“পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।”
শুধু রবী ঠাকুরের এই গানটাই আনুষ্ঠানিকভাবে বাজানো হয়নি। কিন্তু গানের প্রতিটি লাইন যেন ক্ষণে ক্ষণে বেজে উঠছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট দলের ক্রিকেটারদের মনে।বাংলােেশর টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২৫ বছর উদযাপন অনুষ্ঠান ঘটা করে আয়োজন করেছে বিসিবি। গতকাল এই অনুষ্ঠানটি হয়েছে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের নর্থ প্লাজায়। যেখানে বিসিবির সভাপতি হিসেবে মঞ্চে আগে থেকেই ছিলেন টেস্টেও প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এরপর সঞ্চালক মাজহার উদ্দিন অমি যখন একে একে মঞ্চে ডাকছিলেন শাহরিয়ার হোসেন বি্যুৎ, মেহরাব হোসেন অপি, হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ রফিক, আল শাহরিয়ার রোকনদের সবার চোখে মুখে যেন ভেসে উঠছিল প্রথম টেস্ট খেলার রোমাঞ্চকর স্মৃতি। শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের এক নম্বর ওপেনার হিসেবে খেলতে নামেন মেহরাব হোসেন অপির সঙ্গে। ভারতীয় পেস বোলার জাভাগাল শ্রীনাথের করা প্রথম ওভারের প্রথম বলটি খেলেন বিদ্যুৎ। তখন তার মনে কি অবস্তা হয়েছিল, সেটা তিনি বর্ণনা করলেন।
অপি মজার একটা ঘটনা বলেন। হাসতে হাসতে বলেন, কোচ সারওয়ার ইমরানকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে নিজের অনুশীলনের টি-শার্ট একজন বলবয়কে দিয়ে দিয়েছিলেন। আবার এজন্য তাকে ৫০০ টাকা জরিমানাও গুণতে হয়েছিল। এভাবেই হাসি আড্ডায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান। চমৎকার এই অনুষ্ঠানে যদিও উপস্তিত ছিলেন না টেস্টেও প্রথম অধিনায়ক নাঈমুর রহমান ুর্জয়, আকরাম খান, খালে মাসুদ পাইলট। ব্যক্তিগত কারণে তারা আসতে পারেননি অনুষ্ঠানে।এর আগে সব ক্রিকেটারকে কালো ব্লেজার পরিয়ে নে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমু সজীব ভূঁইয়া। বুক পকেটের ওপর লাগানো ছিল ২৫ বছর উদযাপনের লোগো। একে একে ক্রিকেটাররে নাম ঘোষণা হওয়ার পর যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমু সজীব ভূঁইয়া গর্বিত এই ক্রিকেটাররে হাতে তুলে দিচ্ছেন সম্মাননা ক্রেস্ট এবং ফুলের তোড়া। এরপর অভিষেক টেস্টের ক্রিকেটাররে নিয়ে কাটা হয় ২৫ পাউন্ড ওজনের বিশাল এক কেক। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে কেক খাইয়ে েিলন ক্রীড়া উপদেষ্টা। বুলবুলও এক সময়ের সতীর্থদের কেক খাইয়ে দেন। ২০০০ সালের ২৬ জুন, লন্ডনে অনুষ্ঠিত আইসিসির বোর্ড সভায় ১০ নম্বর শে হিসেবে টেস্ট খেলার মর্যাদা লাভ করে বাংলাদেশ। এরপর ১০ নভেম্বও প্রথম টেস্ট খেলতে নামেন আমিনুল ইসলাম বুলবুলরা। ঢাকায় বাংলােেশর প্রথম টেস্টেও প্রতিপক্ষ ছিল ভারত।টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির দিন হিসেবে একে একে কেটে গেছে ২৫টি বছর। গতকাল সেই ঐতিহাসিক মাইলফলকের দিনের রজতজয়ন্তি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই দিনটাকে বিশেষভাবে পালন করার চেষ্টা করেছে। আরও বেশ কয়েকদিন আগে থেকে ‘বাংলাদেশ, সেলিব্রেটিং ২৫ ইয়ার ইন টেস্ট ক্রিকেট’ শিরোনামে বিভাগীয় শহরগুলোতে নানা আয়োজনে রজতজয়ন্তী উদযাপন করেছে।
