১০:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তামাকের ফাঁদে ধুঁকছে কৃষি

  • উর্বরতা হারাচ্ছে মাটি
  • প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকদের দ্বারা হচ্ছে তামাক চাষ
  • এবারের বাজেটকেও জনস্বাস্থ্যবিরোধী আখ্যা তামাকবিরোধী নেতাদের
  • তামাক চাষ বন্ধে প্রয়োজন কঠোর আইনের। কারণ অতিরিক্ত রাসায়নিক ও বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহারে মাটির অণুজীব মারা যাচ্ছে এবং মাটি গঠনের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে- এবিএস জুবায়ের, নির্বাহী পরিচালক প্রজ্ঞা

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য দরকার টেকসই কৃষি। এজন্য দেশের আবাদযোগ্য জমি ও মাটির উর্বরতা রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সম্প্রতি দেশে তামাক চাষ ক্রমেই বাড়ছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে ওঠেছে। বিশ্বব্যাপী যেখানে তামাক চাষ ও ব্যবহার কমছে, সেখানে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল কিছু দেশে এর চাষ বাড়ছে। তামাক চাষ কেবল জমির ঊর্বরতা ধ্বংস করছে না বরং বাংলাদেশকে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বসবাসের উপযোগী পরিবেশ বজায় রাখতে তামাকের মতো আগ্রাসী ও ক্ষতিকর ফসলের সম্প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ এখন সময়ের দাবি। এদিকে এবারের বাজেট জনস্বাস্থ্যবিরোধী আখ্যা দিয়েছে তামাকবিরোধী নেতারা। এবিষয়ে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতিবিদসহ তামাকবিরোধী নেতারা জানান, সব ধরনের তামাকপণ্যের দাম ও করহার অপরিবর্তিত রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে তামাকের ব্যবহার ও তামাকজনিত মৃত্যু বাড়বে এবং রাজস্ব আয় কমবে বলে দাবি করেছে। সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্র করে দাম বৃদ্ধি না করায় ভোক্তার কমদামি সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ অব্যাহত থাকবে। চূড়ান্ত বাজেটে তামাকবিরোধীদের সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি শুধু সিগারেট খাত থেকেই অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় অর্জন করা সম্ভব। সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত বলেন, নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তা যে কোনো একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে এবং কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। এই দুই স্তরকে একত্র করে সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে কমিয়ে ৩টি করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তামাক চাষের ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়, মাটি শক্ত হয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে সেখানে অন্য ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়ে। ধানসহ অনেক ফসল সময়মতো পাকলেও গাছ শুকিয়ে যায়। এ ছাড়া স্থানীয় জাতের ফসল আবাদের অভাবে সেগুলোর বীজ সংরক্ষণের সুযোগও হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা বেশি লাভের আশায় তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষক এখন তামাক চাষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন বলে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। কৃষি বিজ্ঞানী ড. এম. এ সোবাহান বলেন, বাংলাদেশের মাটি অমূল্য সম্পদ। গত ৩-৪ দশকে অতিরিক্ত চাষাবাদ ও রাসায়নিক ব্যবহারে মাটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ওপর তামাক চাষ যেন বিষের ফোঁড়া। তিনি আরও জানান, তামাক একটি বহিরাগত আগ্রাসী প্রজাতি। ৬০-এর দশকে প্রথম তিস্তা অববাহিকায়, পরে কুষ্টিয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে এর চাষ শুরু হয়। প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএস জুবায়ের বলেন, তামাক চাষ বন্ধে প্রয়োজন হলে কঠোর আইন প্রণয়ন করা উচিত। কারণ অতিরিক্ত রাসায়নিক ও বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহারে মাটির অণুজীব মারা যাচ্ছে এবং মাটি গঠনের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে টানা ৬ষ্ঠ বারের মতো বিড়ির দাম এবং দশম বারের মতো এর করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে বিড়ি ব্যবসা আরও লাভজনক হবে। দাম অপরিবর্তিত রাখায় জর্দা এবং গুলের সহজলভ্যতা বাড়বে এবং এসব ক্ষতিকর পণ্যের প্রধান ভোক্তা নারী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট ১৭ লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, ২০০১ সালে দেশে ৭৩ হাজার ৮৭০ একর জমিতে তামাক চাষ হতো। ২০১১-১২ মৌসুমে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২৬ হাজার একরে। বাংলাদেশে একশ্রেণির ব্যক্তি ও কোম্পানি নানা সুবিধা ও প্রলোভন দিয়ে কৃষকদের তামাক চাষে উৎসাহিত করছে। তারা অগ্রিম টাকা, বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করে কৃষকদের এ চাষে আকৃষ্ট করছে। এতে কৃষকেরা স্বল্প খরচে তুলনামূলক বেশি লাভের আশায় তামাক চাষে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন, যদিও এটি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ও জাপান টোব্যাকো কোম্পানিসহ কয়েকটি বিদেশি ও দেশীয় কোম্পানি তাদের প্রতিনিধি ও স্থানীয় মহাজনের মাধ্যমে চাষিদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। চাষিরা তাদের তামাক গুদামে জমা দেন এবং কোম্পানির প্রতিনিধিরা জাত অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করেন। ‘জাতি তালিম’ তামাক প্রতিমণ ২ হাজার ৪০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা এবং ‘বিলাতি মতিহারি’ তামাক ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তামাক চাষে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ভূ-উপরি ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তরেও এসব রাসায়নিক জমা হচ্ছে যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। এ ছাড়া মাটির গঠন বজায় রাখার জন্য যে অণুজীব প্রয়োজন, অতিরিক্ত বিষাক্ত উপাদান ব্যবহারে তারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। উবিনীগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কৃষকরা প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ৫৭৫ কেজি ইউরিয়া ও ৪৬৬ কেজি টিএসপি ব্যবহার করেন এবং একটি মৌসুমে গড়ে ১৬ বার কীটনাশক স্প্রে করেন। তামাক ক্ষেতে ৪৭ ধরনের কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যা জমিকে প্রায় মৃত করে তোলে। চট্টগ্রামের এক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, টোব্যাকো কোম্পানিগুলো নানা সুবিধা দিয়ে চাষিদের প্রলুব্ধ করছে। এতে মাটি ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তাদের নিরুৎসাহিত করতে নিয়মিত সভা-সেমিনার হচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

