বাসে চড়েছেন। গন্তব্য নিউমার্কেট। উদ্দেশ্য কিছু কেনাকাটা করা। কিন্তু সিটি কলেজ পেরোনো গেল না। সহসা সন্ত্রাসের হানা। বাসের কাঁচে ঢিল। মার…মার…ভাঙ…ভাঙ করে পুরো এলাকা তোলপাড়। যাত্রীরা দ্রুত নেমে গেলেন বাস থেকে। সবার বলাবলি, গ্যাঞ্জাম লেগেছে ঢাকা কলেজ আর সিটি কলেজের মধ্যে।
মিরপুর রোড দিয়ে যাতায়াত করেন এমন মানুষদের কাছে এই গ্যাঞ্জাম নতুন কিছু না। নিয়মিতই এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মারামারিতে জড়াচ্ছেন। ক্ষতি হচ্ছে নিজেদের। ব্যাঘাত ঘটছে রাজধানীর ব্যস্ততম মিরপুর রোডের যান চলাচলে। গোটা এলাকাটি বাণিজ্যিক হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে হাজারো ব্যবসায়ীর।
সম্প্রতি কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ঢাকা কলেজে বনাম সিটি কলেজের মধ্যে দ্বন্দ্বের নেপথ্য কিছু কারণ। কারণগুলোর মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যা সত্যি চাঞ্চল্য জাগায়।
রাজধানীর সিটি কলেজে নারী শিক্ষার্থী আছে। অন্যদিকে ঢাকা কলেজ ছেলেদের ঐতিহ্যবাহী কলেজ হিসেবে বিখ্যাত। সংবাদমাধ্যমের কাছে সিটি কলেজের কিছু শিক্ষার্থী স্বীকার করছেন, তারা চান না সিটি কলেজের মেয়েরা ঢাকা কলেজের ছেলেদের সঙ্গে কোনো সম্পর্কে জড়াক। অধিকাংশ বিরোধের ঘটনা ঘটছে এই প্রেম সংক্রান্ত কারণে।
আবার অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, ধানমন্ডি এলাকায় সক্রিয় বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রেম, ডেটিং বিষয়ক কারণে পুরো এলাকাটি জিম্মি করে রাখছে। সাধারণত বিবাদ কথা কাটাকাটিতেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কারণে রাস্তায় ভাঙচুর ও অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীর কথা হয়। সিটি কলেজের একটি মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক আছে এটা তিনি স্বীকার করেন। তবে তার দাবি, তারা স্কুল বন্ধু। স্কুল জীবন থেকেই তারা ঘনিষ্ঠ ছিলেন। নিজে ঢাকা কলেজে ও বান্ধবী সিটি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে যায় আলাদা। কিন্তু সম্পর্ক ভেঙে যায়নি তাতে। একবার বান্ধবীর সাথে দেখা করতে সিটি কলেজ এলাকায় গিয়ে বিরূপ অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা দ্বন্দ্ব নিরসনে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছেন। এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এজন্য সব সময় প্রস্তুত রাখা হয়। তবে ছেলেমেয়েদের সম্পর্ক সংক্রান্ত বিষয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদের কেউ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে কিছু অভিভাবক ঘটনার সত্যতা আছে বলে স্বীকার করেছেন।
এভাবেই কিশোর, তরুণবেলার সম্পর্ক রক্তাক্ত রূপ নিয়ে গোটা এলাকাকে নিয়মিত করছে রণক্ষেত্র। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাজীবন। নষ্ট হচ্ছে শ্রমঘণ্টা। ধ্বংস হচ্ছে বিপুল অর্থের সম্পদ। সত্যি সমস্যার সমাধান কিভাবে সম্ভব তা যেন কেউই জানেন না।
তরুণদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞদের মতে, বাবা-মার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি সন্তানদের বেড়ে ওঠার সময়ে। কারণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে একটি ছেলে বা মেয়ে পরিবারেই বেশি সময় কাটায়। পরিবারের সঙ্গে তাই খোলামেলা সম্পর্ক বয়ে আনতে পারে সুফল। পরিবারের শিক্ষায় শিক্ষিত সন্তান কখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা রাস্তায় যেকোনো কারণেই হোক মারামারিতে লিপ্ত হবে না। অনেকের দৃষ্টিতে তাই ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের দ্বন্দ্বের প্রথম দায়ভার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের উপর বর্তায়।

























