১০:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যশোরে ৭ দিনে ছুরিকাঘাতে  নারীসহ ৩ খুন 

যশোরে গত এক সপ্তাহে ছুরিকাঘাতে নারীসহ ৩ জন খুন হয়েছেন। যশোর শহরের খোলাডাঙ্গা সার গোডাউনের পিছন, খোলাডাঙ্গা ব্র্যাক অফিস সংলগ্ন মসজিদের পাশে ও সদর উপজেলার শেখহাটি আদর্শপাড়ায় এ ঘটনাটি ঘটে। এছাড়া ৪ জন ছুরিকাহত হয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪ নভেম্বর (সোমবার) এশার নামায শেষ নিজের স্যানিটারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন খোলাডাঙ্গার আজিজুল ইসলাম ওরফে মিন্টু মুন্সির ছেলে জামায়াত নেতা আমিনুল ইসলাম সজল (৪৪)। সময় সার গোডাউনের পিছনে পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্ত তার ওপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আনলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক  সাকিব মোহাম্মদ আল হাসান তাকে (সজল) মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনদের অভিযোগ,  খোলাডাঙ্গা রেললাইনের পাশের একটি জমি নিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসী কামরুলের সাথে সজলের বিরোধ চলে আসছে। এরই জের ধরে কামরুলের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা তাকে খুন করতে পারে। তাদের নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা করা হবে। সজল খুনের প্রতিবাদে রাতে লাশ নিয়ে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ যশোর জেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।  নিহত সজলের শরীরে অন্তত ১৩ টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিলো।
গত ২ (শনিবার) নভেম্বর ভোরে খোলাডাঙ্গা ব্র্যাক অফিস সংলগ্ন মসজিদের পাশের রাস্তা থেকে স্থানীয়রা ছুরিকাহত আসাদুল ওরফে আসাদকে (৩৫) যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনি খড়কি দক্ষিণপাড়ার জহুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি পেশায় ট্রাকের হেলপার ছিলেন। ১ নভেম্বর (শুক্রবার) রাতের কোন এক সময় আসাদকে ছুরিকাঘাতের পর ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
এর আগে ৩১ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি আর্দশপাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে শাহানারা বেগমের (৫০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে তাকে খুন করে।  শাহানারা বেগম শেখহাটি আর্দশপাড়া এলাকার ইজবাইক চালক আতিয়ার রহমানের স্ত্রী। আতিয়ার রহমান জানান, ৩০ অক্টোবর সকালে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে  যশোর ডায়াবেটিক হাসপাতালে যান। ডাক্তার দেখানো শেষে তারা বাড়ি ফিরে আসেন। বিকেলে তিনি ইজিবাইক চালানোর উদ্দেশ্যে শহরে চলে যান। বাড়িতে শাহানারা বেগম একাই ছিলেন।
আতিয়ার রহমান জানান, তিনি রাতে বাড়ি ফিরে দেখতে পান প্রধান ফটক ও ঘরের দরজায় তালা ঝুলছে৷  তার ছেলে ইউসুফকে নিয়ে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজাখুজি করেন।  এরপর ৩১ অক্টোবর সকাল ৮ টার দিকে তিনি (আতিয়ার) তার ছেলে ইউসুফ ও সোহেল বাড়ির দেয়াল বেয়ে ভিতরে যান। এসময় তারা বসত ঘরের দরজার সাথে রক্ত মাখা কাপড়ের টুকরা দেখে তালা ভেঙে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে শাহানারা বেগমের রক্তাক্ত মরদেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ১ নভেম্বর রাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ঝাউডাঙ্গা গ্রামে  অভিযান চালিয়ে ২ জনকে গ্রেফতার করে পিবিআই। আটকরা হলেন, যশোর সদর  তালবাড়িয়া খালপাড় এলাকার মৃত হোসেন আলীর ছেলে বাবলা (৩০) ও নিহত শাহানারার মামাতো ভাই সুমন ইসলাম (৩২)।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আমিনুল ইসলাম সজল ও আসাদুল ওরফে আসাদের ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখে মনে হয়েছে পেশাদার খুনিরা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত।
এদিকে, হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতার তথ্যানুযায়ী গত ১ সপ্তাহে ৪ জন দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে জখম হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। ছিনতাইকারী ও প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে তারা জখম হয়েছেন।
এই বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, ইতিমধ্যে শাহানারা খাতুন হত্যার সাথে জড়িত দুই জন আটক হয়েছে। সজল ও আসাদ হত্যাকারীরা বেশি দিন পালিয়ে থাকতে পারবে না। খুন জখমে ছুরির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ উঠতি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
জনপ্রিয় সংবাদ

