- পাল্টে গেছে চিত্র, আগ্রহ হারাচ্ছে মানুষ
- শেষ সাড়ে নয় মাসে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ১৯৬৩ জন
- গতি ফেরাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার
‘পেনশন মেলা আয়োজনের মাধ্যমে কিছু পজিটিভ ইমপ্যাক্ট পড়েছে। কিছু কমিটমেন্ট (প্রতিশ্রুতি) আমরা পেয়েছি। কিছু এনজিও আমাদের সঙ্গে এনরোলমেন্ট হবে বলে জানিয়েছে। এটা যে আছে, সেটা জানান দেওয়ার জন্য আমরা আবার মানুষের মধ্যে যাচ্ছি। আশা করছি আবার আগের মতো মানুষের আগ্রহ বাড়বে’ Ñগোলাম মোস্তফা, সদস্য, সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ
সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার। শুরুর দিকে এই পেনশন স্কিমে মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেলেও, এক বছর ধরে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ সাড়ে নয় মাসে মাত্র এক হাজার ৯৬৩ জন নতুন করে নিবন্ধন করেছেন। এমন পরিস্থিতির কারণে গতি হারিয়েছে এই কর্মসূচি। তবে নিবন্ধনের গতি বাড়াতে বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। সরকার মেলা, কর্মশালা ও বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে মাঠে নামছে নিবন্ধন বাড়ানোর জন্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পেনশন মেলা আয়োজনের মাধ্যমে কিছু পজিটিভ ইমপ্যাক্ট পড়েছে। কিছু কমিটমেন্ট (প্রতিশ্রুতি) কর্তৃপক্ষ পেয়েছে। কিছু এনজিও পেনশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এনরোলমেন্ট হবে বলে জানিয়েছে। এতে আবার আগের মতো মানুষের আগ্রহ বাড়বে বলেও আশা করছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতনের পর সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু আছে কি না, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সংশয় ছিল। পেনশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও তেমন প্রচারণা চালানো হয়নি। যে কারণে নিবন্ধনের গতি বেশ কমে যায়। এখন পেনশন স্কিমের নিবন্ধনের গতি বাড়াতে এরই মধ্যে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সাত জেলাÑ রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, গাইবান্ধা, রংপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে পেনশন মেলা করা হয়েছে। এছাড়া পেনশন স্কিমে নিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য কিছু এনজিওর সঙ্গে চুক্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আয়োজন করা হচ্ছে কর্মশালার।
এদিকে, নিবন্ধনের গতি কমলেও প্রতিনিয়ত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে টাকা জমার পরিমাণ বাড়ছে। বাড়ছে বিনিয়োগের পরিমাণ। এরই মধ্যে বিনিয়োগ করা অর্থ চাঁদা বাবদ জমা পড়া অর্থের পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা- এই চার স্কিমে এরই মধ্যে ৩ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা জমা দিয়েছে। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ১৮৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার কিছু বেশি। বিপরীতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম থেকে সরকারি বিভিন্ন ট্রেজারি বন্ড ও বিলে এরই মধ্যে প্রায় ১৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ, চাঁদা বাবদ যে অর্থ জমা পড়েছে, বিনিয়োগ হয়েছে তার চেয়ে চার কোটি টাকার কিছু বেশি। জমা হওয়া চাঁদার চেয়ে বিনিয়োগ বেশি হওয়ার কারণ- সরকারি ট্রেজারি বন্ড ও বিলে বিনিয়োগ করে যে মুনাফা পাওয়া গেছে, সেই অর্থও বিনিয়োগ করা হয়েছে।
জানা গেছে, সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে ২০২৩ সালে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে সরকার। ওই বছরের ১৭ আগস্ট উদ্বোধনের পরপরই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আবেদন শুরু হয়। পরবর্তীসময়ে সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামে নতুন স্কিম চালু করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তা বাতিল করা হয়। সে হিসেবে বর্তমানে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতাÑ এই চারটি স্কিম চালু রয়েছে। শুরুতে সর্বজনীন পেনশনে মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেলেও মাঝে নিবন্ধনে কিছুটা ধীরগতি আসে। তবে গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে হু হু করে বাড়তে থাকে নিবন্ধন করে চাঁদা জমা দেওয়া মানুষ। এপ্রিলে ৬০ হাজার মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করেন। এতে ওই মাসে সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধনের সংখ্যা এক লাখের মাইলফলক স্পর্শ করে। এরপর মে ও জুন মাসেও বিপুল সংখ্যক মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা জমা দেন। এতে জুলাই মাস শুরু হতেই নিবন্ধন সম্পন্নকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ হয়ে যায়। আর জমা পড়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা। তবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের গতি বেশ কমে যায়। শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলন শুরু হয় জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই। ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের গতি কমতে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২ জুলাই দুপুর পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদা পরিশোধ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করেন ৩ লাখ ৪০ হাজার ২৪২ জন। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি ৮০ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে ৯২ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়। দুই মাস পর ৯ সেপ্টেম্বর সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদা পরিশোধ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭২ হাজার ৯৪ জন। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২৩ কোটি ৫৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। পরবর্তীসময়ে নিবন্ধনের হার আরও কমে যায়। সবশেষ চলতি বছরের ২৪ জুন দুপুর পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা জমাদানকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৭ জন। অর্থাৎ, শেষ সাড়ে নয় মাসে মাত্র ১ হাজার ৯৬৩ জন নতুন নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে শেষ সাড়ে তিন মাসে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৬৯৬ জন। গত ৩ মার্চ পেনশন স্কিমে নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬১ জন।
জানতে চাইলে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার কিছু বেশি চাঁদা জমা পড়েছে এবং বিনিয়োগ করা হয়েছে ১৯০ কোটি টাকা। জমা পড়া চাঁদার চেয়ে বিনিয়োগ বেশি হওয়ার কারণ- বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা হয়েছে, সেই অর্থও বিনিয়োগ করা হয়েছে। পেনশন মেলা আয়োজনের মাধ্যমে কিছু পজিটিভ ইমপ্যাক্ট পড়েছে। কিছু কমিটমেন্ট (প্রতিশ্রুতি) আমরা পেয়েছি। কিছু এনজিও আমাদের সঙ্গে এনরোলমেন্ট হবে বলে জানিয়েছে। এটা যে আছে, সেটা জানান দেওয়ার জন্য আমরা আবার মানুষের মধ্যে যাচ্ছি। আশা করছি আবার আগের মতো মানুষের আগ্রহ বাড়বে।

























