গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে শেখ পরিবারের নামে থাকা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের দাবি উঠতে থাকে। বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতা স্বপ্রণোদিত হয়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের নামফলক পরিবর্তন করে দেয়। ছাত্র-জনতার এমন উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, রেল স্টেশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্টরা। তবে এহেন কর্মকাণ্ডে মুদ্রার দুই পিঠেরই মুখোমুখি হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। নাম পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়াবলির জন্য ব্যাপক খরচ ও আইনি জটিলতার মুখেও পড়তে হচ্ছে।
জানা যায়, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসর পর থেকেই নাম পরিবর্তনের মহোৎসব শুরু করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। রাষ্ট্রের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান থেকে তৃণমূলে সর্বস্তরে আগের সরকারের দেয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ নাম বাদ দিয়ে শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে নামকরণের ঘৃণ্য নীতি চলতে থাকে। যা অব্যাহত থাকে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির আগ পর্যন্ত। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর শেখ পরিবারের নামে থাকা শতাধিক প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ও তিনটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে।
গত ১৩ মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন নাম হবে ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়’। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় নাম পরিবর্তনের জন্য তিনটি নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি বুল্ডুজার মিছিলের দিন বিএসএমএমইউ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের বাইরের অংশে বড় সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হয়। তবে হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে এখনো বিএসএমএমইউ-এর সাইনবোর্ড সাঁটানো আছে। কোথাও কোথাও সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলার চেষ্টা এবং কালো কালির স্প্রে দিয়ে শুধু ‘বঙ্গবন্ধু’ অংশটি মুছে দেওয়া হয়েছে। ‘সি’ ও ‘ডি’ ব্লকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থলে ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়’-এর বড় সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে অসন্তোষ বেড়ে যাওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো। পরে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএসএমএমইউ’র নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল হাসপাতাল নামের নতুন ব্যানার টানিয়ে দেয় ছাত্র-জনতা।
সরজমিনে দেখা যায়, অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর এই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটির সকল সেবা কার্যক্রমের বুথগুলোতে এখনও ঝুলছে পূর্ববর্তী নাম। আবার কোথাও কোথাও শুধু ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি মুছে দেওয়া হয়েছে। কে বা কারা এগুলো করেছে জানে না কেউ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ডা. শেখ ফরিদের কক্ষের ভেতরে ও বাইরের নেম প্লেটেও একই চিত্র দেখা যায়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে এখনও ঝুলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় নামটি রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা সিন্ডিকেট বৈঠকে তিনটি নাম নির্ধারণ করে উপদেষ্টা পরিষদে প্রস্তাবনার জন্য পাঠানো হয়। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নামটি গৃহীত হয়। তবে এখনও সেটার অধ্যাদেশ জারি করা হয়নি। অধ্যাদেশ না আসলে আমরা নাম পরিবর্তন করতে পারছি না। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে ‘বাংলাদেশ মেডিক্যালে বিশ্ববিদ্যালয়’ সম্বলিত ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছিল। সেদিনই তারা বিভিন্ন দপ্তর ও কক্ষের নেমপ্লেট থেকে বঙ্গবন্ধু শব্দটি মুছে দেয়। যেহেতু নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা আর নতুন করে সেগুলো ঠিক করিনি। অধ্যাদেশ আসলে নতুন নাম লাগানো হবে সব জায়গায়।
এদিকে সারাদেশে নাম পরিবর্তন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ফলক ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ অন্যান্য পরিবর্তনের জন্যও বিভিন্ন ধরণের বিপুল খরচ হবে সরকারের। এছাড়াও দেশে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নাম পরিবর্তনের নিয়মের খেলায় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কোটি-কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামকরণও একটি নীতিমালার মধ্যে আনা উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিশ্লেষক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামকরণের ক্ষেত্রে একটা নীতিমালা করা যেতে পারে। কিন্তু এক সরকার একটা নীতিমালা করলে পরবর্তীতে আরেকটা সরকার এসে সেটা পরিবর্তন বা বাতিল করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে নীতিমালার বাইরেও সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার মানসিকতা নাগরিকদেরও গড়ে তুলতে হবে, যাতে এসব নাম পরিবর্তনের নাটকীয়তায় জনগণের করের টাকা নষ্ট না করা হয়। সরকারকে বাধ্য করতে হবে যাতে কোনো একটা নামকরণের ক্ষেত্রে জনমত নিয়ে তার নামকরণ করা হয়। যে কেউ মনের ইচ্ছামতো যাতে নামকরণ কিংবা নাম পরিবর্তন না করতে পারে।
শিরোনাম
নাম পরিবর্তনে জটিলতা, সরকারের আর্থিক ক্ষতি
সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামকরণের ক্ষেত্রে একটা নীতিমালা করা যেতে পারে। যে কেউ মনের ইচ্ছামতো যাতে নামকরণ কিংবা নাম পরিবর্তন না করতে পারে : ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ
-
সবুজ বাংলা রিপোর্ট - আপডেট সময় : ০৭:৫৩:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
- ।
- 212
ছবিতে বাঁ থেকে পরিপত্র জারির আগেই বিএসএমএমইউ হাসপাতালে সাঁটানো হয়েছে নতুন সাইবোর্ড বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ, হাসপাতালের যাবতীয় কার্যক্রম চলছে আগের নামেই
জনপ্রিয় সংবাদ






















