ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে গতকাল। প্রথম দফায় দেশটির মোট ২১টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ১০২টি আসনে ভোট হয়েছে। ভোট পড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গের তিন কেন্দ্র জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে হয়েছে ভোট গ্রহণ। এবার মোট সাত দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন ঘিরে জমে উঠেছে নেতাদের পাল্টাপাল্টি কথার লড়াইও। বাতিল করা নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগের জবাবে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, বিরোধী দলগুলোও তো বন্ডের মাধ্যমে অনুদান পেয়েছেন। এগুলোকে কি চাঁদাবাজি বলা যাবে?
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের যে সমীক্ষাগুলোতে বিজেপিকে এগিয়ে রাখা হয়েছে, সেগুলোকে ভুয়া বলে উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এবং সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২০০টি আসনও পাবে না। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায় মাওবাদী প্রভাবিত বস্তার এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটে। এই ঘটনায় ভোটের দায়িত্বে থাকা এক নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়েছেন।
ভোট চলাকালীন মণিপুরের থামানপোকপি কেন্দ্রের একটি বুথে হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। তবে এখনও হতাহতের কোনো খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পশ্চিমবঙ্গেও বিক্ষিপ্ত সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ ভোটারকে ভয় দেখানো এবং বাড়ি ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। পাশাপাশি কোচবিহার মাথাভাঙায় রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে এক সিআরপিএফ জওয়ানের। গত বৃহস্পতিবার রাতে নীলেশ কুমার নীলু নামের ওই জওয়ান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
মাথাভাঙ্গার বাইশগুড়ি হাইস্কুলে তিনি কুইক রেসপন্স টিমের দায়িত্বে ছিলেন। রাতে হঠাৎ তার নাক, মুখ দিয়ে রক্তপাত শুরু হয়। এরপর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা দেন। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ৪২ বছর বয়সি ওই জওয়ানের বাড়ি বিহারের নওয়াদা জেলায় বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে জলপাইগুড়ি জেলার ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের সিপাইপাড়া এলাকায় বিজেপির একটি বুথ অফিসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে কে বা কারা রাতে বিজেপির বুথ অফিসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
দলীয় পতাকা থেকে ব্যানার সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এলাকার বুথ সভাপতি তথা বিজেপি কর্মী গৌতম রায় বলেন, রাত ৯টার পর এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা রাত পর্যন্ত সব কাজকর্ম শেষ করে বাড়ি ফিরি। তারপরই এই খবর পাই। ভোরবেলা এসে দেখি এই অবস্থা। কিন্তু আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। কাউকে দেখিনি। তাই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারছি না। পুরো ঘটনা প্রশাসনসহ এলাকার বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়কে জানানো হয়েছে।
ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে গতকাল সকাল ৭টায়, শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। এই দফায় পুরো দেশে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৬ কোটি ৬৩ লাখ। মোট ১ লাখ ৮৭ হাজার ভোট গ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ভোট নেওয়া হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। ভোটারদের সুষ্ঠুভাবে ভোটদানের জন্য প্রায় ১৮ লাখ ভোট কর্মী মোতায়েন রয়েছেন।
প্রথম দফায় দেশজুড়ে ১৬২৫ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। এর মধ্যে ১৪৯১ জন পুরুষ প্রার্থী, এবং ১৩৪ জন নারী প্রার্থী। হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ৮ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ২ জন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং একজন সাবেক রাজ্যপাল।
এদের মধ্যে অন্যতম সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি (নাগপুর কেন্দ্র), কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কিরেন রিজিজু (অরুণাচল পশ্চিম), কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল (দিব্রুগড়) এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিজেপি প্রার্থী নিশীত প্রামাণিক (কোচবিহার) অন্যতম।
অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের পুত্র কংগ্রেসের কার্তি চিদাম্বরম (শিবগঙ্গা), কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ (জোরহাট), লোকজনশক্তি পার্টির প্রধান চিরাগ পাসওয়ান (জামুই), ডিএমকে প্রার্থী কানিমোঝি করুণানিধি (থুট্টুকুড়ি), ডিএমকে প্রার্থী দয়ানিধি মারাণ (চেন্নাই সেন্ট্রাল)। ভোট শুরুর আগেই যুবসমাজ এবং নতুন ভোটারদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন রাজ্যের মোট ৪২ লোকসভার আসনের মধ্যে প্রথম দফায় ভোট হয়েছে তিন কেন্দ্রে। তিনটি কেন্দ্রেই ত্রিমুখী লড়াই (তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি ও বাম-কংগ্রেস জোট) হলেও নজর থাকবে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে। গত নির্বাচনে এই তিনটি আসনই বিজেপির দখলে ছিল, দ্বিতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রথম দফার ভোট শেষে আগামী ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায়, ৭ মে তৃতীয় দফায়, ১৩ মে চতুর্থ দফায়, ২০ মে পঞ্চম দফায়, ২৬ মে ষষ্ঠ দফায় এবং সপ্তম শেষ দফার ভোট হবে আগামী ১ জুন। এর মধ্যে প্রথম দফায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসনে ভোট নেওয়া হচ্ছে। ভোট গণনা হবে আগামী ৪ জুন।

























