামলা এবং আমাকে জেলে নিয়ে যাবে এমন হুমকি দিয়ে নগদ এক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আরও তিন লক্ষ টাকা পেশকার মশিউর রহমানকে দিতে বলেছে।

 

বগুড়া নিউমার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির যুগ্ম  সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ না পেলেও লাইন কেটে দেয় এবং আমার নামে মামলা দেয়। আমি তাকে মামলা দিতে নিষেধ করলেও সে মামলা দিয়ে এক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় এবং সরকারি কোষাগারে এক লক্ষ টাকা জমা দিতে বলে। পরে আমি আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তিনি আমাকে গ্রেফতার করে, তখন আমার ভাই পেশকারকে বলে আপনারা ঘুষ চেয়েছিলেন আমরা তো ঘুষ দিয়েছি তার পরেও আমার ভাইকে কেন গ্রেপ্তার করলেন তখন পেশকার মশিউর আরো ৫ হাজার টাকা দাবি করেন এবং ৩০ মিনিট পর বিচারক তাকে ছেড়ে দেয়।

 

অপরাধের মাত্রা শুধু এখানেই শেষ নয়, জয়পুরহাটে অবস্থানরত তার বাবা চোখের কর্নিয়া জনিত সমস্যা হওয়ায় জয়পুরহাটে একজন ডাক্তারকে দেখান পরবর্তীতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শাহিন কে দেখান, তিনি যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে চোখের অপারেশন করতে বলেন কিন্তু অপারেশন না করে সময়ক্ষেপণ করে ঢাকায় নিয়ে যান। ঢাকাতে গিয়ে অপারেশনের পর ডাক্তার তার চোখ অচল বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু বিদ্যুৎ আদালতের বিচারক ডাক্তার শাহীন এর নামে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে পেশকার মশিউর কে পাঠিয়ে দফারফা করে অনৈতিক সুবিধা হাসিলের চেষ্টা করেন।

 

এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে মশিউর রহমান সাংবাদিকদের সামনে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। পরে তাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বদলি করে।

 

বিচারকের চেম্বারে একাধিকবার সাংবাদিকদের পরিচয় কার্ড পাঠিয়ে দিলেও তিনি দেখা করতে ও কথা বলতে রাজি হয়নি। পরে আদালত থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তার ঘুষ গ্রহণ এবং অনৈতিক সুবিধা অর্জনের বিষয়ে একাধিক প্রশ্ন করলেও কোন কথা না বলে তিনি পালিয়ে যান। সম্প্রতি তাকে দিনাজপুরে বদলী করা হয়েছে।