আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যম মিলিয়ন ডলার আয় করার সম্ভব। আর এমন সম্ভাবনার কারণেই এর ওপর সব বয়সের মানুয়ের আগ্রহ দিন দিন বেড়ে চলছে। ঠিক তেমনি কক্সবাজারের উখিয়ায় ফ্রিল্যান্সিং, ব্লক বাটিক ও সেলাই প্রশিক্ষণে তরুণ-তরুণীদের আগ্রহ বাড়ছে। বেকাররা চাকরিতে বসে না থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। আর এই তরুণদের ওপর ভর করেই দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এগিয়ে যাচ্ছে যুবসমাজ। ঘরে বসেই এখন স্বপ্নদেখছে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার।
এমন এক মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব। তার একক উদ্যোগে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বেকার তরুণ-তরুণীদের মুক্ত করতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে স্থাপন করেছে একটি ফ্রিল্যান্সিং, ব্লক বাটিক ও সেলাই প্রশিক্ষণ সেন্টার।
তাদেরই একজন সাকিবুল হাসান। যে কিনা একটি গরিব মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। যার জন্ম থেকেই এক পা বিকল। মধ্যবিত্ত পরিবার তার উপর শারীরিক অক্ষমতা দুই-ই মিলে সাকিবের জন্য পড়ালেখা করা ছিলো অনেকটা দুঃসাধ্য। কিন্তু সে হার না মেনে ছোটকাল থেকে পড়ালেখার প্রতি প্রবল ইচ্ছে থাকায় এক পায়ে ভর করে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যায় সে এবং পরিবারের সহযোগিতায় উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করে সাকিব।
কিন্তু সাকিবের জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজিব এর একক প্রচেষ্টায় ও পরিকল্পিত পরিকল্পনায় গড়ে উঠা ফ্রি ফ্রিল্যান্সিং ও আউট সোর্সিং কোর্সে ভর্তি হয়ে। সাকিবের দারিদ্রতা বিষয়টি জেনে তার জন্য নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্যাবের ব্যবস্থা করেন ইউএনও সজীব। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহিন ইমরান প্রতিবন্ধী সাকিবকে ভালো কাজের তাগিদ দেন এবং উৎসাহিত করতে আরো একটি ল্যাপটপ দেন। ফ্রি ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে প্রথম তিন মাসে সাকিব আয় করে ৪০০ ডলার।
সাকিব বলেন, ফ্রি ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করতে পেরে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজিবের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একই সাথে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককেও ধন্যবাদ জানাই।
আউটসোসিং এর সম্ভাবনা নিয়ে কয়েকজন সফল ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, বাংলাদেশেই এখন অনেক ফ্রিল্যান্সার তৈরি হচ্ছে। নিজ নিজ বিষয়ে কাজ করছে তারা। এটা ভালো দিক। দেশের চাকুরির যে অবস্থা তাতে বেকার তরুণ-তরুণীরা ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে। আমাদের দেশে এখনো দক্ষ ফ্রিল্যান্সারের বড্ড অভাব। এজন্য দরকার ভালমানের প্রশিক্ষক। তাহলেই গড়ে উঠবে বিশ্বমানের ফ্রিল্যান্সার। এ বিষয়ে সরকারি নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। তবেই দেশে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি হবে। আর ফলে দেশের অর্থনৈতিক আয় বাড়বে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব জানান, উখিয়ার শতাধিক তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিং, ব্লক বাটিক ও সেলাই প্রশিক্ষণের এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন। পাশাপাশি অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েব পেজের মাধ্যমে অনেক উদ্যোক্তা নিজেদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্য কাজ করে যাচ্ছেন। আবার এখানে কাজ করে আয় করে সংসারও চালাচ্ছে অর্ধশতাধিক তরুণ-তরুণী।
তিনি আরও বলেন- তরুণদের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাশাপাশি ডিজিটাল স্কিলে দক্ষ করে ফ্রিল্যান্সিং করে দেশের রেমিটেন্সে অবদানের জন্য কাজ করে যাওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। এই ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখা গেলে ভবিষ্যতে বেকারত্ব মুক্ত উখিয়া উপজেলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
ব্লক বাটিক ও সেলাই প্রশিক্ষণ নেয়া এক নারী বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে তাকে একটি সেলাই মেশিন দেওয়া হয়। সেলাই কাজ করে তার এখন ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. বদরুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব দূরীকরণে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এবং ব্লক বাটিক/সেলাই প্রশিক্ষণ কোর্স প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশাল প্রাপ্তি।


























