ছোট দলের বড় কোচ বলা হয় তাকে। তিনি কম বাজেটের ও দুর্বল-আন্ডারডগ যে দলেই থাকেন, সেই দলের নিকনেম পরে হয়ে যায় ‘জায়ান্ট কিলার’! ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব তাদের একমাত্র শিরোপা জেতে স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে, ২০১১ সালে তারই অধীনে। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল যখন প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার জন্য কোন বিদেশী প্রতিপক্ষ না পেয়ে দেশের কোন দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ ম্যাচ খেলে এবং সেই বিপক্ষ দলের কোচ করা হয় তাকে এবং তার অধীনে বরাবরই বিস্ময়কভাবে বেশিরভাগ ম্যাচে সেই দল জাতীয় দলকে হয় হারায়, নয়তো ম্যাচ ড্র করে চমক সৃষ্টি করে।
যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি কামাল আহমেদ বাবু, ফুটলাঙ্গনে যিনি ‘কামাল বাবু’ নামেই বেশি পরিচিত। কোচিং ক্যারিয়ারে কামাল কখনই আবাহনী, মোহামেডানের মতো বড় ক্লাবের হেড কোচ হননি। বসুন্ধরা কিংসে অবশ্য সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া ‘ট্রেবল’ জেতারও অনেক আগে তখনকার দুর্বল দল শেখ রাসেলের কোচ ছিলেন। স্বাধীনতা ক্লাব, দিপালী, সানরাইজ, আরামবাগ, নোফেল, ওয়ান্ডারার্স, ওয়ারী, স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘে কাজ করলেও সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন ফরাশগঞ্জ ও রহমতগঞ্জে।
ফুটবলাঙ্গনে কামাল সবসময়ই পরিচিত ‘বিদ্রোহী’ ও ‘স্পটবাদী’ হিসেবে। এর খেসারতও অতীতে তিনি একাধিকবারই দিয়েছেন বাফুফে কর্তৃক শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে। তারপরও নিজের স্বভাব পাল্টাননি প্রায় ৬০ ছুঁই ছুঁই এই কোচ। সম্প্রতি নিজের ফেসবুকে তিনি একটি পোস্ট দিয়েছেন প্রবাসী ফুটবলারদের ট্রায়াল নিয়ে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘বিদেশ থেকে প্রবাসী খেলোয়াড়গন আসবে, আমাদের জাতীয় দলকে সমৃদ্ধ করবে, এতে দোষের কিছুই দেখি না। কারণ ওরাও আমাদের মত বাঙালি। ওদেরও অধিকার আছে দেশের হয়ে খেলার, দেশকে কিছু দেওয়ার।’
এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু এরপরেই আচমকা বেঁকে বসেছেন কামাল, ‘তাই বলে বিদেশে সানডে লিগে খেলা খেলোয়াড়দের জাতীয় দলের জন্য ট্রায়াল নিবেন? হামজা, শামিতের মতো খেলোয়াড়রা আসলে আমাদের জাতীয় দল আরো শক্তিশালী হবে এতে কোন সন্দেহ নেই, তাই বলে প্রবাসী হলেই জাতীয় দলে ট্রায়াল দিতে পারবে, এটা জাতীয় দলে ট্রায়ালের মানদণ্ড হতে পারে না। এটা জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের ছোট করার শামিল।’
এখানেই থেমে যাননি কামাল, আরও লিখেছেন, ‘অনেকে হয়তো ভুলে গেছেন অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে জাতীয় দলে জায়গা পেতে হয়। জাতীয় দলে খেলা সবার কপালে জোটে না। আরে ভাই একটি ক্লাব দলে ও তো যেকেউ ট্রায়াল দিতে পারে না তার অতীত জানা ছাড়া। এভাবে চললে ভবিষ্যতে জাতীয় বীরদের আর কেউ সম্মান দেবে না, সাধারণ আর অসাধারণের কোন পার্থক্য থাকবে না। যে কেউ এসেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিয়ে ফেলবে।! তখন হয়তো সবার মুখে একটি কথাই থাকবে— বাংলাদেশে জাতীয় দলে খেলা সহজ কিন্ত ক্লাব দলে খেলা অনেক কঠিন।’
সবশেষে এই লিখে তার স্ট্যাটাসটি শেষ করেছেন, ‘আমরা আবেগীয় বাঙালি। আবেগ থাকা ভাল, কিন্ত আবেগ আর বাস্তবের মধ্যে অনেক পার্থক্য। মতামতটি সম্পূর্ণ আমার, অনেকের ভিন্নমত থাকতেই পারে।’
আরকে/সব


























