০৪:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ হয়ে আন্তর্জাতিক কোকেন পাচার: চক্রের রুট ও কার্যক্রম উন্মোচিত

দক্ষিণ আমেরিকা ও পূর্ব আফ্রিকা থেকে কোকেন এনে বাংলাদেশ হয়ে ভারত ও থাইল্যান্ডে পাচার করছে একটি আন্তর্জাতিক চক্র, যার নেতৃত্ব দিচ্ছে নাইজেরিয়ান নাগরিকরা। সম্প্রতি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোকেন জব্দের ঘটনায় চার বিদেশির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) চট্টগ্রাম মেট্রো।

চক্রের কার্যক্রম ও ধরন: তদন্তে জানা যায়, মূল হোতা জ্যাকব ফ্র্যাঙ্ক বা ডন ফ্র্যাঙ্কি ওরফে জন ল্যারি বর্তমানে নাইজেরিয়ায় অবস্থান করছেন। চক্রটি দক্ষিণ আমেরিকা ও পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে কোকেন সংগ্রহ করে বিমানযোগে বাংলাদেশে পাঠায়, যেখানে থেকে তা ভারত বা থাইল্যান্ডে পাচার করা হতো।

২০২৪ সালের ১৫ জুলাই, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্র্যান্ড বাহামা দ্বীপের নাগরিক স্টাটিয়া শান্টিয়া রোল (৫৩) গ্রেপ্তার হন। তিনি পেশায় সেলসওম্যান এবং কম্পিউটারের ইউপিএসের ভেতরে কোকেন বহন করছিলেন। তখন ৩ কেজি ৯ গ্রাম কোকেন উদ্ধার করা হয়।

অতীত কোকেন জব্দের ঘটনা: চক্রটি আরও আগে, ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি, ঢাকার বিমানবন্দর দিয়ে ৮ কেজি ৩ গ্রাম কোকেন পাচার করেছিল। এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার মধ্যে তিন বিদেশি এবং দুই বাংলাদেশি ছিলেন।

চক্রের সদস্য ও কার্যপদ্ধতি: চট্টগ্রামে অভিযোগপত্রে উল্লেখিত অন্য তিন বিদেশি হলেন-স্টাটিয়া শান্টিয়া রোল (৫৩, গ্র্যান্ড বাহামা দ্বীপ), আফিজ ওয়াহাব (৩৮, নাইজেরিয়া, ঢাকায় বসবাসরত ফুটবল খেলোয়াড়), ইকেচুকু নওয়াগউ (৩১, নাইজেরিয়া), তদন্তে দেখা গেছে, চক্রের সদস্যরা একে অপরকে চেনেন না, মূল হোতা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নির্দেশনা দেন। প্রতিটি সদস্য শুধু নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, স্টাটিয়া শান্টিয়া রোল ব্রাজিল থেকে প্যাকেজ গ্রহণ করে চট্টগ্রামে পৌঁছে দেন। এরপর অন্য সদস্যরা হোটেলে মালামাল গ্রহণ ও পরিবহন তদারকি করতেন।

তদন্ত ও নজির: ডিএনসি পরিদর্শক লোকাশিষ চাকমা বলেন, “বাংলাদেশে এত বিপুল পরিমাণ কোকেন ব্যবহার নেই। এটি বাংলাদেশ হয়ে ভারত বা থাইল্যান্ডে যাচ্ছিল।”

মামলার বাদী, তৎকালীন ডিএনসি পরিদর্শক জিল্লুর রহমান উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশকে কোকেন পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ চক্র দীর্ঘদিন ধরে পোশাক শিল্পের বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

সাম্প্রতিক অগ্রগতি: বর্তমানে চারজনের মধ্যে তিনজন কারাগারে আছেন। তদন্তে আংশিকভাবে চক্রটির কার্যক্রম উন্মোচিত হলেও মূল হোতার সন্ধান এখনো মেলেনি।

বাংলাদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো জানান, ভবিষ্যতে এ ধরনের আন্তর্জাতিক পাচার প্রতিরোধে নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি ও অভিযানের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশ হয়ে আন্তর্জাতিক কোকেন পাচার: চক্রের রুট ও কার্যক্রম উন্মোচিত

