০২:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরানে হামলা চালালে ক্ষমতা হারাতে পারেন ট্রাম্প

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ

 

  • যুক্তরাষ্ট্রকে ‘কঠোর’ হুঁশিয়ারি রাশিয়ার
  • ইসরায়েলি আগ্রাসনের চাপেও খামেনির লক্ষ্য অটুট, লড়াইয়ের ইঙ্গিত
  • ইউরোপের তিন ঘাঁটিতে ৩০টি যুদ্ধবিমান পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র
  • ট্রাম্প-তুলসী মতবিরোধ!
  • জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা
  • খামেনিকে হত্যার ছক ট্রাম্পের

ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েলে হামলা চালালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা হারাতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় পররাষ্ট্র বিষয়ক কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক এলি জেরানমায়েহ। তিনি সিএনএনকে বলেন, এই ধরনের মুহূর্তে নেতাদের সবসময়ই একটি পছন্দ থাকে। অতীতেও ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছেন। এখনো তিনি সেটি করতে পারেন। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালান, তাহলে ইরান সেটিকে সরাসরি ‘যুদ্ধ ঘোষণার’ সমতুল্য বলেই দেখবে।
অন্যদিকে, যুদ্ধবাজ ইসরায়েলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দিলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘চরম অস্থিতিশীলতা’ সৃষ্টি হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর ভাষায় সতর্ক করল রাশিয়া। এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। তার বক্তব্য গতকাল বুধবার প্রকাশ করেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স। রিয়াবকভ বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করছিÑ ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া কিংবা তা বিবেচনায় নেওয়াটাও পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে অস্থিতিশীল করে তুলবে’।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা নিজের বিচক্ষণতা দিয়ে কয়েক দশক ধরে নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে ইহুদি ভূখণ্ডের আগ্রাসন থেকে রক্ষার। কিন্তু ইসরায়েলের হামলায় এরম ধ্যেই তিনি হারিয়েছেন বিশ্বস্ত আর ঘনিষ্ঠ অনেক কর্মকর্তাকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশ্লেষণ বলছে, তার লক্ষণরেখা দুর্বল হয়ে গেলেও ইসলামি প্রজাতন্ত্র রক্ষায় খামেনি চেষ্টা করবেন শেষ সময় পর্যন্ত। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের ৮৬ বছর বয়সি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছেন একাকী এক চরিত্রে। তার আশপাশে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থাকা বেশ কয়েকজন সামরিক আর নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের প্রাণ গেছে ইসরায়েলের হামলায়। অভ্যন্তরীণভাবে খামেনির চারপাশে তৈরি হয়েছে শূন্যতা। বাড়ছে কৌশলগত অনেক ভুলের ঝুঁকি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ খামেনির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সবসময় খামেনির বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক সূত্র বলছে, বর্তমান সময়ে প্রতিরক্ষা আর অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষার ইস্যুতে যেকোনো সিদ্ধান্ত পুরো প্রজাতন্ত্রকে ফেলতে পারে হুমকিতে। ইসরায়েলের হামলায় গেল শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ অনেক সামরিক কমান্ডারের প্রাণ গেছে। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক বাহিনীর বিশেষ শাখা ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কর্পসের কমান্ডার হোসেইন সালামি, যিনি খামেনির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন, বিমানবাহিনী প্রধান আমির আলী হাজিজেদাহ, যিনি ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রকল্পের নেতৃত্ব দিতেন। ছিলেন স্পাইমাস্টার মোহাম্মদ কাজেমি। তুখোড় এই কর্মকর্তারা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ ছিলেন, গার্ড কমান্ডার, ধর্মযাজক আর রাজনীতিবিদ মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল ছিল। যারা সবসময় আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ডাকা বৈঠকে অংশ নিতেন। হারানো সদস্যদের বাদ দিয়ে বাকিরা বৈঠকে বসেই টের পান, দেশের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া উপদেষ্টার সংখ্যা কত কম। খামেনির ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তার প্রতি অনুগত থেকে গেছেন। