০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রূমকী-দেশসেরা হাইজাম্পার, তবু তালিকার বাইরে!

  • রুমেল খান
  • আপডেট সময় : ০৫:১২:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
  • 484

সিরাজগঞ্জের সদর থানার দিয়ার ধানগড়া গ্রামের ব্যবসায়ী বাবা আবদুর রহিম এবং গৃহিণী মা পারুল বেগমের পাঁচ কন্যার (কোন ছেলে নেই) চতুর্থ সন্তান উম্মে হাফসা রূমকী। রূমকী ২০১৪ সালের জাতীয় জুনিয়র এ্যাথলেটিক্সে নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে হাইজাম্পে স্বর্ণ এবং চার গুণিতক ১০০ মিটার রিলেতে জেতেন তাম্রপদক। ২০১৪ সালে সেনাবাহিনী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জেলে এবং ২০২০ সালে নৌবাহিনীতে যোগ দেন রুমকী। হাইজাম্পে নৌবাহিনীর হয়ে একাধিক জাতীয় রেকর্ডও গড়েছিলেন।

রূমকী ২০১৭ সালে জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে খেলেন। চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গিয়ে ৬টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেন। ওই বছরই জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে অংশ নেয়ার জন্য বাফুফের কাছে অনুমতি চাইলে বাফুফে রূমকীকে অনুমতি দেয়নি। তখন ফুটবল খেলাই ছেড়ে দেন তিনি! তবে ক্লাব ফুটবলে ঠিকই খেলা চালিয়ে যান। লিগে কুমিল্লা ইউনাইটেড ও জামালপুর কাচারিপাড়া একাদশের হয়ে গোলরক্ষক হিসেবে খেলেছেন।

জার্মানিতে আগামী ১৬-২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে ফিসু (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্পোর্টস ফেডারেশন) সামার ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমস।

এবারের গেমস অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৮টি ডিসিপ্লিন নিয়ে। এগুলো হলো- আরচারি, আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস, অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, ডাইভিং, ফেন্সিং, জুডো, রিদমিক জিমন্যাস্টিকস, সাঁতার, তায়কোয়ান্দো, টেনিস, টেবিল টেনিস, ভলিবল, ওয়াটারপোলো।

এই আসরে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেবেন ৯ এ্যাথলেট। সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরা হলেন : মুহতাসিন আহমেদ হৃদয়, নাজমুল হোসেন, সাদিয়া রহমান মৌ, সামান্তা হোসেন তুশির (টেবিল টেনিস), সুমাইয়া দেওয়ান, নুসরাত জাহান রুনা, সার্জিল হাসান খান জিদান ও খালিদ মুহিবুল্লাহ (অ্যাথলেটিক্স) এবং শামসুদ্দোহা সৌরভ (জুডো)।

এই আসরে যারা অংশ নেন, সাধারণত তারা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা খেলোয়াড়। অথচ এই যোগ্যতা থাকার পরও এই তালিকায় ঠাঁই হয়নি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় গেমসে দেশসেরা হাইজাম্পার উম্মে হাফসা রুমকীর!

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশন এ্যান্ড স্পোর্টস সাইন্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী রুমকী। সবুজ বাংলাকে তিনি জানান, ‘আমি অনেক পরে জেনেছি এই গেমসের কথা। অথচ ততদিনে আবেদনের সময়সীমা পার হয়ে গেছে। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার-আমাকে এই বিষয়ে কেউ কিচ্ছু জানায়নি!’

অথচ আশ্চর্যজনক হলেও সত্য-আবেদনের ডেটলাইন পার হয়ে গেলেও আয়োজকদের কাছ থেকে আমন্ত্রণের চিঠি নিয়েও অনেকে এই গেমসে অংশ নিচ্ছেন! এ প্রসঙ্গে রূমকীর ভাষ্য, ‘এই গেমসে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ফিসুর মিটিংয়ে অংশ নেন সালাউদ্দিন স্যার (শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক ড. সালাউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী)। আমি জানি না তিনি কেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে বিষয়টি অবহিত করেননি। এই গেমসে তো আমার অংশ নেওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে। আর কিছু না হোক, অন্তত আমাকে একটা ইনভাইটেশন লেটার দিতে পারতেন তারা। কিন্তু দেননি!’

