০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাহরাইনের সামনে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দলটার সব সময়ই আক্ষেপ ছিল এশিয়ার দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানানোর। পরপর দুবার সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আফঈদা খন্দকারদের সেই আক্ষেপ শেষ হতে চলেছে। এবার সত্যি সত্যিই বড় মঞ্চে নিজেদেও সামর্থ্য দেখানোর পালা। ইয়াঙ্গুনে রোববার শুরু হচ্ছে এএফসি এশিয়ান কাপ নারী ফুটবল বাছাই। যেখানে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে ‘সি’ গ্রুপে। রোববার প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে বাহরাইনের। যে দলের সঙ্গে এর আগে কখনো দেখা হয়নি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের বৃটিশ কোচ পিটার বাটলার আত্মবিশ্বাসী। মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে বললেন, মেয়েরা সেরাটা নিংড়ে দিলে বাছাইয়ের বাধা ডিঙানো সম্ভব।
গ্রুপের তিন দলের মধ্যে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের (১২৮তম) পেছনে কেবল তুর্কমেনিস্তান (১৪১তম)। বাহরাইনের (৯২তম) চেয়েও এগিয়ে স্বাগতিক মিয়ানমার (৫৫তম)। বাছাইয়ের আট গ্রুপের সেরা আট দল পাবে মূল পর্বে খেলার টিকেট। বাংলাদেশের জন্য তাই পথটা মসৃণ নয় মোটেও।

কঠিন পথে ছোটার আত্মবিশ্বাস বাটলার খুঁজে নিচ্ছেন গত কয়েক মাসের সফরের পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে। সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে দুই ম্যাচ হারলেও আফঈদা-রিপারা শিখেছেন অনেক কিছু; ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের বিপক্ষে ড্রয়ে মেয়েদের খেলায় উন্নতির স্পষ্ট ছাপও দেখছেন কোচ। শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে এই ইংলিশ কোচের কণ্ঠে তাই আত্মবিশ্বাসের স্ফুরণ।
“আমরা একটা প্রকল্পের মধ্যেই তিনটা কার্যক্রম চালাচ্ছি। জাতীয় দল, অনূর্ধ্ব-১৭ ও ২০ দল। আমাদের ফ্যাসিলিটিজ কম। এ কারণে তিনটা গ্রুপের কার্যক্রম একসাথে চলছে। সিনিয়র দলে ৫০ শতাংশ খেলোয়াড়ই অনূর্ধ্ব-২০ বছর বয়সী। ফলে আমাদের পাইপলাইনটা ভালো আছে, বয়সভিত্তিক দলের মেয়েরাও খেলতে পারে জাতীয় দলে। সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও আমরা ইতিবাচক।”
ইতিবাচক ভাবনা নিয়েই প্রতিযোগিতা শুরু করতে চায় মেয়েরা। কোচ সেটাই বলেছেন, “সীমিত সুবিধার মধ্যেই ফেডারেশন র‌্যাঙ্কিংয়ে ওপরে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে ম্যাচের আয়োজন করেছিল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে এই টুর্নামেন্ট সবাই পুরোপুরি আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে শুরু করতে চায়।”
প্রতিপক্ষ তিন দলকে বিশ্লেষণ করেছেন বাটলার। তার বিশেষ দৃষ্টি শারীরিকভাবে শক্তিশালী বাহরাইনের ওপর। বাকিদেও প্রতিও যথেষ্ট সমীহ আছে তার। সাফ জয়ী কোচ অবশ্য সন্তুষ্ট নিজেদেও প্রস্তুতি নিয়েও, “আমি মনে করি, ফুটবলে আপনি কোনো দলকে খাটো করে দেখতে পারেন না। যে কোনো দলই আপনার পথ রোধ করে দাঁড়াতে পারে। মিয়ানমার শক্তিশালী, বাহরাইন শারীরিকভাবে শক্তিশালী ও তরুণ দল, উন্নতি করছে। আমি মনে করি, কোনো দলকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না।” এরপর তিনি যোগ করেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমরা পেশাদার মনোভাব নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি। নিজেদের কাজগুলো করেছি। আমাদের ভিডিও অ্যানালিস্ট সব প্রতিপক্ষ নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে। আমি মনে করি, ফুটবল যে কোনো সময় আপনাকে বিস্মিত করতে পারে।”

