০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনার প্রচারণা চালানো বিপজ্জনক : গার্ডিয়ানকে ড. ইউনূস

১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের পর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছর ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। হাসিনার শাসনামলে ‘ভয়াবহ’ বিপর্যস্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার অনুরোধ জানান। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে, শুরু হয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস-পিটারসেনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি ‘দরিদ্রদের স্বাবলম্বী করতে ক্ষুদ্রঋণ’ প্রকল্পের ধারণা আবিষ্কার ও প্রয়োগের জন্য ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল জয় করেছেন।
আজ সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে ড. ইউনূস শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের সে সময়ের পরিস্থিতি প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘তিনি (হাসিনা) যে ক্ষতি করেছেন তা ছিল ভয়াবহ। এটি ছিল আরেকটি গাজার মতো, পুরোপুরি বিধ্বস্ত একটি দেশ। তবে এখানে ভবন নয়, বরং ধ্বংস হয়েছে সব প্রতিষ্ঠান, নৈতিকতা, জনগণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।’

শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামল ছিল স্বৈরতন্ত্র, সহিংসতা ও দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে যে ১ হাজার ৪ শতাধিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে, সেজন্য জাতিসংঘও তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করেছে। হাসিনা অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।

মুহম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার পর অনেকে আশা করেছিলেন, বাংলাদেশে একটি নতুন যুগের সূচনা ঘটতে চলেছে। কিন্তু আজ ছয় মাস পর আপনি যদি ঢাকার সড়কে হাঁটেন, তাহলে অনুভব করবেন যে দেশটি ফের খাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশে যদিও ইউনূসের প্রতি ব্যাপক শ্রদ্ধা ও গ্রহণযোগ্যতা এখন পর্যন্ত রয়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে এও সত্য যে অপরাধ দমন ও শান্তি রক্ষায় তার নেতৃত্বাধীন সরকারের ক্ষমতা নিয়ে ওঠা প্রশ্ন দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এখনও বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরোপুরি সক্রিয় হতে পারেনি। বাংলাদেশের সর্বত্র অপরাধ বাড়ছে, গোষ্ঠীবদ্ধ অপরাধও (গ্যাং ক্রাইম) বাড়ছে ব্যাপক হারে। এর বড় কারণ, শেখ হাসিনার শাসনামলে যারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ ও নীতি নির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছেন, বাকিরা আত্মগোপনে আছেন। ফলে সার্বিক চেইন অব কমান্ডে একধরনের ফাঁকা ভাব বা শূন্যতা দেখা দিয়েছে, যা নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির জন্য দায়ী। ঢাকার রাস্তাঘাটে ব্যাপকভাবে বাড়ছে সংঘবদ্ধ অপরাধ বা গ্যাং তৎপরতা। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনূসের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান বলেছেন, দেশ নৈরাজ্যের দিকে চলছে।’ এটি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংকটের মুখে পড়বে।’

গার্ডিয়ানকে অবশ্য ইউনূস বলেছেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ‘খুবই ভালো’ এবং সেনাপ্রধানের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত তার কাছে ‘কোনো চাপ আসেনি।’

দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা ত্যাগ করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তারপরও বরাবরই তাকে রাজনৈতিক হুমকি বলে মনে করতেন শেখ হাসিনা। এ কারণে বছরের পর বছর ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের হয়রানি-অপমান-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। গত ১৫ বছরের বেশিরভাগ সময়ই অবশ্য বাংলাদেশের বাইরেই কাটিয়েছেন ইউনূস।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনার প্রচারণা চালানো বিপজ্জনক : গার্ডিয়ানকে ড. ইউনূস

আপডেট সময় : ০৬:৫২:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের পর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছর ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। হাসিনার শাসনামলে ‘ভয়াবহ’ বিপর্যস্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার অনুরোধ জানান। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে, শুরু হয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস-পিটারসেনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি ‘দরিদ্রদের স্বাবলম্বী করতে ক্ষুদ্রঋণ’ প্রকল্পের ধারণা আবিষ্কার ও প্রয়োগের জন্য ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল জয় করেছেন।
আজ সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে ড. ইউনূস শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের সে সময়ের পরিস্থিতি প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘তিনি (হাসিনা) যে ক্ষতি করেছেন তা ছিল ভয়াবহ। এটি ছিল আরেকটি গাজার মতো, পুরোপুরি বিধ্বস্ত একটি দেশ। তবে এখানে ভবন নয়, বরং ধ্বংস হয়েছে সব প্রতিষ্ঠান, নৈতিকতা, জনগণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।’

শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামল ছিল স্বৈরতন্ত্র, সহিংসতা ও দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে যে ১ হাজার ৪ শতাধিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে, সেজন্য জাতিসংঘও তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করেছে। হাসিনা অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।

মুহম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার পর অনেকে আশা করেছিলেন, বাংলাদেশে একটি নতুন যুগের সূচনা ঘটতে চলেছে। কিন্তু আজ ছয় মাস পর আপনি যদি ঢাকার সড়কে হাঁটেন, তাহলে অনুভব করবেন যে দেশটি ফের খাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশে যদিও ইউনূসের প্রতি ব্যাপক শ্রদ্ধা ও গ্রহণযোগ্যতা এখন পর্যন্ত রয়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে এও সত্য যে অপরাধ দমন ও শান্তি রক্ষায় তার নেতৃত্বাধীন সরকারের ক্ষমতা নিয়ে ওঠা প্রশ্ন দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এখনও বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরোপুরি সক্রিয় হতে পারেনি। বাংলাদেশের সর্বত্র অপরাধ বাড়ছে, গোষ্ঠীবদ্ধ অপরাধও (গ্যাং ক্রাইম) বাড়ছে ব্যাপক হারে। এর বড় কারণ, শেখ হাসিনার শাসনামলে যারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ ও নীতি নির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছেন, বাকিরা আত্মগোপনে আছেন। ফলে সার্বিক চেইন অব কমান্ডে একধরনের ফাঁকা ভাব বা শূন্যতা দেখা দিয়েছে, যা নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির জন্য দায়ী। ঢাকার রাস্তাঘাটে ব্যাপকভাবে বাড়ছে সংঘবদ্ধ অপরাধ বা গ্যাং তৎপরতা। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনূসের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান বলেছেন, দেশ নৈরাজ্যের দিকে চলছে।’ এটি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংকটের মুখে পড়বে।’

গার্ডিয়ানকে অবশ্য ইউনূস বলেছেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ‘খুবই ভালো’ এবং সেনাপ্রধানের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত তার কাছে ‘কোনো চাপ আসেনি।’

দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা ত্যাগ করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তারপরও বরাবরই তাকে রাজনৈতিক হুমকি বলে মনে করতেন শেখ হাসিনা। এ কারণে বছরের পর বছর ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের হয়রানি-অপমান-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। গত ১৫ বছরের বেশিরভাগ সময়ই অবশ্য বাংলাদেশের বাইরেই কাটিয়েছেন ইউনূস।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান