প্রায় ২৯ বছর কেটে গেছে। তবু ঢাকামেডিকেলের (ঢামেক) সাবেক ডোম রমেশ (বর্তমানে সেকেন্দার) চোখ বন্ধ করলেই ভেসে ওঠে সেই দৃশ্য—নিস্তব্ধ মর্গের টেবিলে শুয়ে আছেন বাংলা চলচ্চিত্রের নক্ষত্রতুল্য নায়ক সালমান শাহ। বাইরে হাজারো ভক্তের কান্না। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিল না, সালমান আর নেই। বিশ্বাস করতে পারছিলেন না রমেশও—আর তারই সামনে ময়নাতদন্তে ছুরি চালাতে হয় নিজের প্রিয় নায়কের শরীরে।
হত্যা মামলা নেওয়ার নির্দেশ
চিত্রনায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা গ্রহণ ও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত সোমবার (২০ অক্টোবর) ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক রমনা থানাকে এ নির্দেশ দেন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহের লাশ উদ্ধার করা হয়। তারপর লাশ নেয়া হয় ঢামেকের মর্গে। সেসময় তরুণ কর্মচারী হিসেবে সেখানে দায়িত্বে ছিলেন রমেশ। পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম পরিবর্তন করে সেকেন্দার রাখেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাতে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, “শুনেছি সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে আবারও লেখালেখি হচ্ছে। এবার নাকি পরিবার হত্যা মামলার অনুমতি পেয়েছে।”
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “সেদিন সম্ভবত সরকারি ছুটি ছিল। পুলিশ লাশ নিয়ে এলো। মর্গের সামনে হাজারো মানুষ—সবাই অঝোরে কাঁদছে। তখনকার টপ নায়ক-নায়িকাসহ শোবিজের প্রায় সবাই চলে আসে। কেউ মৃত্যুকে মানতে পারছিল না।”
তিনি আরও বলেন, “তখন মর্গ আধুনিক ছিল না। পুরনো মর্গে চিকিৎসকের নির্দেশে ময়নাতদন্ত করি আমি। আমার প্রিয় নায়কের বুকে আমারই ছুরি চালাতে হয়েছিল।”
৩৫ বছর চাকরি শেষে অবসরে যাওয়া এই ডোম বলেন, “হাজার হাজার লাশ কেটেছি। কিন্তু সালমানের লাশে হাত দেওয়ার স্মৃতি ভোলার নয়।”

মর্গে ডোমদের দায়িত্ব থাকে ফরেনসিক চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে মরদেহ প্রস্তুত করা, কাটা-ছেঁড়া, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ ও শেষে সেলাই করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা।
মামলার দীর্ঘ পথচলা
সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালে তা হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়। এ নিয়ে একাধিক সংস্থা তদন্ত করলেও বিভিন্ন দফা প্রতিবেদন আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সালমানের মা নীলা চৌধুরী বরাবরই তা নাকচ করেন।
২০১৬ সালের শেষ দিকে পিবিআই নতুন করে তদন্তভার পায় এবং ২০২০ সালে সংবাদ সম্মেলনে জানায়, সালমান আত্মহত্যা করেছেন। ২০২১ সালে ৬০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন আদালতে দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে নারাজি আবেদনও খারিজ হয়। পরে রিভিশন মামলা করা হয়।
অবশেষে ২০ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে রমনা থানায় হত্যা মামলা গ্রহণ করা হয়। মামলার আসামি করা হয়েছে সালমানের সাবেক স্ত্রী সামিরা হকসহ ১১ জনকে। অন্য আসামিরা হলেন—সামিরার মা লতিফা হক লুসি, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ডন, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, রুবী, আব্দুস ছাত্তার, সাজু ও রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ।
এমআর/সবা


























