◉ছাত্রলীকে বুঝতে হবে অপরাজনীতি করে কোনো শক্তি টিকে থাকতে পারে না। – অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন
◉যে আদর্শ গনহত্যা করে, স্বৈরাচার তৈরি করে সে আদর্শ থাকতে পারে না। Ñ রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক, গণঅধিকার পরিষদ
◉ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ করলেই মুছে ফেলা যাবে না- রুমিন ফারহানা
◉মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলার মানুষের সকল লড়াই সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলো সেই ছাত্রলীগ তারই অপকর্মের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে – সোহেল তাজ
আওয়ামী লীগের শাসনকালে বিতর্কিত কর্মকান্ড ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভূমিকার কারণে নিষিদ্ধ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে। অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি জানানো হচ্ছিল শিক্ষার্থী, ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে। অবশেষে বুধবার সরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সর্বপ্রাচীন ও ইতিহাসের সঙ্গে অতপ্রতভাবে জড়িত এই সংগঠনকে। এঘটনাকে দেশের রাজনীতির নতুন অধ্যায় হিসেবে মনে করছেন অনেক। কারও মতে এটি স কল রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য শিক্ষা। আবার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়া নিয়েও শঙ্কা অনেকের।
বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন মনে করেন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দায় ছাত্রলীগের অদূরদর্শী নেতৃতের। সব দলের জন্যও এটি বড় শিক্ষা বলেও মনে করেন তিনি। সবুজ বাংলার সঙ্গে আলাপকালে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে যারা ছিলো তাদের অদূরদর্শীতায় সংগঠনটিকে এই পর্যায়ে এনেছে। এধরণের পরিবেশ কেনো সৃষ্টি করা হলো, যে তাদের এই পরিস্থিতিতে পড়তে হলো। যদিও নিষিদ্ধ করে কোনো সংগঠনকে মুছে ফেলা যায় না। তবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের বুঝতে হবে, দেশের মানুষকে অত্যাচার করে, লুটপাট করে কোনো শক্তি টিকে থাকতে পারে না। এটা আগামীতে যারা ক্ষমতায় আছে, যারা অতীতে ছিলো, ভবিষ্যতে যারা আসবে সবার জন্য বড় শিক্ষা যে রাাষ্ট্র ও জনগণের বিরুদ্ধে যেয়ে টিকে থাকা যায় না।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান সবুজ বাংলাকে বলেন, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দায় শেখ হাসিনার, ছাত্রলীগের নিজের। তারা যেভাবে আবরার, হাফিজুল, আবু বকরকে হত্যা করেছে, ছাত্র আন্দোলনে যেভাবে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে। ক্যাম্পাসে দখলদ্বারিত্ব, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটিয়েছে, এমন কোনো অপরাধ নেই তারা করেনি। অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে। এখন তারা যেভাবে মাস্ক পরে জঙ্গি সংগঠনের মত কর্মসূডডিচ পালস করছে, ভবিষ্যতে বোমাবাজি, গুপ্ত হত্যার ঘটনাও ঘটাবে। অন্য সংগঠনগুলোর জন্যও শিক্ষা যে আগের রাজনীতি যে থাকবে না। গুম, খুন, চাঁদাবজি, হানাহানি করে রাজনীতি আগামীতে কেউ করলে তার অবস্থাও ছাত্রলীগের মত হবে। এটা অন্য রাজনৈতিক সংগঠগুলোর জন্যও শিক্ষার। যেনো কেউ ভবিষ্যতে ছাত্রলীগ হয়ে না ওঠে।
সংগঠন নিষিদ্ধ করে আদর্শ মুছে ফেলা যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনের অন্যতম এই মুখপাত্র বলেন, আওয়ামী লীগের আদর্শ গনহত্যা ও সৈ¦রাচারের। যে আদর্শ গনহত্যা করে, স্বৈরাচার তৈরি করে সে আদর্শ থাকতে পারে না। আওয়ামী লীগের আদর্শ স্বৈরাচার ও গণহত্যার। শেখমুজিব স্বাধীনতার পর বাকশাল কায়েম করে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠ করেছে, ৩০ হাজার জাসদ নেতাকর্মীকে হত্য করেছে। শেখ হাসিনাও চব্বিশে গণহত্যা চালিয়েছে। তাই তারা যে ব্যানারে সংগঠতি হচ্ছে সেটা নিষিদ্ধ হওয়া জরুরী। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ ও তার সকল সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি থাকবে আমাদের।
শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির সাবেক এমপি রুমিন ফারহানা বলেন, যেকোনো ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ করলেই, তার সদস্যদের মন থেকে এই সংগঠনকে তুলে ফেলা যাবে না। এখন তারা তাদের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করতে পারবে না। ফলে তারা এমন কিছু করবে, যা রাষ্টের জন্য, সরকারের জন্য ভালো হবে না।
জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, অন্তর্র্বতী সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে। কালকে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করলে করণীয় কী। জামায়াতে ইসলামও কিন্তু কোনো ফ্যাসিবাদী ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি। শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন স্বৈরশাসন চালিয়েছে, কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ করেনি। আপনারা (অন্তর্র্বতী সরকার) নিষিদ্ধ করতেছেন, সেটার ইফেক্ট মনে রেখেই করবেন বলে আশা করি। পাপকে ঘৃণা করেন পাপীকে না। যারা পাপ করেছে আপনারা তো তাদের শাস্তি দিতে পারলেন না। অনেক অপরাধী-দুর্নীতিবাজকে অন্তর্র্বতী সরকার দেশ ছাড়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের ঘটনায় ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, নিয়তির কি নির্মম পরিহাস যে ছাত্র সংগঠন ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ বাংলার মানুষের সকল লড়াই সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলো সেই ছাত্রলীগ তারই অপকর্মের জন্য নিষিদ্ধ হলো।’ পোস্টের শেষের দিকে সোহেল তাজ লিখেন, বি. দ্র. ছাত্রলীগ/আওয়ামী লীগের ব্রেইন ওয়াশড নষ্ট পচা নীতি/আদর্শ বিচ্যুত লুটেরা খুনি হত্যা গুম নির্যাতনকারীদের সমর্থক সকলকে বলবো অনতিবিলম্বে আমার এই ফেসবুক পেজটি আনফলো করতে- আরও অনুরোধ থাকবে নিজের বিবেককে জাগিয়ে আত্ম-উপলব্ধি আত্ম-সমালোচনা করে অনুশোচনা করার।’
বুধবার রাতে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নসহ নানা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এ সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।
সরকারের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এসব কারণ উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং এই আইনের তফসিল-২-এ এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, আমরা মনে করি- এই সরকারেরই আইনগত, গণতান্ত্রিক ও নৈতিক বৈধতা নেই। যাদের নিজেদেরই বৈধতা নেই, তাদের এই হাস্যকর কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চিন্তিত নয়। এই সরকারের হাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মী এবং পুলিশের রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। নিজেদের গণহত্যার দায় আমাদের ওপরে চাপানোর জন্যেই এই সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে।























