সিদ্দিকুর রহমান,বেরোবি প্রতিনিধি
৭টি রঙের সমন্বয়ে গঠিত রামধনু আমাদের মনে আবেগ জাগাতে পারে। একটি রামধনু আমাদের অনেকের কাছে সাফল্য, আশা এবং ভাগ্যের প্রতীক। আমরা যখন প্রাণবন্ত রামধনু রঙের দিকে তাকাই, তখন আমরা সুখ, উত্তেজনা এবং বিস্ময়ের অনুভূতি অনুভব করতে পারি। আবার অন্যদিকে অমাবস্যার আলো মানে কালো রং। কালো কখনো শোকের, কখনো প্রতিবাদের, কখনো বা আভিজাত্যর। আবার কখনো মহৎ ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ব্যবহৃত হয়।
অন্ধকার বা কালোর পেছনে অনেক রহস্য থাকে। যার ভেতরে আলোর উপস্থিতি বোঝার ক্ষমতা অনেকের থাকে না। এই কালো রঙের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বার্তাও পৌঁছে দেওয়া হয় সমাজে। যদিও কৃষ্ণরঙের মাধ্যমে নেতিবাচক বহিঃপ্রকাশ হয় বেশি। তবুও এর আকর্ষণও একটুও কমে না। কালো রংয়ের বর্ণনা ও গুনাগুনের কারনে অনেকের প্রিয় রংয়ের তালিকায় সবার উপরের থাকে। আবার কেউ যখন নিজের পোষাক থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিস কালো রংয়ের ব্যবহার করে তখন সেটা এক অন্যন্যা ভাবে সমাজে প্রকাশিত পায় ।
ঠিক এমনেই একজন হলো কালো পোষাকে আবৃত মানুষ রনি। কালো পোষাক যার নিত্য সঙ্গী। পুরো নাম মো:মোর্শেদ উল আলম রনি। যিনি বর্তমানে কর্মরত আছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেল তিনি কালো রংয়ের পোষাকে প্রায় দেড় যুগ ধরে পরিধান করে আসতেছেন।
এভাবে তিনি একদিন গিনেস বুক নিজের নাম লেখাতে চান, গড়তে চান বিশ্ব রেকর্ড নিজেকে করতে চান ইতিহাসের সাক্ষী।এখন কালো রং মানেই রনি আর রনি মানেই ব্লাক ডায়মন্ড ।কালো আর তিনি যেন একে অপরের পরিপূরক। তিনি কালোকে কেবল রং হিসেবে না একটা ব্রান্ডে পরিনত করেছেন।
দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে শুধু কালো রঙের পোশাক পরে আসছেন মোর্শেদ উল আলম রনি। এমনকি তার পায়ের জুতা থেকে শুরু করে মাথার টুপি, বাইক, চশমা, হাতঘড়ি, মোবাইলের রঙ সবিই কালো। এভাবেই কালো পোশাকের ফ্যাশনে চলে তার আধুনিক আভিজাত্যের ছোঁয়া। শীত, গ্রীষ্ম সকল ঋতুতে তিনি কালো পোষাক পরিধান করেন। এমনকি গ্রীস্মের কাঠফাটা রোদের সময়ও কালো পোশাক পড়তে তার কোন অসুবিধা হয় না। যদিও শুরুর দিকে একটু অসুবিধা বা অস্বস্তি লাগতো পরে সেটা অভ্যাস হয়ে গেছে।
উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে বলা যায় হিমুর রঙ হুলুদ, রূপার রঙ নীল, তেমনি রনির রঙ কালো। নিজস্ব চিন্তাভাবনা থেকেই কালোর প্রতি দুর্বলতা জন্ম নেয় প্রায় ১৬ -১৭ বছর আগে। তখন তিনি অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। প্রত্যেক মানুষের কাছেই তার নিজস্ব একটা পছন্দের রঙ থাকে, তেমনই তার পছন্দের রঙ কালো। তাকে যারা চেনেন, এমন মানুষের কাছে কালো মানেই রনির প্রতিচ্ছবি।