বাছাই পেরিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূল মঞ্চে খেলার বিস্ময় মনিকা, ঋতুপর্ণারা জন্ম দিতে পারবে কিনা, সে প্রশ্নের উত্তর আপাতত সময়ের হাতে তোলা। তবে অনেক কারণে বাটলারের বিশ্বাস, রিপা-মনিকা-ঋতুপর্ণাদের পক্ষে সম্ভব, “সংযুক্ত আরব আমিরাতে একেবারেই তরুণদের নিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। সেখানে অনেক কিছু শিখেছে মেয়েরা। ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের বিপক্ষে ড্র আমাদের জন্য একটা বেঞ্চমার্ক। এই সফরগুলো আমাদের দেখিয়েছে, আমরা কোথায় আছি, আমরা কী করতে পারি।”
অস্ট্রেলিয়ায় চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার আশাও করছেন তিনি,“আমাদের যে বাছাই পেরুনোর সুযোগ আছে তা আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। বাংলাদেশ কখনোই কোয়ালিফাই করেনি, তবে আমরা একটা সফরে আছি। ইতিবাচক আছি। নতুনদের দারুণ উন্নতিতে আমি খুবই ইতিবাচক। আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। একটার পর একটা ধাপ পেরুনো দিয়েই ভীত তৈরি হয়। সত্যি বলতে, যদি মেয়েরা তাদের সেরাটা দিতে পারে, তাহলে আমরা কোয়ালিফাই করতে পারি।”

বাহরাইন কোচ মোহাম্মেদ আদনান হুসেইন অবশ্য সর্বশেষ তিন ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ড্র, সৌদি আরবের বিপক্ষে হারের প্রসঙ্গ টেনে দিলেন নিজেদের মেলে ধরার প্রতিশ্রুতি। তিনি বলেন, “আমাদেও প্রস্তুতি ভালো। অল্প সময় অনুশীলন করেছি। তিনটা ম্যাচ খেলেছি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি ও সৌদি আরবের বিপক্ষে একটি। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ যে আমরা এখানে আসতে পেরেছি। অভিজ্ঞ ও নবীনের মিশেল আছে আমাদের দলে। আশা করি, আমরা ভালো কিছু মেলে ধরতে পারব।”

 

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাহরাইনের সামনে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ১০:২৪:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দলটার সব সময়ই আক্ষেপ ছিল এশিয়ার দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানানোর। পরপর দুবার সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আফঈদা খন্দকারদের সেই আক্ষেপ শেষ হতে চলেছে। এবার সত্যি সত্যিই বড় মঞ্চে নিজেদেও সামর্থ্য দেখানোর পালা। ইয়াঙ্গুনে রোববার শুরু হচ্ছে এএফসি এশিয়ান কাপ নারী ফুটবল বাছাই। যেখানে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে ‘সি’ গ্রুপে। রোববার প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে বাহরাইনের। যে দলের সঙ্গে এর আগে কখনো দেখা হয়নি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের বৃটিশ কোচ পিটার বাটলার আত্মবিশ্বাসী। মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে বললেন, মেয়েরা সেরাটা নিংড়ে দিলে বাছাইয়ের বাধা ডিঙানো সম্ভব।
গ্রুপের তিন দলের মধ্যে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের (১২৮তম) পেছনে কেবল তুর্কমেনিস্তান (১৪১তম)। বাহরাইনের (৯২তম) চেয়েও এগিয়ে স্বাগতিক মিয়ানমার (৫৫তম)। বাছাইয়ের আট গ্রুপের সেরা আট দল পাবে মূল পর্বে খেলার টিকেট। বাংলাদেশের জন্য তাই পথটা মসৃণ নয় মোটেও।