যশোরে ৭ দিনে ছুরিকাঘাতে  নারীসহ ৩ খুন 

আপডেট সময় : ০৮:২৫:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
যশোরে গত এক সপ্তাহে ছুরিকাঘাতে নারীসহ ৩ জন খুন হয়েছেন। যশোর শহরের খোলাডাঙ্গা সার গোডাউনের পিছন, খোলাডাঙ্গা ব্র্যাক অফিস সংলগ্ন মসজিদের পাশে ও সদর উপজেলার শেখহাটি আদর্শপাড়ায় এ ঘটনাটি ঘটে। এছাড়া ৪ জন ছুরিকাহত হয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪ নভেম্বর (সোমবার) এশার নামায শেষ নিজের স্যানিটারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন খোলাডাঙ্গার আজিজুল ইসলাম ওরফে মিন্টু মুন্সির ছেলে জামায়াত নেতা আমিনুল ইসলাম সজল (৪৪)। সময় সার গোডাউনের পিছনে পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্ত তার ওপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আনলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক  সাকিব মোহাম্মদ আল হাসান তাকে (সজল) মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনদের অভিযোগ,  খোলাডাঙ্গা রেললাইনের পাশের একটি জমি নিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসী কামরুলের সাথে সজলের বিরোধ চলে আসছে। এরই জের ধরে কামরুলের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা তাকে খুন করতে পারে। তাদের নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা করা হবে। সজল খুনের প্রতিবাদে রাতে লাশ নিয়ে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ যশোর জেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।  নিহত সজলের শরীরে অন্তত ১৩ টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিলো।
গত ২ (শনিবার) নভেম্বর ভোরে খোলাডাঙ্গা ব্র্যাক অফিস সংলগ্ন মসজিদের পাশের রাস্তা থেকে স্থানীয়রা ছুরিকাহত আসাদুল ওরফে আসাদকে (৩৫) যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনি খড়কি দক্ষিণপাড়ার জহুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি পেশায় ট্রাকের হেলপার ছিলেন। ১ নভেম্বর (শুক্রবার) রাতের কোন এক সময় আসাদকে ছুরিকাঘাতের পর ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
এর আগে ৩১ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি আর্দশপাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে শাহানারা বেগমের (৫০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে তাকে খুন করে।  শাহানারা বেগম শেখহাটি আর্দশপাড়া এলাকার ইজবাইক চালক আতিয়ার রহমানের স্ত্রী। আতিয়ার রহমান জানান, ৩০ অক্টোবর সকালে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে  যশোর ডায়াবেটিক হাসপাতালে যান। ডাক্তার দেখানো শেষে তারা বাড়ি ফিরে আসেন। বিকেলে তিনি ইজিবাইক চালানোর উদ্দেশ্যে শহরে চলে যান। বাড়িতে শাহানারা বেগম একাই ছিলেন।
আতিয়ার রহমান জানান, তিনি রাতে বাড়ি ফিরে দেখতে পান প্রধান ফটক ও ঘরের দরজায় তালা ঝুলছে৷  তার ছেলে ইউসুফকে নিয়ে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজাখুজি করেন।  এরপর ৩১ অক্টোবর সকাল ৮ টার দিকে তিনি (আতিয়ার) তার ছেলে ইউসুফ ও সোহেল বাড়ির দেয়াল বেয়ে ভিতরে যান। এসময় তারা বসত ঘরের দরজার সাথে রক্ত মাখা কাপড়ের টুকরা দেখে তালা ভেঙে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে শাহানারা বেগমের রক্তাক্ত মরদেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ১ নভেম্বর রাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ঝাউডাঙ্গা গ্রামে  অভিযান চালিয়ে ২ জনকে গ্রেফতার করে পিবিআই। আটকরা হলেন, যশোর সদর  তালবাড়িয়া খালপাড় এলাকার মৃত হোসেন আলীর ছেলে বাবলা (৩০) ও নিহত শাহানারার মামাতো ভাই সুমন ইসলাম (৩২)।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আমিনুল ইসলাম সজল ও আসাদুল ওরফে আসাদের ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখে মনে হয়েছে পেশাদার খুনিরা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত।
এদিকে, হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতার তথ্যানুযায়ী গত ১ সপ্তাহে ৪ জন দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে জখম হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। ছিনতাইকারী ও প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে তারা জখম হয়েছেন।
এই বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, ইতিমধ্যে শাহানারা খাতুন হত্যার সাথে জড়িত দুই জন আটক হয়েছে। সজল ও আসাদ হত্যাকারীরা বেশি দিন পালিয়ে থাকতে পারবে না। খুন জখমে ছুরির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ উঠতি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।