- রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন বিষয়ে একমত সবাই
- দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠার বিষয়েও অধিকাংশের সম্মতি
- রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে : আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের দ্বিতীয় ধাপের চতুর্থ দিনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, এনসিপি, এলডিপি, সিপিবি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। এদিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি ও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে ১৪ দলীয় মহাজোটের দুই শরিক দলকে আমন্ত্রণ জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর ও বাংলাদেশের লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইবেন নূর, আর আগামীতে এমনটি হলে ওয়াকআউট করার হুমকি দিয়েছেন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
বৈঠকের শুরুতে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘কিছু বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মতৈক্য হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এখনও অমীমাংসিত। এসব বিষয়ে হয়তো আগামী সপ্তাহে আবার বসতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করতে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’ তিনি বিগত দিনের ভুলভ্রান্তি সততার সঙ্গে মূল্যায়নের আহ্বান জানান।
এদিকে সংলাপের মাঝে সাংবাদিকদের আলাদা ব্রিফিংয়ে একই সুরে কথা বলেন নূর ও ইরান। এ বিষয়ে প্রথমে প্রশ্ন তোলেন ইরান। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের দুই শরিক বাংলাদেশ জাসদ ও জাকের পার্টিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তিনি বলেন, এটি জুলাই আকাক্সক্ষার প্রতি কুঠারাঘাত। আগামীতে এসব দলকে আমন্ত্রণ জানালে আমরা সংলাপ বয়কট করব। এর পরপরই ব্রিফিংয়ে নূর বলেন, সংলাপে ফ্যাসিবাদের দোসর দুটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটি জুলাইয়ের চেতনার প্রতি সুস্পষ্ট অবমাননা। আমরা এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইবো। সংলাপে দুই-একটি দলকে প্রাধান্য দিচ্ছে ঐকমত্য কমিশন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি দল স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত জানাতে পারছে। মতভিন্নতা থাকলেও মতামত দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বিরাজ করছে। সব রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন বিষয়ে একমত হয়েছে। এছাড়া দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠার বিষয়েও অধিকাংশ দল একমত। আলোচনায় উচ্চকক্ষে ১০০ আসনের বিষয়ে মত দিয়েছে দলগুলো। কিন্তু এসব বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে না তা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না, তা স্বচ্ছতার সঙ্গে উল্লেখ করা হবে। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, এমন প্রত্যাশা করাও ঠিক হবে না। কিন্তু কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হওয়ার সদিচ্ছা রয়েছে।
এদিকে গতকাল সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা একটি দল একদিন প্রতীকীভাবে বয়কট করেছে। পরদিনই আবার ফিরে এসেছে। সভায় সেই দলকে কথা বেশি বলতে দেওয়ার অভিযোগ করে অন্য দুটি দল প্রতীকী ওয়াকআউট করেছে। অনেকেই এসবের মধ্যে রাজনীতিতে অনৈক্যের ছায়া দেখছেন। আমি এটাকে দেখছি খুবই ইতিবাচকভাবে।
তিনি বলেন, গতকাল কিছুক্ষণ ঐকমত্য কমিশনের সভায় ছিলাম। প্রাণবন্ত বিতর্কে অংশ নিয়েছেন রাজনীতিবিদরা। মনে হচ্ছিল এই মুহূর্তে এটাই আমাদের বিকল্প সংসদ। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যেসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন এগুলোই হয়ত আগামীদিনে আইনে পরিণত হবে। এই রাজনীতিবিদরেই কেউ কেউ হয়ত নির্বাচিত হয়ে আসবেন আইন প্রণেতা হিসেবে। এখন যেমন তারা আগামী দিনের রাষ্ট্র কাঠামো নিয়ে কথা বলছেন, সংসদেও হয়ত একইভাবে বিতর্কে অংশ নেবেন। কোনো কিছু মনমতো না হলে প্রতীকী প্রতিবাদ করবেন, ওয়াক আউট করবেন।

