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের আগে খামেনি কারাগারে ছিলেন, ১৯৮৯ সালে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হওয়ার আগে তার ওপর বোমা হামলাও হয়। এরপর থেকেই ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের শাসন নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু পশ্চিমাদের কাছে হয়েছেন চক্ষুশূল। ইরানের সরকার ব্যবস্থায় সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া, যুদ্ধ ঘোষণা করা এমনকি কমান্ডার কিংবা বিচারকদের বহিষ্কার করার মতো সর্বোচ্চ ক্ষমতা তার হাতে। তবে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ঘনিষ্ঠদের মতামত আর পরামর্শকে গুরুত্ব দেন তিনি। ওয়াশিংটনে মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট বলছে, বিচক্ষণ খামেনি বরাবরই সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করেন। যে কারণে এতো দীর্ঘসময় ধরে তিনিই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশ্লেষণ বলছে, আশপাশে ঘনিষ্ঠ মিত্ররা না থাকলেও সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এখন সবদিক থেকে একটা বিষয় নিয়েই গবেষণা করছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা।
এদিকে দখলদার ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ এবং গুণ্ডামির বিরুদ্ধে ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার আছে বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। গতকাল ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে বলেন, নিজেদের আত্মরক্ষায় ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ এবং গুণ্ডামির বিরুদ্ধে এটি ইরানের খুবই স্বাভাবিক, বৈধ এবং আইনি অধিকার। গত তিন দিনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপের কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটির উদ্দেশে উড়ে গেছে অন্তত ৩০টি যুদ্ধবিমান। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ট্র্যাকিং সংস্থা ফ্লাইটরাডার ২৪ এর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। স্পেন, স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের মার্কিন ঘাঁটিগুলোর উদ্দেশে এ বিমানগুলো উড়ে গেছে বলে জানতে পেরেছে বিবিসি। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল তীব্র সংঘাত পরিস্থিতিতে মার্কিন ঘাঁটি থেকে তিন দিনে ৩০টি ট্যাংকার যুদ্ধবিমানের ইউরোপের সামরিক ঘাঁটির উদ্দেশে উড়ে যাওয়াকে ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ বলে মনে করছেন একাধিক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যখন তুঙ্গে। ইরানের নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট ইসরায়েল যখন নাস্তানাবুদ। এ অবস্থায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের মধ্যে প্রকাশ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প স্পষ্ট বলেছেন, ‘তিনি বিশ্বাস করেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।’ তার এই বক্তব্য গ্যাবার্ডের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। দখলদার আগ্রাসি ইসরায়েলিদের মাটিতে চরম প্রতিশোধ নিচ্ছে ইরান। ইসরায়েলে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়েছে তেহরানও। ইসরায়েলের আকাশও ইরানের নিয়ন্ত্রণে দাবি তেহরানেও। দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোও চরম ঝুঁকিতে। এমন পরিস্থিতিতে জেরুজালেমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন দূতাবাস। সিএনএন সূত্রে মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে জানা যায়, বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের ফলে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি সব মার্কিন কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের বাসস্থানের ভেতরে এবং কাছাকাছি স্থানে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের পরই আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, যুদ্ধ শুরু হলো। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে আজ ১৮ জুন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এই বার্তা দেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইরানে হামলা চালালে ক্ষমতা হারাতে পারেন ট্রাম্প