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার মাইলফলকের দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে কেন্দ্রিয় আয়োজন রাখা হয় হোম অব ক্রিকেট, মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিবি সভাপতি এবং বাংলাশের অভিষেক টেস্টের অন্যতম সদস্য প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমু সজীব ভূঁইয়া।
বক্তব্যে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাশের ক্রিকেটে আজকে ২৫ বছরে পা েিয়ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে নেগেটিভ কিছু বলতে চাই না। কত ম্যাচ হেরেছি, খারাপ করেছি এসব না। আমাদের ক্রিকেটের অর্জন আছে।’ টেস্ট ক্রিকেটকে নতুন উশ্চতায় নিয়ে যেতে চান বিসিবির নতুন এই সভাপতি। তিনি জানালেন, আইসিসির শিরোপা জয়ের লক্ষ্যের কথাও। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘আগামীতে ৫০ বছর, ১০০ বছর পূর্তিতে আমরা থাকব কি না জানি না, কিন্তু ক্রিকেটটাকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে যেন আমরা গর্ব করতে পারি। ভবিষ্যতে যেন আইসিসির কোনো টুর্নামেন্ট জিততে পারি।’
ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রেকরণের কথা বলতে গিয়ে বুলবুল বলেন, ‘আমরা যেন বাংলােেশর ক্রিকেটকে শুধু বিকেন্দ্রেকরণেই করা না সেটা বাস্তবায়িত করতে চাই। আজ ২৬ দিন ধরে এই দায়িত্বে আছি। আমি ৪-৫টা প্রজেক্ট নিয়ে এনএসসিতে গেছি, মাননীয় উপদেষ্টা এখানে আছেন এনএসসির ডিরেক্টর আছেন সবাই আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আজ এই অনুষ্ঠানে যারা এসেছেন তারে ধন্যবা। যারা আসতে পারেননি তাদের মিস করছি।’ অনুষ্ঠানে এসে হাবিবুল বাশার স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। এই টেস্ট দলে একেবারে শেষ মুহূর্তে ডাক পান হাবিবুল বাশার। তিনি ভেবেছিলেন তাকে ডাকা হবে না। স্মৃতি রোমানান করতে গিয়ে বলেন, ‘ওই সময় মোবাইল ছিল না। টেলিফোনও ছিল না আমার। ভাড়া বাসায় থাকতাম। আমাকে বুলবুল ভাই খবর পাঠিয়ে জানায়, টেস্ট দলে আমি আছি।’
বর্তমানে বাংলাদেশের টেস্ট এখনও আগের জায়গায় রয়ে গেছে মনে করেন তিনি, ‘টেস্ট ক্রিকেটে আমাদেও স্ট্রাগলিং পিরিয়ড ছিল। তারপরও কিš‘ আমরা নিজেদের স্টাবলিশড করতে পেরেছি। কিন্তু শেষ ১৫ বছর যে ক্রিকেট খেলেছি আমাদের ফল আরও ভালো হওয়া উচিত ছিল। এবং এখন ২৫ বছ্রৃর পরে এসেও সেই একই ভুল করছি।’
এরপর তিনি যোগ করেন, ‘টেস্টে প্রথম ইনিংস খুব গুরুত্বপূর্ণ। হয় বল করতে হবে ভালো বা ব্যাট করতে হবে ভালো। প্রথম ইনিংসে যদি ভালো বোলিং বা ব্যাট করতে না পারি তাহলে টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে আসা কঠিন। বাকি চার দিন কিন্তু পিছিয়ে থেকেই চলতে হয়। আমরা প্রথম টেস্টে ভালো খেলেছিলাম গলে। কিন্তু এই টেস্টে আবার পিছিয়ে পড়েছি। এই বিষয়গুলো ২৫ বছর পরও এখনও সেই বিষয়ের আমরা পুনরাবৃত্তি করছি। এখন আমাদের যত ভালো অবকাঠামো আছে আমাদের অনুশীলন সুবিধা বেড়েছে ক্রিকেটও অনেক খেলার সুযোগ পাইছে। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের অবস্তান আরও ভালো হওয়া উচিত।’


