শীতে বাড়ছে রোগ-বালাই

তামাকের ফাঁদে ধুঁকছে কৃষি

আপডেট সময় : ০৭:৩৫:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • উর্বরতা হারাচ্ছে মাটি
  • প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকদের দ্বারা হচ্ছে তামাক চাষ
  • এবারের বাজেটকেও জনস্বাস্থ্যবিরোধী আখ্যা তামাকবিরোধী নেতাদের
  • তামাক চাষ বন্ধে প্রয়োজন কঠোর আইনের। কারণ অতিরিক্ত রাসায়নিক ও বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহারে মাটির অণুজীব মারা যাচ্ছে এবং মাটি গঠনের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে- এবিএস জুবায়ের, নির্বাহী পরিচালক প্রজ্ঞা

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য দরকার টেকসই কৃষি। এজন্য দেশের আবাদযোগ্য জমি ও মাটির উর্বরতা রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সম্প্রতি দেশে তামাক চাষ ক্রমেই বাড়ছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে ওঠেছে। বিশ্বব্যাপী যেখানে তামাক চাষ ও ব্যবহার কমছে, সেখানে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল কিছু দেশে এর চাষ বাড়ছে। তামাক চাষ কেবল জমির ঊর্বরতা ধ্বংস করছে না বরং বাংলাদেশকে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বসবাসের উপযোগী পরিবেশ বজায় রাখতে তামাকের মতো আগ্রাসী ও ক্ষতিকর ফসলের সম্প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ এখন সময়ের দাবি। এদিকে এবারের বাজেট জনস্বাস্থ্যবিরোধী আখ্যা দিয়েছে তামাকবিরোধী নেতারা। এবিষয়ে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতিবিদসহ তামাকবিরোধী নেতারা জানান, সব ধরনের তামাকপণ্যের দাম ও করহার অপরিবর্তিত রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে তামাকের ব্যবহার ও তামাকজনিত মৃত্যু বাড়বে এবং রাজস্ব আয় কমবে বলে দাবি করেছে। সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্র করে দাম বৃদ্ধি না করায় ভোক্তার কমদামি সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ অব্যাহত থাকবে। চূড়ান্ত বাজেটে তামাকবিরোধীদের সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি শুধু সিগারেট খাত থেকেই অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় অর্জন করা সম্ভব। সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত বলেন, নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তা যে কোনো একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে এবং কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। এই দুই স্তরকে একত্র করে সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে কমিয়ে ৩টি করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তামাক চাষের ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়, মাটি শক্ত হয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে সেখানে অন্য ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়ে। ধানসহ অনেক ফসল সময়মতো পাকলেও গাছ শুকিয়ে যায়। এ ছাড়া স্থানীয় জাতের ফসল আবাদের অভাবে সেগুলোর বীজ সংরক্ষণের সুযোগও হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা বেশি লাভের আশায় তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষক এখন তামাক চাষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন বলে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। কৃষি বিজ্ঞানী ড. এম. এ সোবাহান