০৩:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

অনিয়ম ও সংকটে সেবাবঞ্চিত রোগীরা

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই রোগী। কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মের কারণে সরকারি হাসপাতাল এখন রোগীদের ভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সময়মতো আসেন না। ফলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। অনেক সময় ডাক্তাররা আসেনই না। বহির্বিভাগের এনসিডি কর্নারের কার্ডধারী রোগীরাও পান ওষুধ। এছাড়া হাসপাতালের টয়লেট ও বেসিন ময়লা-আবর্জনায় ব্যবহার অনুপযোগী। এবার বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন কর্মচারীরা। হাসপাতালের চারপাশে ড্রেনে ময়লা ও আবর্জনা জমাট বেঁধে বাতাসে মারাত্বক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নালায় নোংরা পানি জমে মাছি, মশার উপদ্রপও বেড়েছে।
একাধিক সেবাপ্রত্যাশীর অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে রোগীরা পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত ওষুধ। সরকারি ওষুধ না পেয়ে রোগা শরীর নিয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। এর মধ্যেই রয়েছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ও দালালদের দৌরাত্ম্য। ফলে নানা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন হাসপাতালের সেবাপ্রত্যাশীরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৮ টার পরও বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের বহির্বি বিভাগ গেইট । ৯টার পরও বেশিরভাগ চিকিৎসকের কক্ষে ঝুলছে তালা। এ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায় সেবা নিতে আসা শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের। কেউ কেউ টিকেট নিয়ে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও চিকিৎসকের দেখা নেই। সকাল ৯টা পেরিয়ে দশটা, এক এক করে আসতে শুরু করেছে ডাক্তারা। এসব অনিয়ম দেখার দায়িত্বে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও আসলেন সকাল সাড়ে দশটার পরে।
এছাড়া হাসপাতালের চারপাশে ড্রেনেস ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে ময়লা আবর্জনা ও নোংরা পানি জমে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। হাসপাতালে ভেতরে রোগীদের জন্য নির্ধারিত টয়লেট গুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে আছে। অনেক জায়গায় ময়লা-আবর্জনা জমে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। ওয়াশরুমের বেসিনগুলো ভাঙাচোরা। সবমিলিয়ে যেন নোংরা পরিবেশে চলছে চিকিৎসাসেবা। এসব বিষয়ে চাকরি হারানো ও বদলির ভয়ে চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীসহ হাসপাতালের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
চক্ষু সেবা নিতে আসা এক সেবা প্রত্যাশী বলেন, “গত তিনদিন ধরে আমি চোখের ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে আসতেছি। একদিন বলে ডাক্তার নাই, আরেকদিন বলে ডাক্তার আসেনি। আজকে বলছে অনলাইনে ত্রুটির কারণে চক্ষু চিকিৎসা বন্ধ। তাই আজকেও চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যাচ্ছি। ”
আবুল কালাম নামের ষাটোর্ধ একজন বলেন, “আমার ডায়াবেটিকস পরীক্ষা জন্য ৩৬০ টাকা ফি নিয়েছে। আমাকে কোন রশিদ দেয়নি। সরকারি হাসপাতালে এসেও এত টাকা দিতে হলে গরিব মানুষ যাবে কোথায়? ” জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৌনম বড়ুয়া বলেন, ‘ আমার ডাক্তাররা প্রতিদিন সময়মত আসেন। আজকে একটু দেরি হয়েছে।”
তিনি বলেন, ফটিকছড়ি উপজেলা অনেক বড়, তাই হাসপাতালের বরাদ্ধের ওষুধ দিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট করা যায় না। এছাড়া হাসপাতালে প্রায় ৩৫% জনবল সংকট। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সংকটের সমাধান হবে। হাসপাতালে দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি সকালে সাব সেন্টার ভিজিট করতে গিয়েছিলাম। তাই আসতে দেরি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ডাক্তাররা সাধারণত সকাল আটটায় কর্মস্থলে পৌঁছানোর কথা। কেন ডাক্তাররা দেরিতে এসেছেন বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিব।
এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