আপডেট সময় : ০৮:০২:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দক্ষিণ আমেরিকা ও পূর্ব আফ্রিকা থেকে কোকেন এনে বাংলাদেশ হয়ে ভারত ও থাইল্যান্ডে পাচার করছে একটি আন্তর্জাতিক চক্র, যার নেতৃত্ব দিচ্ছে নাইজেরিয়ান নাগরিকরা। সম্প্রতি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোকেন জব্দের ঘটনায় চার বিদেশির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) চট্টগ্রাম মেট্রো।

চক্রের কার্যক্রম ও ধরন: তদন্তে জানা যায়, মূল হোতা জ্যাকব ফ্র্যাঙ্ক বা ডন ফ্র্যাঙ্কি ওরফে জন ল্যারি বর্তমানে নাইজেরিয়ায় অবস্থান করছেন। চক্রটি দক্ষিণ আমেরিকা ও পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে কোকেন সংগ্রহ করে বিমানযোগে বাংলাদেশে পাঠায়, যেখানে থেকে তা ভারত বা থাইল্যান্ডে পাচার করা হতো।

২০২৪ সালের ১৫ জুলাই, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্র্যান্ড বাহামা দ্বীপের নাগরিক স্টাটিয়া শান্টিয়া রোল (৫৩) গ্রেপ্তার হন। তিনি পেশায় সেলসওম্যান এবং কম্পিউটারের ইউপিএসের ভেতরে কোকেন বহন করছিলেন। তখন ৩ কেজি ৯ গ্রাম কোকেন উদ্ধার করা হয়।

অতীত কোকেন জব্দের ঘটনা: চক্রটি আরও আগে, ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি, ঢাকার বিমানবন্দর দিয়ে ৮ কেজি ৩ গ্রাম কোকেন পাচার করেছিল। এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার মধ্যে তিন বিদেশি এবং দুই বাংলাদেশি ছিলেন।

চক্রের সদস্য ও কার্যপদ্ধতি: চট্টগ্রামে অভিযোগপত্রে উল্লেখিত অন্য তিন বিদেশি হলেন-স্টাটিয়া শান্টিয়া রোল (৫৩, গ্র্যান্ড বাহামা দ্বীপ), আফিজ ওয়াহাব (৩৮, নাইজেরিয়া, ঢাকায় বসবাসরত ফুটবল খেলোয়াড়), ইকেচুকু নওয়াগউ (৩১, নাইজেরিয়া), তদন্তে দেখা গেছে, চক্রের সদস্যরা একে অপরকে চেনেন না, মূল হোতা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নির্দেশনা দেন। প্রতিটি সদস্য শুধু নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, স্টাটিয়া শান্টিয়া রোল ব্রাজিল থেকে প্যাকেজ গ্রহণ করে চট্টগ্রামে পৌঁছে দেন। এরপর অন্য সদস্যরা হোটেলে মালামাল গ্রহণ ও পরিবহন তদারকি করতেন।

তদন্ত ও নজির: ডিএনসি পরিদর্শক লোকাশিষ চাকমা বলেন, “বাংলাদেশে এত বিপুল পরিমাণ কোকেন ব্যবহার নেই। এটি বাংলাদেশ হয়ে ভারত বা থাইল্যান্ডে যাচ্ছিল।”

মামলার বাদী, তৎকালীন ডিএনসি পরিদর্শক জিল্লুর রহমান উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশকে কোকেন পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ চক্র দীর্ঘদিন ধরে পোশাক শিল্পের বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

সাম্প্রতিক অগ্রগতি: বর্তমানে চারজনের মধ্যে তিনজন কারাগারে আছেন। তদন্তে আংশিকভাবে চক্রটির কার্যক্রম উন্মোচিত হলেও মূল হোতার সন্ধান এখনো মেলেনি।

বাংলাদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো জানান, ভবিষ্যতে এ ধরনের আন্তর্জাতিক পাচার প্রতিরোধে নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি ও অভিযানের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

এমআর/সবা