১১:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে!

*তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে রিভিউ আবেদনের রায়ের অপেক্ষা
*অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি হচ্ছে না
*অন্তবর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরের চিন্তা
‘অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে নামেই হোক সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে গঠিত বর্তমান সরকারকে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করায় অসুবিধা নেই।’
-নিজাম উদ্দিন আহমদ, রাজনৈতিক গবেষক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত করার পক্ষে-বিপক্ষে কিছুদিন আগেও বাহাস হয়েছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। তখন থেকেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো অন্তর্বর্তী সরকার নয় পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনেই। তবে কিভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিবে, কারা সরকারে থাকবে কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের কি হবে এসব প্রশ্ন সামনে আসতে থাকে। বিষয়টি আরও গুরুত্ব পায় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা বাতিল করে উচ্চ আদালতের রায়ের পর। রায়ে ফিরে আসে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এখন বর্তমান সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তর করে নির্বাচন করা যায় কি না, এ নিয়েও চিন্তাভাবনা আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এ ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষা করছে তারা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। বিশেষ পরিস্থিতিতে আপিল বিভাগের রেফারেন্সের আলোকে গত ৮ আগস্ট গঠন করা হয় অন্তর্র্বতী সরকার। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে ২০১১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হওয়ায় সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার, প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টার পদ বলে কিছু নেই। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারকে আইনি ভিত্তি দিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। আইন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন আর অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারির পথে নেই সরকার। কারণ, গত ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ বাতিল ঘোষণা করায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসার পথ তৈরি হয়েছে, সেটিকেই কাজে লাগাতে চায় সরকার। সংসদ না থাকার পরও কীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কার্যকর করা যায়, সে বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।
গত ১৭ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবেই বৈধ সরকার। এর সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংঘর্ষিক অবস্থান নেই। কার অধীনে নির্বাচন হবে, ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে রিভিউর সিদ্ধান্তের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। এ ক্ষেত্রে ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের আগে আপিল বিভাগ পরপর দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। গত তিনটি নির্বাচনে নির্বাচন নয়, ভোট ডাকাতি হয়েছে; যে কারণে আপিল বিভাগের আগের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে বাধা নেই।
এর আগে ছাত্রউপদেষ্টারা রাজনৈতিক দলে অংশ নিলে কিভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ইতিমধ্যে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহামুদ জানিয়েছেন নির্বাচনে অংশ নিলে তারা পদত্যাগ করবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার আগে পরবর্তী নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অঙ্গীকার করতে হয়। জানা যায়, প্রাথমিক আলোচনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে মোট ১১ জন উপদেষ্টা সেই সরকারে থাকবেন। বাকিরা পদত্যাগ করবেন।
রাজনৈতিক গবেষক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে নামেই হোক না কেন, সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে গঠিত বর্তমান সরকারকে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করায় অসুবিধা নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে নির্বাচন করতে হলে ওই সরকারের কাঠামো অনুযায়ী অন্তর্র্বতী সরকারের আকার ছোট করতে হবে কি না, সে বিষয়ে আইনবিদেরা ভালো বলতে পারবেন। অন্তর্র্বতী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক না কেন, দল গঠনের পর সমন্বয়ক থেকে উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া তিনজনের আইনগতভাবে সরকারে থাকার কথা না।

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে!

আপডেট সময় : ০১:৪১:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

*তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে রিভিউ আবেদনের রায়ের অপেক্ষা
*অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি হচ্ছে না
*অন্তবর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরের চিন্তা
‘অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে নামেই হোক সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে গঠিত বর্তমান সরকারকে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করায় অসুবিধা নেই।’
-নিজাম উদ্দিন আহমদ, রাজনৈতিক গবেষক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত করার পক্ষে-বিপক্ষে কিছুদিন আগেও বাহাস হয়েছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। তখন থেকেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো অন্তর্বর্তী সরকার নয় পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনেই। তবে কিভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিবে, কারা সরকারে থাকবে কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের কি হবে এসব প্রশ্ন সামনে আসতে থাকে। বিষয়টি আরও গুরুত্ব পায় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা বাতিল করে উচ্চ আদালতের রায়ের পর। রায়ে ফিরে আসে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এখন বর্তমান সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তর করে নির্বাচন করা যায় কি না, এ নিয়েও চিন্তাভাবনা আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এ ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষা করছে তারা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। বিশেষ পরিস্থিতিতে আপিল বিভাগের রেফারেন্সের আলোকে গত ৮ আগস্ট গঠন করা হয় অন্তর্র্বতী সরকার। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে ২০১১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হওয়ায় সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার, প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টার পদ বলে কিছু নেই। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারকে আইনি ভিত্তি দিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। আইন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন আর অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারির পথে নেই সরকার। কারণ, গত ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ বাতিল ঘোষণা করায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসার পথ তৈরি হয়েছে, সেটিকেই কাজে লাগাতে চায় সরকার। সংসদ না থাকার পরও কীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কার্যকর করা যায়, সে বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।
গত ১৭ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবেই বৈধ সরকার। এর সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংঘর্ষিক অবস্থান নেই। কার অধীনে নির্বাচন হবে, ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে রিভিউর সিদ্ধান্তের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। এ ক্ষেত্রে ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের আগে আপিল বিভাগ পরপর দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। গত তিনটি নির্বাচনে নির্বাচন নয়, ভোট ডাকাতি হয়েছে; যে কারণে আপিল বিভাগের আগের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে বাধা নেই।
এর আগে ছাত্রউপদেষ্টারা রাজনৈতিক দলে অংশ নিলে কিভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ইতিমধ্যে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহামুদ জানিয়েছেন নির্বাচনে অংশ নিলে তারা পদত্যাগ করবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার আগে পরবর্তী নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অঙ্গীকার করতে হয়। জানা যায়, প্রাথমিক আলোচনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে মোট ১১ জন উপদেষ্টা সেই সরকারে থাকবেন। বাকিরা পদত্যাগ করবেন।
রাজনৈতিক গবেষক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে নামেই হোক না কেন, সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে গঠিত বর্তমান সরকারকে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করায় অসুবিধা নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে নির্বাচন করতে হলে ওই সরকারের কাঠামো অনুযায়ী অন্তর্র্বতী সরকারের আকার ছোট করতে হবে কি না, সে বিষয়ে আইনবিদেরা ভালো বলতে পারবেন। অন্তর্র্বতী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক না কেন, দল গঠনের পর সমন্বয়ক থেকে উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া তিনজনের আইনগতভাবে সরকারে থাকার কথা না।