আপডেট সময় : ০৮:২৬:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

 

  • যুক্তরাষ্ট্রকে ‘কঠোর’ হুঁশিয়ারি রাশিয়ার
  • ইসরায়েলি আগ্রাসনের চাপেও খামেনির লক্ষ্য অটুট, লড়াইয়ের ইঙ্গিত
  • ইউরোপের তিন ঘাঁটিতে ৩০টি যুদ্ধবিমান পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র
  • ট্রাম্প-তুলসী মতবিরোধ!
  • জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা
  • খামেনিকে হত্যার ছক ট্রাম্পের

ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েলে হামলা চালালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা হারাতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় পররাষ্ট্র বিষয়ক কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক এলি জেরানমায়েহ। তিনি সিএনএনকে বলেন, এই ধরনের মুহূর্তে নেতাদের সবসময়ই একটি পছন্দ থাকে। অতীতেও ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছেন। এখনো তিনি সেটি করতে পারেন। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালান, তাহলে ইরান সেটিকে সরাসরি ‘যুদ্ধ ঘোষণার’ সমতুল্য বলেই দেখবে।
অন্যদিকে, যুদ্ধবাজ ইসরায়েলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দিলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘চরম অস্থিতিশীলতা’ সৃষ্টি হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর ভাষায় সতর্ক করল রাশিয়া। এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। তার বক্তব্য গতকাল বুধবার প্রকাশ করেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স। রিয়াবকভ বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করছিÑ ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া কিংবা তা বিবেচনায় নেওয়াটাও পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে অস্থিতিশীল করে তুলবে’।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা নিজের বিচক্ষণতা দিয়ে কয়েক দশক ধরে নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে ইহুদি ভূখণ্ডের আগ্রাসন থেকে রক্ষার। কিন্তু ইসরায়েলের হামলায় এরম ধ্যেই তিনি হারিয়েছেন বিশ্বস্ত আর ঘনিষ্ঠ অনেক কর্মকর্তাকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশ্লেষণ বলছে, তার লক্ষণরেখা দুর্বল হয়ে গেলেও ইসলামি প্রজাতন্ত্র রক্ষায় খামেনি চেষ্টা করবেন শেষ সময় পর্যন্ত। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের ৮৬ বছর বয়সি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছেন একাকী এক চরিত্রে। তার আশপাশে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থাকা বেশ কয়েকজন সামরিক আর নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের প্রাণ গেছে ইসরায়েলের হামলায়। অভ্যন্তরীণভাবে খামেনির চারপাশে তৈরি হয়েছে শূন্যতা। বাড়ছে কৌশলগত অনেক ভুলের ঝুঁকি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ খামেনির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সবসময় খামেনির বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক সূত্র বলছে, বর্তমান সময়ে প্রতিরক্ষা আর অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষার ইস্যুতে যেকোনো সিদ্ধান্ত পুরো প্রজাতন্ত্রকে ফেলতে পারে হুমকিতে। ইসরায়েলের হামলায় গেল শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ অনেক সামরিক কমান্ডারের প্রাণ গেছে। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক বাহিনীর বিশেষ শাখা ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কর্পসের কমান্ডার হোসেইন সালামি, যিনি খামেনির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন, বিমানবাহিনী প্রধান আমির আলী হাজিজেদাহ, যিনি ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রকল্পের নেতৃত্ব দিতেন। ছিলেন স্পাইমাস্টার মোহাম্মদ কাজেমি। তুখোড় এই কর্মকর্তারা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ ছিলেন, গার্ড কমান্ডার, ধর্মযাজক আর রাজনীতিবিদ মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল ছিল। যারা সবসময় আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ডাকা বৈঠকে অংশ নিতেন। হারানো সদস্যদের বাদ দিয়ে বাকিরা বৈঠকে বসেই টের পান, দেশের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া উপদেষ্টার সংখ্যা কত কম। খামেনির ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তার প্রতি অনুগত থেকে গেছেন। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের আগে খামেনি কারাগারে ছিলেন, ১৯৮৯ সালে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হওয়ার আগে তার ওপর বোমা হামলাও হয়। এরপর থেকেই ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের শাসন নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু পশ্চিমাদের কাছে হয়েছেন চক্ষুশূল। ইরানের সরকার ব্যবস্থায় সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া, যুদ্ধ ঘোষণা করা এমনকি কমান্ডার কিংবা বিচারকদের বহিষ্কার করার মতো সর্বোচ্চ ক্ষমতা তার হাতে। তবে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ঘনিষ্ঠদের মতামত আর পরামর্শকে গুরুত্ব দেন তিনি। ওয়াশিংটনে মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট বলছে, বিচক্ষণ খামেনি বরাবরই সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করেন। যে কারণে এতো দীর্ঘসময় ধরে তিনিই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশ্লেষণ বলছে, আশপাশে ঘনিষ্ঠ মিত্ররা না থাকলেও সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এখন সবদিক থেকে একটা বিষয় নিয়েই গবেষণা করছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা।
এদিকে দখলদার ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ এবং গুণ্ডামির বিরুদ্ধে ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার আছে বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। গতকাল ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে বলেন, নিজেদের আত্মরক্ষায় ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ এবং গুণ্ডামির বিরুদ্ধে এটি ইরানের খুবই স্বাভাবিক, বৈধ এবং আইনি অধিকার। গত তিন দিনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপের কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটির উদ্দেশে উড়ে গেছে অন্তত ৩০টি যুদ্ধবিমান। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ট্র্যাকিং সংস্থা ফ্লাইটরাডার ২৪ এর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। স্পেন, স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের মার্কিন ঘাঁটিগুলোর উদ্দেশে এ বিমানগুলো উড়ে গেছে বলে জানতে পেরেছে বিবিসি। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল তীব্র সংঘাত পরিস্থিতিতে মার্কিন ঘাঁটি থেকে তিন দিনে ৩০টি ট্যাংকার যুদ্ধবিমানের ইউরোপের সামরিক ঘাঁটির উদ্দেশে উড়ে যাওয়াকে ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ বলে মনে করছেন একাধিক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যখন তুঙ্গে। ইরানের নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট ইসরায়েল যখন নাস্তানাবুদ। এ অবস্থায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের মধ্যে প্রকাশ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প স্পষ্ট বলেছেন, ‘তিনি বিশ্বাস করেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।’ তার এই বক্তব্য গ্যাবার্ডের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। দখলদার আগ্রাসি ইসরায়েলিদের মাটিতে চরম প্রতিশোধ নিচ্ছে ইরান। ইসরায়েলে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়েছে তেহরানও। ইসরায়েলের আকাশও ইরানের নিয়ন্ত্রণে দাবি তেহরানেও। দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোও চরম ঝুঁকিতে। এমন পরিস্থিতিতে জেরুজালেমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন দূতাবাস। সিএনএন সূত্রে মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে জানা যায়, বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের ফলে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি সব মার্কিন কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের বাসস্থানের ভেতরে এবং কাছাকাছি স্থানে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের পরই আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, যুদ্ধ শুরু হলো। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে আজ ১৮ জুন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এই বার্তা দেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।