কঠিন পথে ছোটার আত্মবিশ্বাস বাটলার খুঁজে নিচ্ছেন গত কয়েক মাসের সফরের পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে। সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে দুই ম্যাচ হারলেও আফঈদা-রিপারা শিখেছেন অনেক কিছু; ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের বিপক্ষে ড্রয়ে মেয়েদের খেলায় উন্নতির স্পষ্ট ছাপও দেখছেন কোচ। শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে এই ইংলিশ কোচের কণ্ঠে তাই আত্মবিশ্বাসের স্ফুরণ।
“আমরা একটা প্রকল্পের মধ্যেই তিনটা কার্যক্রম চালাচ্ছি। জাতীয় দল, অনূর্ধ্ব-১৭ ও ২০ দল। আমাদের ফ্যাসিলিটিজ কম। এ কারণে তিনটা গ্রুপের কার্যক্রম একসাথে চলছে। সিনিয়র দলে ৫০ শতাংশ খেলোয়াড়ই অনূর্ধ্ব-২০ বছর বয়সী। ফলে আমাদের পাইপলাইনটা ভালো আছে, বয়সভিত্তিক দলের মেয়েরাও খেলতে পারে জাতীয় দলে। সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও আমরা ইতিবাচক।”
ইতিবাচক ভাবনা নিয়েই প্রতিযোগিতা শুরু করতে চায় মেয়েরা। কোচ সেটাই বলেছেন, “সীমিত সুবিধার মধ্যেই ফেডারেশন র‌্যাঙ্কিংয়ে ওপরে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে ম্যাচের আয়োজন করেছিল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে এই টুর্নামেন্ট সবাই পুরোপুরি আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে শুরু করতে চায়।”
প্রতিপক্ষ তিন দলকে বিশ্লেষণ করেছেন বাটলার। তার বিশেষ দৃষ্টি শারীরিকভাবে শক্তিশালী বাহরাইনের ওপর। বাকিদেও প্রতিও যথেষ্ট সমীহ আছে তার। সাফ জয়ী কোচ অবশ্য সন্তুষ্ট নিজেদেও প্রস্তুতি নিয়েও, “আমি মনে করি, ফুটবলে আপনি কোনো দলকে খাটো করে দেখতে পারেন না। যে কোনো দলই আপনার পথ রোধ করে দাঁড়াতে পারে। মিয়ানমার শক্তিশালী, বাহরাইন শারীরিকভাবে শক্তিশালী ও তরুণ দল, উন্নতি করছে। আমি মনে করি, কোনো দলকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না।” এরপর তিনি যোগ করেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমরা পেশাদার মনোভাব নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি। নিজেদের কাজগুলো করেছি। আমাদের ভিডিও অ্যানালিস্ট সব প্রতিপক্ষ নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে। আমি মনে করি, ফুটবল যে কোনো সময় আপনাকে বিস্মিত করতে পারে।”

বাছাই পেরিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূল মঞ্চে খেলার বিস্ময় মনিকা, ঋতুপর্ণারা জন্ম দিতে পারবে কিনা, সে প্রশ্নের উত্তর আপাতত সময়ের হাতে তোলা। তবে অনেক কারণে বাটলারের বিশ্বাস, রিপা-মনিকা-ঋতুপর্ণাদের পক্ষে সম্ভব, “সংযুক্ত আরব আমিরাতে একেবারেই তরুণদের নিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। সেখানে অনেক কিছু শিখেছে মেয়েরা। ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের বিপক্ষে ড্র আমাদের জন্য একটা বেঞ্চমার্ক। এই সফরগুলো আমাদের দেখিয়েছে, আমরা কোথায় আছি, আমরা কী করতে পারি।”
অস্ট্রেলিয়ায় চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার আশাও করছেন তিনি,“আমাদের যে বাছাই পেরুনোর সুযোগ আছে তা আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। বাংলাদেশ কখনোই কোয়ালিফাই করেনি, তবে আমরা একটা সফরে আছি। ইতিবাচক আছি। নতুনদের দারুণ উন্নতিতে আমি খুবই ইতিবাচক। আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। একটার পর একটা ধাপ পেরুনো দিয়েই ভীত তৈরি হয়। সত্যি বলতে, যদি মেয়েরা তাদের সেরাটা দিতে পারে, তাহলে আমরা কোয়ালিফাই করতে পারি।”

বাহরাইন কোচ মোহাম্মেদ আদনান হুসেইন অবশ্য সর্বশেষ তিন ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ড্র, সৌদি আরবের বিপক্ষে হারের প্রসঙ্গ টেনে দিলেন নিজেদের মেলে ধরার প্রতিশ্রুতি। তিনি বলেন, “আমাদেও প্রস্তুতি ভালো। অল্প সময় অনুশীলন করেছি। তিনটা ম্যাচ খেলেছি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি ও সৌদি আরবের বিপক্ষে একটি। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ যে আমরা এখানে আসতে পেরেছি। অভিজ্ঞ ও নবীনের মিশেল আছে আমাদের দলে। আশা করি, আমরা ভালো কিছু মেলে ধরতে পারব।”