‘যেসব আসামি দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং যারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার’
Ñড. তৌহিদুল হক, সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক
‘যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। যারা দেশত্যাগ করেছেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে চেষ্টা চলছে’
– বাহারুল আলম, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলের পতন ঘটে। জনরোষের ভয়ে শেখ হাসিনার সরকারের আজ্ঞাবহ উপদেষ্টা মন্ত্রী-এমপিসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে যান। গত বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর শুরু হয় পুলিশসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার কাজ। একই সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাষনামলের উপদেষ্টাসহ শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রী-এমপিসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। শুরু হয় গ্রেপ্তার অভিযান। এরই মধ্যে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলের সাবেক উপদেষ্টা ও শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি এমনকি আইজিপিসহ সরকারি উচ্চপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়। এদের অনেককে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদের একেক জনের বিরুদ্ধে রয়েছে গণহত্যা, হত্যা, হত্যাচেষ্টা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও অর্থ আত্মসাতের শত শত মামলা। অভিযুক্তদের অধিকাংশই বিলুপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন। তারা এখন বিচারেরর মুখোমুখি। বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারের পর এ পর্যন্ত সাতজন মন্ত্রী জামিনে রয়েছেন। অনেকের সম্পত্তি জব্দ করাসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় অনেক মন্ত্রী-এমপি কারাগারের চার দেয়ালের ভেতর নিজেদের অপকর্ম নিয়ে এখন বন্দি জীবনে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে এখনো অনেক মন্ত্রী-এমপি দেশের ভেতরই আত্মগোপনে রয়েছেন। আবার অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হকের মতে, যেসব আসামি দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং যারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। যারা দেশত্যাগ করেছেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে চেষ্টা চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। সময় যত গড়াতে থাকে, আন্দোলন আরও বেগবান হতে শুরু করে। একপর্যায়ে শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাকে কঠোর নির্দেশনা দেয়। এরপর পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো শুরু করে। গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে বেরোবি ক্যাম্পাসের অদুরেই পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান বেরোবি’র শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তার মৃত্যুর পরই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা। এরপর শুরু হয় একের পর এক কর্মসূচি। সবশেষ ঢাকা ব্লকেড কর্মসূচির পাশাপাশি সরকার পতনের একদফা দাবিতে মাঠে নামে ছাত্র-জনতা। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। জনরোষের ভয়ে পর্যায়ক্রমে পালাতে শুরু করেন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। ঘটনার পর টানা ৩ দিন গোটা দেশ ছিল থমথমে পরিস্থিতি। ছিল না কোনো সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন নির্বিকার। গত বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এরপর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শুরু হয় সব দপ্তর ও মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থায় সংস্কার কার্যক্রম। একের পর রদবদল প্রক্রিয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করে। পরবর্তীতে জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের ঘটনায় ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন থানায় ও আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। ওইসব মামলায় আসামি করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ তার আজ্ঞাবহ সাবেক উপদেষ্টা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী-এমপি, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা এমনকি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। ঢালাও মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে নিজ নিজ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান অভিযুক্তরা। এরই মধ্যে শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ শতাধিক মন্ত্রী-এমপিকে গ্রেপ্তার করে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরে রিমান্ড শেষে আদালতের নির্দেশে অনেক মন্ত্রী-এমপিকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। নিজেদের অপকর্মের দায়ে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে বন্দি জীবনে দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন মন্ত্রী-এমপিরা।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিলুপ্ত দ্বাদশ সংসদের অধিকাংশ সদস্যরাও গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। তাদের কেউ ভারতে, কেউ মালয়েশিয়ায়, কেউ যুক্তরাজ্যে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১২ জন সাবেক এমপি, সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। তাদের মধ্যে সাবেক নারী এমপি ১২ জন। গ্রেপ্তার সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে সাতজন পরে জামিন পেয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক ২৮ মন্ত্রী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ১০, সাবেক উপমন্ত্রী ৩, দ্বাদশ সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু (পাবনা-১) ও সরকারদলীয় সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ (পটুয়াখালী-২)। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তিন উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী কারাগারে রয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১০ মে আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্র্বর্তী সরকার। গত ১২ মে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সর্বপ্রথম গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাবেক এমপি এম আব্দুল লতিফ। চট্টগ্রাম থেকে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে ৯ আগস্ট। তার বিরুদ্ধে ২০১৮-২৪ সাল পর্যন্ত একাধিক গুম, খুন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা রয়েছে।
এরপর ১৩ আগস্ট রাজধানীর সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টা (ঢাকা-১ আসনের সাবেক এমপি) সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি)। অভিযোগ রয়েছে, তারা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এবং প্রভাবশালী হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা করা হয় ঢাকার একটি আদালতে। ১৫ আগস্টের ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। এতে অন্তত ৩৮ জন নিহত ও কয়েকশ মানুষ আহত হন বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নির্দেশনার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একের পর মামলা করা হয়। তিনি ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৬-১০টি মামলা রয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে অর্ধশতাধিক মামলা। গ্রেপ্তারের পর বেশির ভাগকেই দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার অধিকাংশ আসামির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক মন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, সাবেক এমপিসহ ২০ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
তদন্ত সংস্থার একাধিক সূত্র জানায়, সালমান এফ রহমানকে জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এসব মামলায় তাকে দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তিনি বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। ব্যাংক থেকে ঋণ, শেয়ারবাজারে কারসাজির মাধ্যমে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগেও তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করা হয়েছে। আদালত তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিভিন্ন সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের শেষ তিন মেয়াদের আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে এ পর্যন্ত হত্যা, হত্যাচেষ্টা, গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতির অভিযোগে করা ৫৫টির বেশি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় তার মোট ৫১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা রয়েছে। এছাড়া সাবেক পররাষ্ট্র, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ২১টি মামলায়। চাঁদপুর-৩ আসনের টানা চারবারের এই সাবেক এমপিকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯ আগস্ট।
গ্রেপ্তারের পর জামিন পেয়েছেন সাতজন। তারা হলেন- সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান (সুনামগঞ্জ-৩), সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, নায়েব আলী জোয়ারদার (ঝিনাইদহ-১), তাহজীব আলম সিদ্দিক (ঝিনাইদহ-২) এবং মেজর (অব.) সালাহউদ্দিন মিয়াজী (ঝিনাইদহ-৩)।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ আমলের অন্তত ৬৩ জন মন্ত্রী-এমপির বিদেশে অবস্থানের তথ্য রয়েছে। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মাহবুব উল আলম হানিফ ভারতে, সাবেক মৎস্যমন্ত্রী আবদুর রহমান, সাবেক নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ যুক্তরাজ্যে এবং আরও কয়েকজন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা পলাতক। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ২৪ জুনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ায় যত দ্রুত সম্ভব, এসব মামলার চার্জশীট দাখিল করে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, মামলার যেসব আসামি দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং যারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
এদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক আসামি দেশত্যাগ করেছেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে চেষ্টা চলছে।























