পাকিস্তানের মাটিতে কদিন আগে রাওয়াপিন্ডিতে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে ফিরতি সিরিজেই দারুণ প্রতিশোধ নিলো লিটন দাসের দল। টানা দুই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মিরপুরের বোলিং সহায়ক উইকেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়েছিল স্বাগতিক দল। তবে শেখ মেহেদী ও জাকের আলীর ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। জাকের এদিন দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন, পেয়েছেন ব্যক্তিগত ফিফটির দেখাও। ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে করেন ৫৫ রান। তাতে লড়াই করার পুঁজি পায় বাংলাদেশ। নির্ধারিত ২০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রান করে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ৮ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমে পরের ম্যাচেও জিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন জাকের আলী। তিনি বলেন, ‘লাইটলি (নিব) না। আমরাও জেতার জন্য যাব। ম্যাচ জেতা জেতাই। ওরাও খুব ভালো ফাইট করেছে। টানা ৪ ম্যাচ জেতা। অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে (শেষ) ম্যাচ জেতা। (হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্য আছে কি না) হ্যাঁ হ্যাঁ (হোয়াইটওয়াশ করাই লক্ষ্য)। প্রসেস ধরে এগোতে চাচ্ছি।’
নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে ব্যাট করা নিয়ে জাকের বলেন, ‘এইজ গ্রুপ থেকেই আমি টেইলের সাথে ব্যাট করি।অনুর্ধ্ব-১৭তে একটা ১০০ও আছে। টেইলের সাথে ৭১ রানের জুটি আছে, আমার এটা অভ্যাস আছে। আমি এগুলা চিন্তা করি না। আমি চেষ্টা করি সাথে যে থাকে তাকে একটু সেইভ করে রান নেওয়ার।’ জাকের আরও বলেছেন, ‘বোলাররা খুব ভালো ক্লিয়ার মাইন্ড। প্ল্যান নিয়ে ক্লিয়ার মাইন্ড। কোচের সাথে ভালো কথা হচ্ছে। বাহির থেকে প্ল্যানগুলা করে আসছে। সেগুলা কাজে আসছে।’
নিজের ব্যাটিং নিয়ে জাকের বলেছেন, ‘আমি যেভাবে প্র্যাকটিস করি সেভাবেই (করেছি)। কিছু সেটাপ চেঞ্জ করেছি। বিপিএলের সময় ২ বছর আগেই আমাদের ব্যাটিং কোচের সাথে। হ্যাঁ ম্যাচ উইনিং নক জরুরি। আমি ম্যাচ উইনিং নকগুলাই কাউন্ট করি। ভালো খেলি যদি দল না জিতে কাউন্ট করি না। আমি আগে থেকেই জানতাম আগে (ব্যাটিংয়ে) যাব। জাস্ট মেন্টালি সেভাবে রেডি ছিলাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজেও ৫ নাম্বারে খেলেছি।’ ম্যাচ শেষে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটের সমালোচনা করেছেন ফাহিম আশরাফ। পাকিস্তানের এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘হ্যাঁ, আপনি যেমনটা বলেছেন, বিপিএল এবং এখনকার ম্যাচের পিচের মধ্যে পার্থক্য আছে। বিপিএল ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে হয়, তখন আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে। এখন গরম আবহাওয়ায় পিচ সম্পূর্ণ আলাদা। তখন পিচে এত স্পিন বা গ্রিপ থাকে না। এখনকার পিচ ওপর থেকে শক্ত কিন্তু নিচ থেকে নরম মনে হচ্ছে।’-যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশে এখন বৃষ্টির মৌসুম। গতকাল ম্যাচের আগেও বৃষ্টি হয়েছে মিরপুরে। যদিও ম্যাচের মধ্যে কোনো বৃষ্টি হয়নি। তবে পাকিস্তান দল গ্রাউন্ডসম্যানদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে যে, বৃষ্টির কারণে পিচ পুরোপুরি তৈরি হতে পারেনি। বিপিএল থেকে এখনকার উইকেট ভিন্ন বলেও জানিয়েছেন ফাহিম। তিনি বলেন, ‘গ্রাউন্ডসম্যানদের মতে, বৃষ্টির কারণে হয়তো পিচ ঠিকমতো তৈরি হয়নি। তবে বিপিএল-এর তুলনায় এখনকার পিচে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমি আগের বিপিএলে খেলেছি, এবারও খেলেছি। বিপিএলে এর চেয়ে ভালো উইকেট ছিল।’
বাংলাদেশের প্রশংসা করে পাকিস্তান সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা বলেন, ‘পাকিস্তান ম্যাচ হারল, সিরিজও হেরে গেল। বাংলাদেশকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। বাংলাদেশ আবারো পাকিস্তানকে শিখিয়ে দিলো যে কঠিন পিচে কীভাবে ব্যাটিং ও বোলিং করতে পারে। বাংলাদেশ শেষ দিকে অনেক ক্যাচ মিস করেছিল, চাপের মধ্যে এমন হতেই পারে। ফাহিম যদি আউট না হতো তাহলে পাকিস্তান জিততেও পারত। কিন্তু পাকিস্তান নিজেরাই নিজেদের জন্য ম্যাচ অনেক কঠিন করে ফেলেছে ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে। পাকিস্তান ঘরের মাঠে ৩-০ এ সিরিজ জিতে এসে ফেবারিট ছিল এই সিরিজে। কিন্তু বাংলাদেশকে কৃতিত্ব দিতেই হবে কারণ তাদের সমর্থক দিয়ে গ্যালারি ভরা ছিল, তাদের স্পিরিট ছিল অনেক বেশি। ব্যাটিংয়েও তারা অনেক ভালো করেছে। বিশেষ করে জাকের আলী দারুণ খেলেছে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স অনেক ভালো ছিল।’
পাকিস্তান দলের দুর্বলতা নিয়েও কথা বলেছেন রমিজ। বিশেষ করে টাফ কন্ডিশনে খেলার জন্য স্পেশালিস্ট বোলারের অভাবকে দায়ী করেন তিনি। বলেন, ‘পাকিস্তানের একজন স্পেশালিস্ট স্পিনারও ছিল না। আর এটা বড় একটা ঘাটতি। বাংলাদেশের রিশাদ মার খেলেও সে একজন রেগুলার বোলার— কঠিন পরিস্থিতিতে স্পেশালিস্ট বোলারদেরই দরকার। পাকিস্তানকে বলব, এই হার থেকে শিখতে হবে। এগিয়ে যেতে হলে অনেক কিছুই করতে হয়। টেকনিক নিয়ে কাজ করতে হবে। শুধু বিগ হিটিং দিয়ে কাজ হবে না। কেমন উইকেটে কেমন শট খেলতে হবে, কখন বিগ হিটিং করতে হবে, আপনার ডিফেন্স কতটা শক্তিশালী, রানিং বিটুইন দ্য উইকেটের কী অবস্থা-সবকিছুই ঠিক করতে হবে পাকিস্তানকে। অনেক কিছু শেখার বাকি আছে, অনেক কিছু বুঝার বাকি আছে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা শেখাও বাকি।’


