রূমকীর এই অভিযোগের প্রসঙ্গে ড. মোহাম্মদ সালাউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, তিনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সাইন্সের প্রফেসর জাফিরৌল ইসলামকে এই গেমসের বিষয়ে জানিয়েছিলেন। তবে তিনি নাকি এই গেমসের বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না!

সাধারণত ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসে অংশ নেওয়া ও নাম নিবন্ধনের সব খরচ অ্যাথলেটদের বহন করতে হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে সব খরচ যোগাড় হয়নি খেলোয়াড়দের। অথচ ১৪ জুলাই জার্মানির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে সবার।
এ বিষয়ে রূমকী বলেন, ‘আমি আমন্ত্রণপত্র পেলে ঠিকই যথাসময়ে স্পন্সর জোগাড় করে ফেলতে পারতাম।’

খেলোয়াড়ী জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়েছেন রূমকী। একবার তো দুই বছর ধরে পায়ের হাড়ভাঙ্গা রোগে আক্রান্ত হয়ে পরে অনেক কষ্টে টাকা-পয়সা সংগ্রহ করে পায়ে সার্জারি করান। বেড রেস্টে ছিলেন তিন মাস। এরপর দ্বিতীয়বারও সার্জারি করান। ১৫ দিন প্লাস্টার করা পায়ে যন্ত্রণা সহ্য করেন।

তবে অপারেশন করিয়ে ভীষণ আর্থিক সঙ্কটে পড়েন। অপারেশন করাতে গিয়ে সাড়ে ৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছিল। ফেডারেশন ও নেভিকে ইচ্ছে করেই জানাইনি সমস্যার কথা। ব্যাংক থেকে লোন নেন। পরে এই টাকা শোধ করার কোন উপায় পাচ্ছিলেন না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গ্রামের জমি বিক্রি করবেন!

এত সংগ্রাম করে অভিষ্ট লক্ষ্যের পানে ছুটতে গিয়ে এবার আবারও হোঁচট খেলেন রূমকী। দেশসেরা এ্যাথলেট হয়েও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসে অংশ নিতে পারছেন না। এর জন্য দায়ভার কার?

আরকে/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

রূমকী-দেশসেরা হাইজাম্পার, তবু তালিকার বাইরে!

আপডেট সময় : ০৫:১২:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

সিরাজগঞ্জের সদর থানার দিয়ার ধানগড়া গ্রামের ব্যবসায়ী বাবা আবদুর রহিম এবং গৃহিণী মা পারুল বেগমের পাঁচ কন্যার (কোন ছেলে নেই) চতুর্থ সন্তান উম্মে হাফসা রূমকী। রূমকী ২০১৪ সালের জাতীয় জুনিয়র এ্যাথলেটিক্সে নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে হাইজাম্পে স্বর্ণ এবং চার গুণিতক ১০০ মিটার রিলেতে জেতেন তাম্রপদক। ২০১৪ সালে সেনাবাহিনী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জেলে এবং ২০২০ সালে নৌবাহিনীতে যোগ দেন রুমকী। হাইজাম্পে নৌবাহিনীর হয়ে একাধিক জাতীয় রেকর্ডও গড়েছিলেন।

রূমকী ২০১৭ সালে জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে খেলেন। চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গিয়ে ৬টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেন। ওই বছরই জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে অংশ নেয়ার জন্য বাফুফের কাছে অনুমতি চাইলে বাফুফে রূমকীকে অনুমতি দেয়নি। তখন ফুটবল খেলাই ছেড়ে দেন তিনি! তবে ক্লাব ফুটবলে ঠিকই খেলা চালিয়ে যান। লিগে কুমিল্লা ইউনাইটেড ও জামালপুর কাচারিপাড়া একাদশের হয়ে গোলরক্ষক হিসেবে খেলেছেন।

জার্মানিতে আগামী ১৬-২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে ফিসু (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্পোর্টস ফেডারেশন) সামার ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমস।

এবারের গেমস অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৮টি ডিসিপ্লিন নিয়ে। এগুলো হলো- আরচারি, আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস, অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, ডাইভিং, ফেন্সিং, জুডো, রিদমিক জিমন্যাস্টিকস, সাঁতার, তায়কোয়ান্দো, টেনিস, টেবিল টেনিস, ভলিবল, ওয়াটারপোলো।