অনিয়ম ও সংকটে সেবাবঞ্চিত রোগীরা

আপডেট সময় : ০৭:৩৮:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই রোগী। কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মের কারণে সরকারি হাসপাতাল এখন রোগীদের ভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সময়মতো আসেন না। ফলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। অনেক সময় ডাক্তাররা আসেনই না। বহির্বিভাগের এনসিডি কর্নারের কার্ডধারী রোগীরাও পান ওষুধ। এছাড়া হাসপাতালের টয়লেট ও বেসিন ময়লা-আবর্জনায় ব্যবহার অনুপযোগী। এবার বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন কর্মচারীরা। হাসপাতালের চারপাশে ড্রেনে ময়লা ও আবর্জনা জমাট বেঁধে বাতাসে মারাত্বক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নালায় নোংরা পানি জমে মাছি, মশার উপদ্রপও বেড়েছে।
একাধিক সেবাপ্রত্যাশীর অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে রোগীরা পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত ওষুধ। সরকারি ওষুধ না পেয়ে রোগা শরীর নিয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। এর মধ্যেই রয়েছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ও দালালদের দৌরাত্ম্য। ফলে নানা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন হাসপাতালের সেবাপ্রত্যাশীরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৮ টার পরও বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের বহির্বি বিভাগ গেইট । ৯টার পরও বেশিরভাগ চিকিৎসকের কক্ষে ঝুলছে তালা। এ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায় সেবা নিতে আসা শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের। কেউ কেউ টিকেট নিয়ে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও চিকিৎসকের দেখা নেই। সকাল ৯টা পেরিয়ে দশটা, এক এক করে আসতে শুরু করেছে ডাক্তারা। এসব অনিয়ম দেখার দায়িত্বে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও আসলেন সকাল সাড়ে দশটার পরে।
এছাড়া হাসপাতালের চারপাশে ড্রেনেস ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে ময়লা আবর্জনা ও নোংরা পানি জমে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। হাসপাতালে ভেতরে রোগীদের জন্য নির্ধারিত টয়লেট গুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে আছে। অনেক জায়গায় ময়লা-আবর্জনা জমে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। ওয়াশরুমের বেসিনগুলো ভাঙাচোরা। সবমিলিয়ে যেন নোংরা পরিবেশে চলছে চিকিৎসাসেবা। এসব বিষয়ে চাকরি হারানো ও বদলির ভয়ে চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীসহ হাসপাতালের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
চক্ষু সেবা নিতে আসা এক সেবা প্রত্যাশী বলেন, “গত তিনদিন ধরে আমি চোখের ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে আসতেছি। একদিন বলে ডাক্তার নাই, আরেকদিন বলে ডাক্তার আসেনি। আজকে বলছে অনলাইনে ত্রুটির কারণে চক্ষু চিকিৎসা বন্ধ। তাই আজকেও চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যাচ্ছি। ”
আবুল কালাম নামের ষাটোর্ধ একজন বলেন, “আমার ডায়াবেটিকস পরীক্ষা জন্য ৩৬০ টাকা ফি নিয়েছে। আমাকে কোন রশিদ দেয়নি। সরকারি হাসপাতালে এসেও এত টাকা দিতে হলে গরিব মানুষ যাবে কোথায়? ” জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৌনম বড়ুয়া বলেন, ‘ আমার ডাক্তাররা প্রতিদিন সময়মত আসেন। আজকে একটু দেরি হয়েছে।”
তিনি বলেন, ফটিকছড়ি উপজেলা অনেক বড়, তাই হাসপাতালের বরাদ্ধের ওষুধ দিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট করা যায় না। এছাড়া হাসপাতালে প্রায় ৩৫% জনবল সংকট। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সংকটের সমাধান হবে। হাসপাতালে দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি সকালে সাব সেন্টার ভিজিট করতে গিয়েছিলাম। তাই আসতে দেরি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ডাক্তাররা সাধারণত সকাল আটটায় কর্মস্থলে পৌঁছানোর কথা। কেন ডাক্তাররা দেরিতে এসেছেন বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিব।
এমআর/সবা