বলেন, বাংলাদেশের মাটি অমূল্য সম্পদ। গত ৩-৪ দশকে অতিরিক্ত চাষাবাদ ও রাসায়নিক ব্যবহারে মাটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ওপর তামাক চাষ যেন বিষের ফোঁড়া। তিনি আরও জানান, তামাক একটি বহিরাগত আগ্রাসী প্রজাতি। ৬০-এর দশকে প্রথম তিস্তা অববাহিকায়, পরে কুষ্টিয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে এর চাষ শুরু হয়। প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএস জুবায়ের বলেন, তামাক চাষ বন্ধে প্রয়োজন হলে কঠোর আইন প্রণয়ন করা উচিত। কারণ অতিরিক্ত রাসায়নিক ও বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহারে মাটির অণুজীব মারা যাচ্ছে এবং মাটি গঠনের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে টানা ৬ষ্ঠ বারের মতো বিড়ির দাম এবং দশম বারের মতো এর করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে বিড়ি ব্যবসা আরও লাভজনক হবে। দাম অপরিবর্তিত রাখায় জর্দা এবং গুলের সহজলভ্যতা বাড়বে এবং এসব ক্ষতিকর পণ্যের প্রধান ভোক্তা নারী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট ১৭ লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, ২০০১ সালে দেশে ৭৩ হাজার ৮৭০ একর জমিতে তামাক চাষ হতো। ২০১১-১২ মৌসুমে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২৬ হাজার একরে। বাংলাদেশে একশ্রেণির ব্যক্তি ও কোম্পানি নানা সুবিধা ও প্রলোভন দিয়ে কৃষকদের তামাক চাষে উৎসাহিত করছে। তারা অগ্রিম টাকা, বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করে কৃষকদের এ চাষে আকৃষ্ট করছে। এতে কৃষকেরা স্বল্প খরচে তুলনামূলক বেশি লাভের আশায় তামাক চাষে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন, যদিও এটি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ও জাপান টোব্যাকো কোম্পানিসহ কয়েকটি বিদেশি ও দেশীয় কোম্পানি তাদের প্রতিনিধি ও স্থানীয় মহাজনের মাধ্যমে চাষিদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। চাষিরা তাদের তামাক গুদামে জমা দেন এবং কোম্পানির প্রতিনিধিরা জাত অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করেন। ‘জাতি তালিম’ তামাক প্রতিমণ ২ হাজার ৪০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা এবং ‘বিলাতি মতিহারি’ তামাক ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তামাক চাষে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ভূ-উপরি ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তরেও এসব রাসায়নিক জমা হচ্ছে যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। এ ছাড়া মাটির গঠন বজায় রাখার জন্য যে অণুজীব প্রয়োজন, অতিরিক্ত বিষাক্ত উপাদান ব্যবহারে তারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। উবিনীগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কৃষকরা প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ৫৭৫ কেজি ইউরিয়া ও ৪৬৬ কেজি টিএসপি ব্যবহার করেন এবং একটি মৌসুমে গড়ে ১৬ বার কীটনাশক স্প্রে করেন। তামাক ক্ষেতে ৪৭ ধরনের কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যা জমিকে প্রায় মৃত করে তোলে। চট্টগ্রামের এক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, টোব্যাকো কোম্পানিগুলো নানা সুবিধা দিয়ে চাষিদের প্রলুব্ধ করছে। এতে মাটি ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তাদের নিরুৎসাহিত করতে নিয়মিত সভা-সেমিনার হচ্ছে।