১০:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

থানকুনি পাতার গুণাগুণ ও উপকারিতা

১. ভূমিকা
থানকুনি (বৈজ্ঞানিক নাম: Centella asiatica) হলো এক প্রাচীন ওষুধি উদ্ভিদ, যা এশিয়া মহাদেশে বিশেষত বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। হাজার বছরের বেশি সময় ধরে এটি বিভিন্ন রোগের প্রতিকার ও সাধারণ স্বাস্থ্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

২. পুষ্টিগুণ
থানকুনি পাতা প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন (বিশেষ করে ভিটামিন সি ও এ), এবং মিনারেলস (যেমন ক্যালসিয়াম ও আয়রন) সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা শরীরকে নানা ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

৩. থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা
৩.১ মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
থানকুনির মূল কার্যকরী যৌগগুলো মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে স্মৃতি উন্নত করে। এটি আলঝেইমার ও মেমোরি লসের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।

 

৩.২ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা নিরাময়
থানকুনি হজমতন্ত্রের ব্যথা ও আলসার কমাতে সক্ষম, এছাড়া অ্যাসিডিটির সমস্যায় আরাম দেয়।

৩.৩ যকৃত সুরক্ষা
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, থানকুনি লিভারের টক্সিন কমাতে ও লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৩.৪ ত্বক স্বাস্থ্য উন্নয়ন
থানকুনিতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে, যা ত্বকের বিভিন্ন রোগ যেমন ব্রণ, ফোড়া ও একজিমা নিরাময়ে কার্যকর।

৩.৫ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থানকুনির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে কারণ এটি রক্তনালীর স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

৩.৬ প্রদাহ ও বাতব্যাধি উপশম
থানকুনি পাতার সেবনে গাঁটের ব্যথা ও বাতরোগে উপশম পাওয়া যায়।

 

৪. ব্যবহারের পদ্ধতি
কাঁচা পাতা: সালাদ বা বিভিন্ন খাবারে যোগ করে খাওয়া যায়।

রস: সকালবেলায় ১-২ চামচ থানকুনি পাতার রস খাওয়া স্বাস্থ্যরক্ষায় ভালো।

শুকনো পাউডার: গরম পানি বা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করা যায়।

বাহ্যিক ব্যবহার: পেস্ট বা লোশন আকারে ত্বকে লাগানো যায়।

৫. বৈজ্ঞানিক গবেষণা সমর্থন
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে থানকুনি মস্তিষ্কের সেল উন্নয়নে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যক্রমে, এবং প্রদাহ কমাতে সক্ষম। এর ফলে এটি মেমোরি উন্নত ও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উপকারী।

৬. সতর্কতা
গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারীদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গ্রহণ করতে হবে।

অতিরিক্ত গ্রহণে মাথা ঘোরা বা অ্যালার্জির মত সমস্যা হতে পারে।

ডায়াবেটিস ও রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণকারীদের সাবধানতা দরকার।

৭. উপসংহার
থানকুনি পাতা প্রাকৃতিক ঔষধি উদ্ভিদ হিসেবে দারুণ কার্যকরী এবং এটি শরীর ও মস্তিষ্ক উভয়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। সঠিক মাত্রায় গ্রহণ ও ব্যবহারে এটি অসংখ্য রোগ নিরাময়ে সহায়ক হতে পারে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

থানকুনি পাতার গুণাগুণ ও উপকারিতা

আপডেট সময় : ১২:০৯:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫

১. ভূমিকা
থানকুনি (বৈজ্ঞানিক নাম: Centella asiatica) হলো এক প্রাচীন ওষুধি উদ্ভিদ, যা এশিয়া মহাদেশে বিশেষত বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। হাজার বছরের বেশি সময় ধরে এটি বিভিন্ন রোগের প্রতিকার ও সাধারণ স্বাস্থ্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

২. পুষ্টিগুণ
থানকুনি পাতা প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন (বিশেষ করে ভিটামিন সি ও এ), এবং মিনারেলস (যেমন ক্যালসিয়াম ও আয়রন) সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা শরীরকে নানা ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

৩. থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা
৩.১ মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
থানকুনির মূল কার্যকরী যৌগগুলো মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে স্মৃতি উন্নত করে। এটি আলঝেইমার ও মেমোরি লসের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।

 

৩.২ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা নিরাময়
থানকুনি হজমতন্ত্রের ব্যথা ও আলসার কমাতে সক্ষম, এছাড়া অ্যাসিডিটির সমস্যায় আরাম দেয়।

৩.৩ যকৃত সুরক্ষা
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, থানকুনি লিভারের টক্সিন কমাতে ও লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৩.৪ ত্বক স্বাস্থ্য উন্নয়ন
থানকুনিতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে, যা ত্বকের বিভিন্ন রোগ যেমন ব্রণ, ফোড়া ও একজিমা নিরাময়ে কার্যকর।

৩.৫ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থানকুনির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে কারণ এটি রক্তনালীর স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

৩.৬ প্রদাহ ও বাতব্যাধি উপশম
থানকুনি পাতার সেবনে গাঁটের ব্যথা ও বাতরোগে উপশম পাওয়া যায়।

 

৪. ব্যবহারের পদ্ধতি
কাঁচা পাতা: সালাদ বা বিভিন্ন খাবারে যোগ করে খাওয়া যায়।

রস: সকালবেলায় ১-২ চামচ থানকুনি পাতার রস খাওয়া স্বাস্থ্যরক্ষায় ভালো।

শুকনো পাউডার: গরম পানি বা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করা যায়।

বাহ্যিক ব্যবহার: পেস্ট বা লোশন আকারে ত্বকে লাগানো যায়।

৫. বৈজ্ঞানিক গবেষণা সমর্থন
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে থানকুনি মস্তিষ্কের সেল উন্নয়নে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যক্রমে, এবং প্রদাহ কমাতে সক্ষম। এর ফলে এটি মেমোরি উন্নত ও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উপকারী।

৬. সতর্কতা
গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারীদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গ্রহণ করতে হবে।

অতিরিক্ত গ্রহণে মাথা ঘোরা বা অ্যালার্জির মত সমস্যা হতে পারে।

ডায়াবেটিস ও রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণকারীদের সাবধানতা দরকার।

৭. উপসংহার
থানকুনি পাতা প্রাকৃতিক ঔষধি উদ্ভিদ হিসেবে দারুণ কার্যকরী এবং এটি শরীর ও মস্তিষ্ক উভয়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। সঠিক মাত্রায় গ্রহণ ও ব্যবহারে এটি অসংখ্য রোগ নিরাময়ে সহায়ক হতে পারে।

এমআর/সবা