হিমালয় কন্যা নেপালকে হারিয়ে দেশের মাটিতে ট্রফি নিয়ে আসা বাঘিনীদের গোলরক্ষক ইয়ারজানের বাড়ীতে নীরব উল্লাস। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম। নেপালে অনূর্ধ্ব-১৬ নারী সাফ চ্যা¤িপয়নশিপ আসরে বাংলাদেশ দল শিরোপা জেতার পর আলোচনায় এসেছিলেন পঞ্চগড়ের ফুটবল কন্যা ইয়ারজান। এবারও সেই নেপালের মাঠেই নারী সাফ চ্যা¤িপয়নশিপে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয়বারের মত ইয়ারজানের হাতে চ্যা¤িপয়নের ট্রফি ওঠায় নীরব উচ্ছ্বাস বইছে ইয়ারজানের বাড়িতে। গত বুধবার রাতে কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে নারী সাফ চ্যা¤িপয়নশিপ-২০২৪ সালের আসরে চ্যা¤িপয়ন হয় বাংলাদেশ। এ অর্জনে ইয়ারজানের দৃশ্যমান কৃতিত্ব না থাকলেও বাঘিনীদের তালিকায় থাকাটাই গর্বের মনে করছেন তার বাবা-মা। মেয়ের হাতে চ্যা¤িপয়ন ট্রফি দেখেই উচ্ছ্বসিত তারা। ইয়ারজানের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামে। হত-দরিদ্র পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা এই ফুটবল কন্যা বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে ঈর্ষনীয় সাফল্য দেখিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলে। সেরা গোলরক্ষক হয়েছিলেন অনুর্ধ্ব-১৬ নারী সাফ চ্যা¤িপয়নশিপের সবশেষ আসরে। আজ ১ নভেম্বর শুক্রবার ইয়ারজানদের বাড়িতে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। আগের সেই ভাঙা কুড়েঘরের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে একটি রঙিন পাকা ঘর। ঘরের নাম ইয়ারজান নীড়। বাড়ির ভিতরে সাফজয়ী মেয়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছেন বাবা আব্দুর রাজ্জাক ও মা রেনু বেগম। তারা বলেন, বাংলাদেশ দল শিরোপা জেতায় তারা আনন্দে আত্মহারা। তবে এ আনন্দ অনাড়ম্বর। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে চ্যা¤িপয়ন হয়ে আমার মেয়ে ইয়ারজান আমাদেরকে গর্বিত করলেও আমার আশা ছিলো ইয়ারজান জাতীয় টিমে খেলবে, এখন আমার মেয়ে জাতীয় টিমে খেলছে। সেই টিম বড় সাফল্য অর্জন করেছে। এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। আমাদের মেয়েরা আরও সাফল্য বয়ে আনুক এটাই চাওয়া। মা রেনু বেগম বলেন, চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। খুব কষ্ট করে আমার মেয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। মানুষের কৃষি জমিতে কাজ করে মেয়েকে বড় করেছি। অভাবের সংসারে মেয়েকে তিনবেলা ঠিকমত খাওয়াতে পারিনি। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে, কষ্টের প্রতিদান ইয়ারজান আমাকে দিয়েছে। মেয়ের সাফল্যেই ভালো আছি, পাকা ঘরে ঘুমাতে পারছি। ইয়ারজানের দল আরও বড় অর্জন দেশকে উপহার দিবে এমনটাই চাওয়া। মুঠোফোনে ইয়ারজান বলেন,এর আগে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে খেললেও এবারই সাফ নারী দলের হয়ে খেলছি। প্রথমবারই চ্যা¤িপয়ন হবার গৌরবের অংশী হতে পেরে ভালো লাগছে। ভিন্নরকম অনুভুতি, বুঝাতে পারবো না। ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক শারীরিকভাবে অসুস্থ। কোন কাজ করতে পারেন না। ফলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল মা রেনু বেগমই। রেনু বেগমের উপার্জনেই চলতো তাদের সংসার। স¤পদ বলতে কেবল ভিটেমাটি। দৈনিক ২৫০ টাকা মজুরিতে মানুষের কৃষি জমিতে কাজ করতেন রেনু বেগম। এ দিয়েই অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা খরচ এবং সংসার চালানো হতো। কষ্টের সংসারে অনেক সময় মেয়েকে অনুশীলনে যাওয়ার যাতায়াত ভাড়াও দিতে পারতেন না। জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত গ্রামটিতে সড়কের পাশেই ছোট ছোট দুইটি ঘর ছিলো তাদের। এর মধ্যে একটি ঘর ছিলো একেবারেই জরাজীর্ণ। ফুটবলার মেয়ের সাফল্যে বদলে যায় পরিবারটির জীবন। রেনু বেগম এখন আর অন্যের জমিতে কাজ করেন না। এখন তার পরিচয় তিনি ইয়ারজানের মা। হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম আলম বলেন, ইয়ারজানের সাফল্য আমাদেরকে গর্বিত করেছে। সে জাতীয় দলের হয়ে খেলছে, আরেকটা শিরোপা জেতার নেপথ্যে ছিল এটাও আমাদের বড় প্রাপ্তি। সামনের দিনে ইয়ারজানের আরো সাফল্য কামনা করেন তিনি।
শিরোনাম
নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক ইয়ারজানের বাড়ীতে নীরব উল্লাস
মেয়েরা আরও বড় অর্জন দেশকে উপহার দিবে এমনটাই চাওয়া
-
রংপুর ব্যুরো - আপডেট সময় : ০৯:১৪:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪
- ।
- 109
জনপ্রিয় সংবাদ


























