- শাটডাউনের হুঁশিয়ারি এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
- সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি অব্যাহত
- দুই দিন ধরে শ্রম ভবনে অবরুদ্ধ কারখানা মালিকরা
- শাহবাগ মোড় অবরোধ চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের একের পর এক আন্দোলন, অবরোধ ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা। কথায় কথায় রাস্তা দখল করা নিয়মে পরিণত হয়ে যায়। এমনকি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে লাগাতার কর্মসূচি। অবস্থা বেগতিক দেখে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনা এলাকা, সচিবালয়, শাহবাগসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সভা-সমাবেশ-মিছিল নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কিন্তু কে শোনে কার কথা, কখনো যৌক্তিক আর কখনো বা ঠুনকো দাবিতে রাজপথে সরব হয়ে উঠছেন আন্দোলনকারীরা। সাম্প্রতিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে একের পর এক আন্দোলন নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। সেই সঙ্গে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে পায়ে হেঁটে। এতে তিক্ত-বিরক্তি প্রকাশ করেও নিস্তার পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানের অপসারণের দাবিতে রাজস্ব প্রশাসনে ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ নামে আন্দোলনরত প্ল্যাটফর্ম চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করা হলে আগামী ২৮ জুন থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে ‘লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এবং মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা। তারা অভিযোগ করেন, এনবিআর চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার করে বদলি, হয়রানি ও নিপীড়নের মাধ্যমে রাজস্ব ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনের আগে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন সহস্রাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে কলম বিরতি। অনেককে ‘কাফনের কাপড়’ পরে কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়, যা প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এদিকে, আন্দোলনের মধ্যে গত রোববার আয়কর অনুবিভাগের পাঁচ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে, যা এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বদলিকৃতদের মধ্যে রয়েছেন আয়কর গোয়েন্দা ইউনিট, বোর্ড অফিস, ঢাকা ও কুমিল্লা কর অঞ্চলের কর্মকর্তারা। আদেশ অনুযায়ী, তাদের মঙ্গলবারের মধ্যেই নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া যশোরের বেনাপোল কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আবারও কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করেছেন। তারা সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করেননি কর্মকর্তারা। এতে বিপাকে পড়েন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
এদিকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থিত সচিবালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে অবস্থান নেন। কর্মবিরতির পর অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে থেকে আন্দোলন করছেন সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা।
চাকরিতে পুনর্বহালসহ তিন দফা দাবিতে গতকাল রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। এতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকায়। সোমবার দুপুরে শাহবাগ মোড়ে এসে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তারা সেখানেই অবস্থান নেন। এদিন, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকা থেকে মিছিল বের করেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি হয়ে শাহবাগে এসে জড়ো হয়।
সব প্রার্থীকে সনদ দেওয়ার দাবিতে আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে মৌখিক পরীক্ষায় রেজাল্টবঞ্চিতরা। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব প্রার্থীকে সনদ দেওয়ার দাবিতে গত রোববার আন্দোলনরতদের ওপর জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে তারা আজ আবারও নিজেদের দাবি আদায়ে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। এ সময় আন্দোলনকারীরা জানান, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
বকেয়া বেতন ও বোনাসের টাকা পরিশোধের আশ্বাস না পাওয়ায় কারখানা মালিককে অবরুদ্ধ করে আজও বিক্ষোভ করছেন রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া কয়েকশ শ্রমিক। তারা গাজীপুরের সিজন্স ড্রেসেস লিমিটেডে কর্মরত। রোববার সকাল থেকে অবরুদ্ধ মালিককেও বের হতে দিচ্ছেন না তারা। রাতেও সেখানে অবস্থানে ছিলেন কয়েকশ শ্রমিক। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিনে গিয়ে সেখানে দেখা গেছে, ভবনের সামনের ফটকে ও আশপাশের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন তারা। শুধু তাই নয়, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে না সরারও ঘোষণা দিয়েছেন।























