- বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর গ্যাসের বিল বকেয়া এখন ২১ হাজার কোটি টাকা
- বকেয়া আদায় না হওয়ায় বিপাকে দেশের ছয় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি
- বকেয়া আদায়ে সরকারের কড়াকাড়ি থাকলেও পরিস্থিতির উন্নতি নেই
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত গভীর আর্থিক সংকটে রয়েছে। দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাস সরবরাহের বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে দেশের ছয়টি প্রধান গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কাছে গ্যাসের বকেয়া বিল দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৭৯ কোটি টাকার ওপরে। যা বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের আর্থিক ও কার্যকরী স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। সরকার বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধে বিগত সরকারের চেয়ে অনেক তৎপর হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে অর্থ আদায়ে সফলতা দেখাতে পারছে না। বিশেষ করে বিপুল অর্থ দিয়ে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে গ্যাস সরবরাহ করলেও ওই গ্যাসের বিল আদায় হচ্ছে না। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মূলত গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে। এই বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এর কাছে বিক্রি করা হয়। বিপিডিবি নিজেও বিদ্যুৎ ক্রেতাদের থেকে নিয়মিত বিল আদায় করতে না পারায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো তাদের গ্যাস বিল পরিশোধে অনিয়ম করে। এই চেইন রিএকশনে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো অর্থ না পাওয়ায় আর্থিক সংকটে হিমশিম খাচ্ছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় পাওনাদার প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে তাদের পাওনা প্রায় ৮ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনা ৩ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা এবং বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পাওনা ৪ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পাওনা ৬৯৮ কোটি টাকা, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেডের পাওনা ৪ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের পাওনা ১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের পাওনা ১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। মার্চ ও এপ্রিল মাসের হিসাব অন্তর্ভুক্ত করলে মোট বকেয়ার পরিমাণ ২৩ হাজার কোটি টাকার আশেপাশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
বিগত সরকারের তুলনায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বকেয়া আদায়ে অনেক বেশি তৎপর। গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে গ্যাসের বকেয়া ৭৫ কোটি ডলার থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে ২৪ কোটি ডলারে। সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বকেয়া কমানোর জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ ও অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ। সরকারি গ্যাস বিল আদায়ে বকেয়া কমানোর জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা নিয়মিত বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদের জন্য, যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। যদিও বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের বিল আদায়ের হারে কিছুটা উন্নতি ঘটেছে, গত মাসে বকেয়া আদায়ের হার ছিল ১১০ শতাংশ। অর্থাৎ পূর্বের তুলনায় আদায় বেড়েছে, তবে অগ্রগতি যথেষ্ট নয়।
বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে বকেয়া বিল এখনো তিন মাসের বেশি রয়েছে, যা আগে ছিল ছয় মাস। বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সভাপতি ডেভিড হাসানাত জানাচ্ছেন, বকেয়া কমানোর জন্য সরকার আন্তরিক হলেও বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কারণে আইপিপিগুলোর মধ্যে কিছু অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সার্ভিস চার্জ ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, বিদ্যুতে গ্যাসের বকেয়া বিল আদায়ে জ্বালানি বিভাগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিল বকেয়া রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা করা হয়েছে। কারো দুই মাসের অধিক বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। আবাসিকের ক্ষেত্রে সংযোগ বিচ্ছিন্ন অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। সরকারি গ্যাস বিল আদায়ে বকেয়া বিল আদায়ে একটা কমিটি করা হয়েছে। বকেয়ার বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করা হচ্ছে।























