০৮:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাইকে ঘোষণা দিয়ে চবি শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা, আহত অর্ধশতাধিক

মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট সংলগ্ন এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।

এক নারী শিক্ষার্থী রাতের বেলায় দেরি করে তার ফ্ল্যাট বাসায় প্রবেশ করলে তাকে মারধর করে বাসার দারোয়ান।

স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২৪-২৫ সেশনের এক নারী শিক্ষার্থী ২নং গেইট সংলগ্ন এলাকায় রাত ১২টায় বাসায় ঢুকতে চাইলে দারোয়ানের সাথে তার বাকবিতন্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান মেয়েটাকে মারধর করে। ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীর নাম সাকিফা খাতুন। এরপর আশেপাশে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তা দেখে এগিয়ে যায়। তখন সেই নারী শিক্ষার্থী তার এক ছেলে বন্ধুকে মুঠোফোনে ডেকে আনলে তাকেও লাঞ্চিত করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হয়ে যায়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর জন্য লোকজন জড়ো করে। এসময় ২ নং গেইট সংলগ্ন বাচামিয়ার দোকানের সামনে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে পেলে হামলা চালায় স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বহু শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের হামলায় অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠানো হয়েছে।

 

পুলিশের ২টা গাড়ি নিরাপত্তার ১ টা এবং প্রক্টরিয়াল বডির ১টা মোট ৪টা গাড়ি ভাঙচুর করেছে স্থানীয়রা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় বাসিন্দাদের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট সংলগ্ন রাস্তা থেকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এসময় স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির গাড়িবহর, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িবহর ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিন প্লাটুন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

চবি মেডিকেলের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, “বহু শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। আমরা তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। যাদের অবস্থা খুবই গুরুতর আমরা তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।”

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “আমরা রাত বারোটাতেই আমাদের একাধিক নিরাপত্তা টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় তাদেরকে এক জায়গায় এনে দিক নির্দেশনা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। সময় মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতিও ছিল না।”

এদিকে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের পরীক্ষাও ছিল।

এ অবস্থায় আজ ৩১ আগস্ট (রবিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

মাইকে ঘোষণা দিয়ে চবি শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা, আহত অর্ধশতাধিক

আপডেট সময় : ১১:১৯:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫

মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট সংলগ্ন এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।

এক নারী শিক্ষার্থী রাতের বেলায় দেরি করে তার ফ্ল্যাট বাসায় প্রবেশ করলে তাকে মারধর করে বাসার দারোয়ান।

স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২৪-২৫ সেশনের এক নারী শিক্ষার্থী ২নং গেইট সংলগ্ন এলাকায় রাত ১২টায় বাসায় ঢুকতে চাইলে দারোয়ানের সাথে তার বাকবিতন্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান মেয়েটাকে মারধর করে। ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীর নাম সাকিফা খাতুন। এরপর আশেপাশে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তা দেখে এগিয়ে যায়। তখন সেই নারী শিক্ষার্থী তার এক ছেলে বন্ধুকে মুঠোফোনে ডেকে আনলে তাকেও লাঞ্চিত করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হয়ে যায়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর জন্য লোকজন জড়ো করে। এসময় ২ নং গেইট সংলগ্ন বাচামিয়ার দোকানের সামনে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে পেলে হামলা চালায় স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বহু শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের হামলায় অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠানো হয়েছে।

 

পুলিশের ২টা গাড়ি নিরাপত্তার ১ টা এবং প্রক্টরিয়াল বডির ১টা মোট ৪টা গাড়ি ভাঙচুর করেছে স্থানীয়রা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় বাসিন্দাদের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট সংলগ্ন রাস্তা থেকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এসময় স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির গাড়িবহর, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িবহর ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিন প্লাটুন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

চবি মেডিকেলের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, “বহু শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। আমরা তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। যাদের অবস্থা খুবই গুরুতর আমরা তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।”

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “আমরা রাত বারোটাতেই আমাদের একাধিক নিরাপত্তা টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় তাদেরকে এক জায়গায় এনে দিক নির্দেশনা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। সময় মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতিও ছিল না।”

এদিকে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের পরীক্ষাও ছিল।

এ অবস্থায় আজ ৩১ আগস্ট (রবিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন।

এমআর/সবা