০৭:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অর্থ সংকটে ছাইনুমের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন ঝুঁকিতে

ছাইনুমে মারমা

ছাইনুমে মারমা—পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে। পাহাড়, পাথর আর প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি গড়েছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কঠিন সংগ্রাম আর অধ্যবসায়ে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। তার স্বপ্ন—একজন আইনজীবী হয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া, বিশেষ করে পাহাড়ি নারীদের পাশে দাঁড়ানো।

সেই স্বপ্নের পথে হাঁটতে হাঁটতে নিজের চেষ্টা, মেধা আর সাহসিকতায় জয় করে ফেলেন বাংলাদেশের তিনটি প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন নিজের পছন্দের বিষয়েই।

কিন্তু এত দূর এসেও থমকে দাঁড়াতে হচ্ছে তাকে। কারণ, সামনে এখন আর বই নয়—অভাব। বই, খাতা, থাকার জায়গা, খাবার, যাতায়াত—সব মিলিয়ে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে ছাইনুমের মতো এক দরিদ্র ঘরের মেয়ের জন্য।

এক ঝলক ছাইনুমের জীবনে
ছাইনুমে মারমার বাবা থোয়াহ্লাখই মারমা একজন দিনমজুর। পাহাড়ি জমিতে অন্যের ক্ষেত খুঁড়ে সামান্য যা আয় হয়, তাই দিয়ে চলে পরিবার। তিন ভাইবোনের মধ্যে ছাইনুমে মেজো। বড় ভাই উবাথোয়াই মারমা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে পড়ছেন। ছোট বোন দারিদ্র্যের কারণে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে—মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজ করে। পরিবারটি দিনের পর দিন অর্ধাহারে, কখনো অনাহারে কাটায়।

তবুও দমে যাননি ছাইনুমে
২০১৯ সালে হারবাং শাক্যমুনি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৫ এবং এরপর ২০২৪ সালে বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজ থেকেও জিপিএ ৫ অর্জন করেন এই মেধাবী ছাত্রী।

এমন কৃতিত্ব পার্বত্য অঞ্চলের এক গহিন পাহাড়ি গ্রামের মেয়ের জন্য শুধুই একটি সনদ নয়, এটি একটি আশার আলো।

ছাইনুমের নিজের মুখেই বাস্তবতা
“রাজশাহীতে ভর্তি হতে পেরে খুব খুশি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, আমার স্বপ্ন হয়তো একদিন সত্যি হবে। কিন্তু এখন বই কেনার টাকা নেই, মেসে থাকার জন্য অগ্রিম দিতে পারিনি। জানি না আগামীকাল কী খাব। খুব কষ্ট হয়, যখন ভাবি হয়তো পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হবে। আমি শুধু চাই, কেউ একজন পাশে দাঁড়াক—আমি পড়ালেখা শেষ করে আমার এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।”

“মেয়েটা হারিয়ে গেলে দেশ হারাবে একজন সম্ভাবনাময় নাগরিক”
ছাইনুমের এলাকার ইউপি সদস্য কামাল হাসান বলেন—“ছাইনুমে মারমা ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী। একেবারে শূন্য থেকে উঠে এসেছে সে। ওর চোখে আমি পাহাড়ের ভবিষ্যৎ দেখি। এই মেয়েটা যদি আজ থেমে যায়, তাহলে শুধু সে না—আমরা সবাই হারাবো।”

ছাইনুমের ভাই উবাথোয়াই মারমার আকুতি 

সমাজের বিত্তবান মানুষেরা যদি আমার বোনোর পড়াশোনার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলেই পারে তার ভবিষ্যৎ বদলে দিতে “পরিবারের সামর্থ্য নেই ওকে সাহায্য করার। আমি নিজেও পড়াশোনা করছি, ওকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা হচ্ছে। যদি কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়, হয়তো বোনকে আবার ক্লাসে পাঠাতে পারব।” না হলে হয়তো এখানেই থেকে যাবে ওর স্বপ্ন, আমাদের স্বপ্ন। তাই আসুন আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। আপনার সহানুভূতিই তার শিক্ষা ও স্বপ্নের আলো জ্বালাতে পারে আপনি চাইলে ছাইনুমে মারমার পাশে দাঁড়াতে পারেন। খুব সামান্য সাহায্যও হতে পারে তার জীবনে নতুন দিন শুরুর সূচনা। তাকে সহযোগিতা করতে  যোগাযোগ করতে পারেন- উবাথোয়াই মারমা (বড় ভাই) মোবাইল (বিকাশ/নগদ): ০১৩০১৬৬২৩৮৯। এছাড়াও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (ছাইনুমের পরিবারের নামে) সোনালী ব্যাংক: ৪৬২০১০০৭০৫০৫০, অগ্রণী ব্যাংক: ০২০০০২৩২৪৯৫৪৪। আপনার একটি সহায়তায় ছাইনুমের মতো একটি সম্ভাবনার প্রদীপ নিভে যাওয়ার বদলে জ্বলে উঠতে পারে।
আপনার হাত বাড়ানো মানেই একটি পাহাড়ি মেয়ের স্বপ্ন বাঁচানো, একটি সমাজে পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করা।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থ সংকটে ছাইনুমের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন ঝুঁকিতে