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে রনি বলেন, ‘প্রথমে অবশ্য এই কালোর কালেকশন করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। দোকানের পর দোকান খুঁজে খুঁজে কালো কালারের ড্রেস সংগ্রহ করতে হতো। পরে দোকানদাররা বিষয়টা যখন জেনেছেন, তখন তাদের কাছে বিশেষ কোনো কালো পোশাক আসলে তারাই আমাকে ফোন করে করে জানাত। মজার বিষয় হলো এখন কোথাও যদি আমার পরিচিত কেউ কালো রঙের ড্রেস দেখেন, তখনই আমার কথা মনে করেন এবং তারা এসে সেটা আমাকে জানান। সময় সুযোগ করে ছুটে চলি কালোর সন্ধানে কালো বাইকটা সঙ্গে নিয়ে।
রনি বাহুল্য বর্জন করে মহাত্মা গান্ধী, আবুল মকসুদের মতো এক রঙের পোশাক পরেন। যদিও পেশাগত জীবনেও প্রথমে কালোর কারণে শুনেছেন অনেক কটুকথা। তারপরে এই কালোর কারণে পেয়েছেন অনন্য সম্মান, স্নেহ ভালোবাসা। কালোর কারণে কুৎসিত ভাষায় তার দিকে মন্তব্য ছুড়ে দিতেন অনেকেই। কেউবা বলতেন প্রেম করে ব্যর্থ হয়েছেন, তাই হয়তো এমনটা করেন। অনেক মজার ঘটনার মুখোমুখী হয়েছেন তিনি। অচেনা কোনো জায়গায় গেলেই তিনি র্যাবে চাকরি করেন বলে মনে করেন অনেকেই। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পরিচিত ব্লাক রনি নামে। যেন কালো মানেই রনি।
তবে জীবনে দুইটা বিষয় নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলেন, এক বিয়ের দিনের পোশাক নিয়ে আর কোন পেশায় যাবেন, সেই পেশায় কোনো ড্রেস কোড থাকবে কিনা সেটা নিয়ে। কিন্তু দুই পর্যায়েই তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন বেশ সফলতার সাথে। বিয়ের দিনেও তিনি কালো কালারের ড্রেস পরেই বিয়ে করেছেন। আর যেহেতু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগদান করেছেন, তাই এখানেও ড্রেস কোড নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি নেই। এভাবে দেখতে দেখতেই পার হয়ে গেছে ১৫টি বছর। এবার তার চিন্তা খুব দ্রুতই গিনেস বুকে আবেদন করার।
তিনি আরো বলেন, যে আমি এখনো জানি না গিনেস বুকে এমন বিষয়ে কোনো রেকর্ড কারো এ পর্যন্ত আছে কিনা। তবে আমার চাওয়া, যেহেতু এত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে আমি কালো পোশাক পরছি, তাই গিনেসে আমার বিষয়টা স্থান পেলে স্বার্থকতা পেতো।
প্রথমে আমার মা একটু বলতেন এত কালো কাপড় পরি কেন? এত কালো কাপড় পরতে নিষেধ করতেন। অনেক সময় লুকায়ও রাখতেন। পরবর্তী সময়ে আর কিছু বলেননি। তবে আমার নানু আমাকে যেমন ভালোবাসতেন, তেমনি মাঝে মাঝে রাগও করতেন। পরে অবশ্য বলেছিলেন তার পরিচিত কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের কথা, যারা এমন এক কালারের কাপড় পরতেন।
হারিয়ে যায় না সময়ের গহ্বরে। এ যেন ঠিক রাতের আঁধারের মতোই। কিছুক্ষণের জন্য সরে যায় আলোর উজ্জ্বলতায়, তবে হারায় না কখনোই।


