এই আসরে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেবেন ৯ এ্যাথলেট। সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরা হলেন : মুহতাসিন আহমেদ হৃদয়, নাজমুল হোসেন, সাদিয়া রহমান মৌ, সামান্তা হোসেন তুশির (টেবিল টেনিস), সুমাইয়া দেওয়ান, নুসরাত জাহান রুনা, সার্জিল হাসান খান জিদান ও খালিদ মুহিবুল্লাহ (অ্যাথলেটিক্স) এবং শামসুদ্দোহা সৌরভ (জুডো)।

এই আসরে যারা অংশ নেন, সাধারণত তারা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা খেলোয়াড়। অথচ এই যোগ্যতা থাকার পরও এই তালিকায় ঠাঁই হয়নি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় গেমসে দেশসেরা হাইজাম্পার উম্মে হাফসা রুমকীর!

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশন এ্যান্ড স্পোর্টস সাইন্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী রুমকী। সবুজ বাংলাকে তিনি জানান, ‘আমি অনেক পরে জেনেছি এই গেমসের কথা। অথচ ততদিনে আবেদনের সময়সীমা পার হয়ে গেছে। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার-আমাকে এই বিষয়ে কেউ কিচ্ছু জানায়নি!’

অথচ আশ্চর্যজনক হলেও সত্য-আবেদনের ডেটলাইন পার হয়ে গেলেও আয়োজকদের কাছ থেকে আমন্ত্রণের চিঠি নিয়েও অনেকে এই গেমসে অংশ নিচ্ছেন! এ প্রসঙ্গে রূমকীর ভাষ্য, ‘এই গেমসে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ফিসুর মিটিংয়ে অংশ নেন সালাউদ্দিন স্যার (শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক ড. সালাউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী)। আমি জানি না তিনি কেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে বিষয়টি অবহিত করেননি। এই গেমসে তো আমার অংশ নেওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে। আর কিছু না হোক, অন্তত আমাকে একটা ইনভাইটেশন লেটার দিতে পারতেন তারা। কিন্তু দেননি!’

রূমকীর এই অভিযোগের প্রসঙ্গে ড. মোহাম্মদ সালাউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, তিনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সাইন্সের প্রফেসর জাফিরৌল ইসলামকে এই গেমসের বিষয়ে জানিয়েছিলেন। তবে তিনি নাকি এই গেমসের বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না!

সাধারণত ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসে অংশ নেওয়া ও নাম নিবন্ধনের সব খরচ অ্যাথলেটদের বহন করতে হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে সব খরচ যোগাড় হয়নি খেলোয়াড়দের। অথচ ১৪ জুলাই জার্মানির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে সবার।
এ বিষয়ে রূমকী বলেন, ‘আমি আমন্ত্রণপত্র পেলে ঠিকই যথাসময়ে স্পন্সর জোগাড় করে ফেলতে পারতাম।’

খেলোয়াড়ী জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়েছেন রূমকী। একবার তো দুই বছর ধরে পায়ের হাড়ভাঙ্গা রোগে আক্রান্ত হয়ে পরে অনেক কষ্টে টাকা-পয়সা সংগ্রহ করে পায়ে সার্জারি করান। বেড রেস্টে ছিলেন তিন মাস। এরপর দ্বিতীয়বারও সার্জারি করান। ১৫ দিন প্লাস্টার করা পায়ে যন্ত্রণা সহ্য করেন।

তবে অপারেশন করিয়ে ভীষণ আর্থিক সঙ্কটে পড়েন। অপারেশন করাতে গিয়ে সাড়ে ৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছিল। ফেডারেশন ও নেভিকে ইচ্ছে করেই জানাইনি সমস্যার কথা। ব্যাংক থেকে লোন নেন। পরে এই টাকা শোধ করার কোন উপায় পাচ্ছিলেন না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গ্রামের জমি বিক্রি করবেন!

এত সংগ্রাম করে অভিষ্ট লক্ষ্যের পানে ছুটতে গিয়ে এবার আবারও হোঁচট খেলেন রূমকী। দেশসেরা এ্যাথলেট হয়েও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসে অংশ নিতে পারছেন না। এর জন্য দায়ভার কার?

আরকে/সবা