দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শুরুতেই লঙ্কানদের চাপে ফেলেছিল বাংলাদেশ। তবে অভিজ্ঞ কুশাল মেন্ডিস ও চারিথ আসালাঙ্কার ব্যাটে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। বিশেষ করে আসালঙ্কা দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। তবে আরেক প্রান্তে কেউই তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেনি। তাতে আসালাঙ্কা সেঞ্চুরি করলেও বড় সংগ্রহ পায়নি দল। তাসকিন-তানভীরদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আড়াইশর আগেই অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। কলম্বোতে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রান সংগ্রহ করেছে শ্রীলঙ্কা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০৬ রান করেছেন আসালাঙ্কা। বাংলাদেশের হয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ইনিংসের সেরা বোলার তাসকিন। ইনজুনি মুক্ত তাসকিন দিনের শুরুতে ইনিংসের প্রথম ওভারেই মেইডেন নেন। দ্বিতীয় ওভারে দারুণ বোলিং করেছেন তানজিম সাকিবও। দুই প্রান্ত থেকেই দারুণ শুরুর পর উইকেট পেতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। নিজের দ্বিতীয় আর ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন সাকিব। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের বেশ খানিকটা বাইরে করেছিলেন সাকিব। পেস ছিল সঙ্গে অতিরিক্ত বাউন্সও। আর তাতেই টাইমিং করতে পারেননি। এডজ হয়ে বল চলে যায় উইকেটকিপার লিটন দাসের গ্লাভসে। সাজঘরে ফেরার আগে ৮ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি নিসাঙ্কা। নিসাঙ্কা ফেরার পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না আরেক ওপেনার নিসান মাদুশঙ্কা।
পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে করেছিলেন তাসকিন, সেখানে ইনসাইড এডজ হয়ে স্টাম্প ভেঙেছে মাদুশঙ্কার। তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৩ বলে ৬ রান। এক ওভার বোলিংয়ে ফিরে আবারো আঘাত হানেন তাসকিন। এবার তার শিকার কামিন্দু মেন্ডিস। অফ স্টাম্পের বাইরের গুড লেংথের বল মিড অফের ওপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন কামিন্দু। তবে টাইমিং না হওয়ায় মিড অফে মেহেদি মিরাজের হাতে ধরা পড়েন। ৪ বল খেলে ডাক খেয়েছেন তিনি। ২৯ রানে তৃতীয় উইকেট পরার পর জুটি গড়েন কুশাল মেন্ডিস ও চারিথ আসালাঙ্কা। তাদের চতুর্থ উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় লঙ্কানরা। তবে এই জুটি বিপজ্জনক হওয়ার আগেই ভেঙেছেন তানভীর ইসলাম। ওয়ানডেতে এটিই তার প্রথম উইকেট।
১৯তম ওভারের শেষ বলটি স্টাম্পের ওপর করেছিলেন তানভীর, সেখানে সোজা ব্যাটে ডিফেন্স করতে গিয়ে লাইন মিস করেন কুশাল। বল সরাসরি প্যাডে আঘাত হানলে লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। ৪৫ রান করে কুশাল ফেরায় ভাঙে ৬০ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি। চতুর্থ উইকেট জুটির মতোই বড় হতে শুরু করছিল পঞ্চম উইকেট জুটি। একাধিক বোলিং পরিবর্তনেও সাফল্যের দেখা পাচ্ছিলেন না মেহেদি হাসান মিরাজ। তাই ৩২তম ওভারে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অনিয়মিত এই অফ স্পিনার আক্রমণে এসেই জুটি ভেঙেছেন। চতুর্থ বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে করেছিলেন শান্ত। খানিকটা এগিয়ে এসে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন জানিথ লিয়ানাগে। টাইমিং না হওয়ায় সীমানার কাছে তানজিম সাকিবের হাতে ধরা পড়েন এই ব্যাটসম্যান। এটি শান্তর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় উইকেট। এরপর মিলান রত্নায়েকে ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গারা চেষ্টা করেছেন আসালাঙ্কাকে সঙ্গ দিতে। তবে দুজনেই উইকেটে থিতু হওয়ার পর ফিরেছেন। বাকিদের যাওয়া-আসার মধ্যেও এক প্রান্তে দারুণ ব্যাটিং করেছেন আসালঙ্কা। ১১৭ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন তিনি। আসালাঙ্কার বিদায়ের পর আর কেউ দাঁড়াতেই পারেনি। ফলে আড়াইশর আগেই অলআউট হয় স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট শিকার করেছেন তাসকিন। এ ছাড়া ৪৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন তানজিম সাকিব। একটি করে উইকেট পেয়েছেন শান্ত ও তানভীর। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৯৬ রান করেছে। তানজিদ হাসান তামিম ৫৮ ও নাজমুল হোসেন শান্ত ২২ রানে ব্যাট করছেন। অভিষিক্ত ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ১৩ রানে আউট হয়েছেন। এর পরে শুরু হয় বাংলাদেশের ব্যাটিং ধস। মাত্র ৯ রানেই হারিয়েছে ৭ উইকেট। জাকের আলী একপ্রান্তে আগলে রেখে লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত বড় হারেই সিরিজ শুরু বাংলাদেশের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৪৯.২ ওভারে ২৪৪ (নিসাঙ্কা ০, মাদুশঙ্কা ৬, কুসাল মেন্ডিস ৪৫, কামিন্দু মেন্ডিস ০, আসালাঙ্কা ১০৬, লিয়ানাগে ২৯, রাত্নায়াকে ২২, হাসারাঙ্গা ২২, থিকশানা ১, মালিঙ্গা ৫, আসিথা ১*; তাসকিন ১০-২-৪৭-৪, তানজিম ৯.২-০-৪৬-৩, মুস্তাফিজ ৬-১-২৪-০, মিরাজ ১০-০-৪৭-০, তানভির ১০-০-৪৪-১, শান্ত ৪-০-৩২-১)
বাংলাদেশ : ২৭.৪ ওভারে ১২৪/৮ (পারভেজ ১৩, তানজিদ ৬২, শান্ত ২৩, লিটন দাস ০, হৃদয় ১, মিরাজ ০. জাকের ১৪* তানজিম সাকিব ১, তাসকিন ০. তানভির ৫*; ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৬-২-৫-৩, কামিন্দু মেন্ডিস ৫-০-১৯-৩)


