আপডেট সময় : ০৬:৩১:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

ছাইনুমে মারমা—পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে। পাহাড়, পাথর আর প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি গড়েছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কঠিন সংগ্রাম আর অধ্যবসায়ে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। তার স্বপ্ন—একজন আইনজীবী হয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া, বিশেষ করে পাহাড়ি নারীদের পাশে দাঁড়ানো।

সেই স্বপ্নের পথে হাঁটতে হাঁটতে নিজের চেষ্টা, মেধা আর সাহসিকতায় জয় করে ফেলেন বাংলাদেশের তিনটি প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন নিজের পছন্দের বিষয়েই।

কিন্তু এত দূর এসেও থমকে দাঁড়াতে হচ্ছে তাকে। কারণ, সামনে এখন আর বই নয়—অভাব। বই, খাতা, থাকার জায়গা, খাবার, যাতায়াত—সব মিলিয়ে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে ছাইনুমের মতো এক দরিদ্র ঘরের মেয়ের জন্য।

এক ঝলক ছাইনুমের জীবনে
ছাইনুমে মারমার বাবা থোয়াহ্লাখই মারমা একজন দিনমজুর। পাহাড়ি জমিতে অন্যের ক্ষেত খুঁড়ে সামান্য যা আয় হয়, তাই দিয়ে চলে পরিবার। তিন ভাইবোনের মধ্যে ছাইনুমে মেজো। বড় ভাই উবাথোয়াই মারমা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে পড়ছেন। ছোট বোন দারিদ্র্যের কারণে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে—মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজ করে। পরিবারটি দিনের পর দিন অর্ধাহারে, কখনো অনাহারে কাটায়।

তবুও দমে যাননি ছাইনুমে
২০১৯ সালে হারবাং শাক্যমুনি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৫ এবং এরপর ২০২৪ সালে বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজ থেকেও জিপিএ ৫ অর্জন করেন এই মেধাবী ছাত্রী।

এমন কৃতিত্ব পার্বত্য অঞ্চলের এক গহিন পাহাড়ি গ্রামের মেয়ের জন্য শুধুই একটি সনদ নয়, এটি একটি আশার আলো।

ছাইনুমের নিজের মুখেই বাস্তবতা
“রাজশাহীতে ভর্তি হতে পেরে খুব খুশি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, আমার স্বপ্ন হয়তো একদিন সত্যি হবে। কিন্তু এখন বই কেনার টাকা নেই, মেসে থাকার জন্য অগ্রিম দিতে পারিনি। জানি না আগামীকাল কী খাব। খুব কষ্ট হয়, যখন ভাবি হয়তো পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হবে। আমি শুধু চাই, কেউ একজন পাশে দাঁড়াক—আমি পড়ালেখা শেষ করে আমার এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।”

“মেয়েটা হারিয়ে গেলে দেশ হারাবে একজন সম্ভাবনাময় নাগরিক”
ছাইনুমের এলাকার ইউপি সদস্য কামাল হাসান বলেন—“ছাইনুমে মারমা ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী। একেবারে শূন্য থেকে উঠে এসেছে সে। ওর চোখে আমি পাহাড়ের ভবিষ্যৎ দেখি। এই মেয়েটা যদি আজ থেমে যায়, তাহলে শুধু সে না—আমরা সবাই হারাবো।”

ছাইনুমের ভাই উবাথোয়াই মারমার আকুতি 

সমাজের বিত্তবান মানুষেরা যদি আমার বোনোর পড়াশোনার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলেই পারে তার ভবিষ্যৎ বদলে দিতে “পরিবারের সামর্থ্য নেই ওকে সাহায্য করার। আমি নিজেও পড়াশোনা করছি, ওকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা হচ্ছে। যদি কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়, হয়তো বোনকে আবার ক্লাসে পাঠাতে পারব।” না হলে হয়তো এখানেই থেকে যাবে ওর স্বপ্ন, আমাদের স্বপ্ন। তাই আসুন আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। আপনার সহানুভূতিই তার শিক্ষা ও স্বপ্নের আলো জ্বালাতে পারে আপনি চাইলে ছাইনুমে মারমার পাশে দাঁড়াতে পারেন। খুব সামান্য সাহায্যও হতে পারে তার জীবনে নতুন দিন শুরুর সূচনা। তাকে সহযোগিতা করতে  যোগাযোগ করতে পারেন- উবাথোয়াই মারমা (বড় ভাই) মোবাইল (বিকাশ/নগদ): ০১৩০১৬৬২৩৮৯। এছাড়াও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (ছাইনুমের পরিবারের নামে) সোনালী ব্যাংক: ৪৬২০১০০৭০৫০৫০, অগ্রণী ব্যাংক: ০২০০০২৩২৪৯৫৪৪। আপনার একটি সহায়তায় ছাইনুমের মতো একটি সম্ভাবনার প্রদীপ নিভে যাওয়ার বদলে জ্বলে উঠতে পারে।
আপনার হাত বাড়ানো মানেই একটি পাহাড়ি মেয়ের স্বপ্ন বাঁচানো, একটি সমাজে পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করা।

এমআর/সবা