০২:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আপাতত দিবসভিত্তিক কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ থাকবে আ.লীগ

◉ দলীয় ব্যানারে কর্মসূচিতে সাড়া নেই নেতাকর্মীদের
◉ দলের অস্তিত্ব টেকাতে নেতাকর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনাই বড় চ্যালেঞ্জ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর তিন মাসের বেশি সময় পার হলেও রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয় ও কোণঠাসা অবস্থায় আছে দলটির নেতাকর্মীরা। দলের শীর্ষ নেতাদের সিংহভাগই দেশে বা দেশের বাইরে পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। আর অনেক নেতা কারাগারে। সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত অবস্থায় দলের তৃণমূল। গত ১৫ আগস্ট শোক দিবস ও ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবসে দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি দিলেও নেতাকর্মীদের সাড়া মেলেনি। এমতবস্থায় দেশের সর্বপ্রাচীন ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দলটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখায় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আপাতত দিবসভিত্তিক আরও কিছু কর্মসূচি দিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায় দলটি। ভবিষ্যতে দলকে দৃশ্যমান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এই মুহূর্তে এর কোনো বিকল্প দেখছে না দলটি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ওই দিনই দেশ ছাড়েন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান এখনও জানা যায়নি। দেশের বাইরে থেকে মাঝে মাঝে বিবৃতি দিচ্ছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, এছাড়াও কয়েকটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহামুদ ও আফম বাহাউদ্দিন নাছিমকে। তারা সবাই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ৫ আগস্টের পর দুই-একটি জায়গায় দুই-একটি মিছিল ছাড়া কোথাও রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব দেখা যায়নি। এখন পর্যন্ত সেই পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনও আত্মগোপনেই রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মী। এই অবস্থায় আর কত দিন থাকতে হবে, তা এখনও তারা বুঝে উঠতে পারছেন না। সহসা পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে, এমনটা তারা ভাবতে পারছেন না বলে দলটির কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলেও তারা অপেক্ষার সান্ত্বনায় সীমাবদ্ধ রয়েছেন বলেও জানান তারা।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দলের নেতাকর্মীদের বাধ্য হয়ে আত্মগোপনে যেতে হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, বাড়িঘর ভাঙচুর, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওই অবস্থায় পালিয়ে না থাকলে অনেকেরই জীবন রক্ষা হতো না। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে থাকা ছাড়া বিকল্প কোনো পথও ছিল না। এভাবেই বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দলের নেতাকর্মীরা ১০০ দিন পার করেছেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, এখনও পরিস্থিতি ওই অবস্থায়ই রয়েছে। হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা এখনও ঘটছে। রয়েছে গ্রেপ্তারের ঝুঁকি, অধিকাংশের নামেই একাধিক মামলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এখন পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকিও রয়ে গেছে। বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের দাবি সামনে নিয়ে আসা হলেও এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ এ ধরনের কিছু ভাবছে না। বিপর্যস্ত দল নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার পরিস্থিতি নেই। সংগত কারণেই সহসাই নির্বাচনের কথা ভাববে না দলটি। তবে দিবসভিত্তিক কিছু কর্মসূচির মাধ্যমে দলকে সচল করা ও নেতাকর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখনও অধিকাংশ নেতাকর্মীর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়নি। নেতাকর্মীদের কে কোথায়, কীভাবে আছেন তাও অনেকেই জানেন না। তবে বিদেশে থাকা কিছু নেতা সেখান থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশে আত্মগোপনে থাকা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। অনেকের সঙ্গেই তারা কথা বলছেন, খোঁজখবর নিচ্ছেন। দলের সভাপতি শেখ হাসিনাও কারো কারো সঙ্গে মাঝে মধ্যে কথা বলছেন বলেও ওই নেতারা জানান।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

আপাতত দিবসভিত্তিক কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ থাকবে আ.লীগ

আপডেট সময় : ০৮:০০:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

◉ দলীয় ব্যানারে কর্মসূচিতে সাড়া নেই নেতাকর্মীদের
◉ দলের অস্তিত্ব টেকাতে নেতাকর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনাই বড় চ্যালেঞ্জ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর তিন মাসের বেশি সময় পার হলেও রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয় ও কোণঠাসা অবস্থায় আছে দলটির নেতাকর্মীরা। দলের শীর্ষ নেতাদের সিংহভাগই দেশে বা দেশের বাইরে পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। আর অনেক নেতা কারাগারে। সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত অবস্থায় দলের তৃণমূল। গত ১৫ আগস্ট শোক দিবস ও ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবসে দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি দিলেও নেতাকর্মীদের সাড়া মেলেনি। এমতবস্থায় দেশের সর্বপ্রাচীন ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দলটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখায় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আপাতত দিবসভিত্তিক আরও কিছু কর্মসূচি দিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায় দলটি। ভবিষ্যতে দলকে দৃশ্যমান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এই মুহূর্তে এর কোনো বিকল্প দেখছে না দলটি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ওই দিনই দেশ ছাড়েন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান এখনও জানা যায়নি। দেশের বাইরে থেকে মাঝে মাঝে বিবৃতি দিচ্ছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, এছাড়াও কয়েকটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহামুদ ও আফম বাহাউদ্দিন নাছিমকে। তারা সবাই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ৫ আগস্টের পর দুই-একটি জায়গায় দুই-একটি মিছিল ছাড়া কোথাও রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব দেখা যায়নি। এখন পর্যন্ত সেই পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনও আত্মগোপনেই রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মী। এই অবস্থায় আর কত দিন থাকতে হবে, তা এখনও তারা বুঝে উঠতে পারছেন না। সহসা পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে, এমনটা তারা ভাবতে পারছেন না বলে দলটির কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলেও তারা অপেক্ষার সান্ত্বনায় সীমাবদ্ধ রয়েছেন বলেও জানান তারা।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দলের নেতাকর্মীদের বাধ্য হয়ে আত্মগোপনে যেতে হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, বাড়িঘর ভাঙচুর, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওই অবস্থায় পালিয়ে না থাকলে অনেকেরই জীবন রক্ষা হতো না। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে থাকা ছাড়া বিকল্প কোনো পথও ছিল না। এভাবেই বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দলের নেতাকর্মীরা ১০০ দিন পার করেছেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, এখনও পরিস্থিতি ওই অবস্থায়ই রয়েছে। হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা এখনও ঘটছে। রয়েছে গ্রেপ্তারের ঝুঁকি, অধিকাংশের নামেই একাধিক মামলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এখন পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকিও রয়ে গেছে। বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের দাবি সামনে নিয়ে আসা হলেও এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ এ ধরনের কিছু ভাবছে না। বিপর্যস্ত দল নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার পরিস্থিতি নেই। সংগত কারণেই সহসাই নির্বাচনের কথা ভাববে না দলটি। তবে দিবসভিত্তিক কিছু কর্মসূচির মাধ্যমে দলকে সচল করা ও নেতাকর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখনও অধিকাংশ নেতাকর্মীর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়নি। নেতাকর্মীদের কে কোথায়, কীভাবে আছেন তাও অনেকেই জানেন না। তবে বিদেশে থাকা কিছু নেতা সেখান থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশে আত্মগোপনে থাকা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। অনেকের সঙ্গেই তারা কথা বলছেন, খোঁজখবর নিচ্ছেন। দলের সভাপতি শেখ হাসিনাও কারো কারো সঙ্গে মাঝে মধ্যে কথা বলছেন বলেও ওই নেতারা জানান।